Image description

আহসান মোহাম্মদ


বাংলাদেশের রাজনীতি যেভাবে দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, তাতে এ সম্ভাবনা অমূলক নয় যে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বিএনপি পিআর পদ্ধতির জন্য আন্দোলন করবে। মনে রাখা প্রয়োজন যে একই ধরণের ঘটনা আগে দুইবার ঘটেছিল। মাগুরা নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির পর গড়ে ওঠা কেয়ারটেকার সরকারের দাবী দলটি মানতে অস্বীকার করে এবং ২০০৪ সালে কেয়ারটেকার সিস্টেমকে ম্যানিপুলেট করার জন্য বিচারপতিরদের অবসরের বয়স বৃদ্ধি করে। অথচ, পরবর্তীতে হাসিনার আমলে তারা কেয়ারটেকার সরকারের জন্য আন্দোলনে নামে। 

প্রশ্ন হচ্ছে, কী এমন ঘটতে যাচ্ছে, যাতে বিএনপি পিআরের জন্য আন্দোলনে যাবে?

আগামী নির্বাচনে দুটি ঘটনার একটি ঘটতে যাচ্ছে:

ক) আগামী নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠনের মত আসন পাবে না। জামায়াত জোট সরকার গঠন করবে। 

ডাকসু নির্বাচনের পর এই সম্ভাবনা প্রবল হয়ে দেখা দিচ্ছে। নির্বাচনী জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে জনসমর্থনের পার্থক্য ৫-১০ শতাংশ। প্রায় প্রতিটি আসনেই বিএনপির একাধিক প্রার্থী থাকবে। জোর করে কোন প্রার্থীকে বসিয়ে দেয়া হলে তিনি বিএনপি প্রার্থীকে হারানোর জন্য কাজ করবেন, কেননা, তার প্রতিদ্বন্দী বিএনপি প্রার্থী একবার জয়ী হলে তিনি আর সহজে বিএনপি থেকে নমিনেশন পাবেন না। সেক্ষেত্রে বিএনপির ভোট কয়েকভাগ হয়ে যাবে এবং জামায়াত জিতে যাবে। এই ঘটনা অধিকাংশ আসনে ঘটতে পারে। তাছাড়া নির্বাচনের আগে সেনাবাহিনী চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের ধরপাকড় করতে পারে। এমনটি হলে অনেক কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থী দিতে পারবে না। বিএনপির চাঁদাবাজি বিরোধী যে জনমত তৈরী হচ্ছে, তা চলতে থাকলে জামায়াত জোট অকল্পনীয় বিজয় লাভ করতে পারে।

২০২৬ এর নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসতে না পারলে দল টেকানো মুশকিল হয়ে যাবে। হাসিনার শাসনামলে বিএনপি টিকে ছিল কেননা, বিএনপি নেতা-কর্মীদের সামনে আর কোন পথ ছিল না। আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার সুযোগ তাদের ছিল না। আওয়ামী লীগে এতো বেশী পদ প্রত্যাশী ছিল যে অন্য দল থেকে তারা কোন নেতা-কর্মী নিতে রাজী হয়নি। তাছাড়া আওয়ামী লীগের পলিসি ছিল বিএনপি-জামায়াতকে পুরোপুরি নির্মূল করা।

এইবার পরিস্থিতি হবে ভিন্ন। এতো দিন অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করার পরও যদি দল ক্ষমতায় না আসে, তাহলে তারা কোন আশায় দলে থাকবে? 

খ) বিএনপি কেন্দ্র দখল ও কারচুপি করে নির্বাচনে বিজয়ী হবে। সে ক্ষেত্রে দলটি ২০০ এর বেশী আসন পাবে এবং নির্বাচনের পর বেপরোয়া চাদাবাজি, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিতে লিপ্ত হবে। তবে অন্য সময়ের তুলনায় এর প্রতিক্রিয়া হবে ভিন্ন। বর্তমানে শিক্ষাঙ্গনসহ বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবিরের শক্ত অবস্থান রয়েছে। তারা খুব সহজেই বিএনপি বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলবে, যাতে সাধারণ মানুষও যোগ দিবে। জামায়াত-শিবির বর্তমানে অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বেশী শক্তিশালী এবং বেশী জনসমর্থনের অধিকারী। একাত্তর ইস্যুও আর কাজ করছে না। এই ধরণের কোন আন্দোলনে বিএনপি সরকারের পতন ঘটলে দলটির জন্য আবার ক্ষমতায় যাওয়া খুব কঠিন হয়ে যাবে।

ভারতের মত বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে পরিবারতন্ত্রের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে। রাহুল গান্ধীর তুলনায় বিএনপির কেন্দ্রীয় পরিবারতান্ত্রিক নেতা অনেক বেশী দুর্বল। ফলে, কংগ্রেসের থেকে বিএনপির ভবিষ্যত খুব বেশী ভিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা কম।

দেখা যাচ্ছে, বিএনপি আগামী নির্বাচনে জয়ী হোক আর না হোক, কয়েক বছরের মধ্যে তাকে পিআরের জন্য আন্দোলনে যেতে হচ্ছে।