Image description
 

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে জুলাই বিপ্লবকালে ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা পরিচালনা, গত বছরের ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লুটেরা ও সন্ত্রাসীদের গণহারে ভারতে পলায়ন এবং সেখানে অবস্থান করে ভারতীয় ‘ডিপ স্টেটের’ সহযোগিতায় তাদের সার্বভৌমত্ববিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও শরিকদের সব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সর্বসম্মত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের অধিকারের স্বার্থে একান্ত জরুরি হলেও, রাজনৈতিক মহলে এ ব্যাপারে এখনো এক ধরনের বিস্ময়কর নমনীয়তা ও দোদুল্যমানতা লক্ষ করা যাচ্ছে।

 

বাংলাদেশের সব চিহ্নিত ভারতের দালাল মিডিয়া ও সুশীল সমাজ ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর থেকেই আওয়ামী লীগকে বিভিন্ন উপায়ে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে দেশপ্রেমে একাট্টা হয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতীয় আধিপত্যবাদ মোকাবিলার পরিবর্তে বিপ্লবের সহযোদ্ধা রাজনৈতিক নেতারা বিপ্লব জলাঞ্জলি দিয়ে ক্ষমতার এক তীব্র এবং আগ্রাসী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হয়েছেন। দেশ এবং বিদেশে আওয়ামী লীগের অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও মনে হচ্ছে যেন কারো সংবিৎ ফিরছে না।

 

প্রফেসর ইউনূসের সাম্প্রতিক আমেরিকা সফরে নিউ ইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দরের বাইরে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী বিএনপি এবং এনসিপি নেতাদের ওপর জঙ্গি ও নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনার আমেরিকানিবাসী দুর্নীতিবাজ ছেলে জয়ের পরিকল্পনায়

সুযোগ বুঝে হামলা করেছে। জামায়াতের নেতাকর্মীরা বিপুলসংখ্যায় বিমানবন্দরের টার্মিনালে উপস্থিত থাকায় দলের নায়েবে আমির ডা. মোহাম্মদ তাহেরকে তেমন কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং আরো একজন নেতা হামলা থেকে কোনোক্রমে রক্ষা পেলেও এনসিপির আখতার হোসেন ও তাসনিম জারা হেনস্তার শিকার হয়েছেন। তাদের বিশ্রী ভাষায় গালমন্দ করেছে বাংলাদেশের সব ‘সুশীলদের’ প্রিয় দল আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা।

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের পিঠে ডিম মারা হয়েছে। তাকে এবং তাসনিম জারাকে শারীরিকভাবে আক্রমণের চেষ্টা হলে কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি ঢাল হয়ে তাদের রক্ষা করেছেন। সুযোগ থাকলে সেদিন আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বোমা ছুড়ে মারতো। আগেই উল্লেখ করেছি যে দুর্ভাগ্যজনকভাবে, মাত্র এক বছর না যেতেই জুলাই বিপ্লবের সহযোদ্ধারা আওয়ামী জুলুম বেমালুম ভুলে গিয়ে ক্ষমতার মসনদের মোহে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। এদের আত্মবিধ্বংসী রাজনীতির অবশ্যম্ভাবী পরিণাম হলো নিউ ইয়র্কে জুলাইযোদ্ধাদের এই আওয়ামী অভ্যর্থনা।

কাকতালীয়ভাবে, যেদিন মির্জা ফখরুলসহ অন্যরা নিউ ইয়র্কে আক্রান্ত হয়েছেন, সেই একই দিন কলকাতার ‘এই সময় অনলাইন’ নামের এক পত্রিকায় তার কথিত সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হলে সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। কথিত সাক্ষাৎকার বললাম এই কারণে যে, বিএনপি মহাসচিব ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে এমন কোনো সাক্ষাৎকার দেওয়ার কথা বেমালুম অস্বীকার করেছেন। বিএনপি দলীয়ভাবেও একে বানোয়াট বলেছে। পত্রিকাটি অবশ্য জোর দিয়ে দাবি করেছে যে, মির্জা ফখরুল তাদের সাংবাদিককে বিএনপির গুলশানের অফিসে ডেকে নিয়ে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।

কলকাতার পত্রিকাটি প্রমাণস্বরূপ সাংবাদিকের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের একটি ছবিও প্রকাশ করেছে। অবশ্য একটা ছবি দিয়ে কোনো কিছুই প্রমাণ হয় না। সাক্ষাৎকারের কোনো অডিও এখন পর্যন্ত কোথাও শোনা যায়নি। রহস্যজনক ব্যাপারটির দুই রকম ব্যাখ্যা হতে পারে। প্রথম ব্যাখ্যা হলো, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যকার ইতোমধ্যে সৃষ্ট তিক্ত সম্পর্ক একেবারে চরম শত্রুতায় পরিণত এবং সম্পর্কটিকে উন্নয়ন-অযোগ্য নিশ্চিত করার অসৎ উদ্দেশ্য নিয়েই ‘সম্পূর্ণ বানোয়াট’ এক সাক্ষাৎকার ছেপেছে, যাকে এআই সৃষ্ট বলে বিএনপি মহাসচিব দাবি করেছেন।

দ্বিতীয় ব্যাখ্যা অবশ্য বিভিন্নজন আমাকে জানিয়েছেন। কলকাতার সাংবাদিক ভদ্রলোক নাকি কয়েক দিন ধরে বিএনপির যেকোনো একজন শীর্ষস্থানীয় নেতার সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য ঢাকায় ঘোরাঘুরি করছিলেন। অন্তত একজন বুদ্ধিমান প্রভাবশালী নেতাও তার চেষ্টায় সাড়া দেননি বলে শুনেছি। শেষ পর্যন্ত ভারতীয় সাংবাদিক বিএনপির একজন কর্মীর মাধ্যমে নাকি মির্জা ফখরুলের সঙ্গে দেখা করতে সমর্থ হন।

সেই দেখায় হয়তো বিএনপি মহাসচিব সরল বিশ্বাসে দেশের বিদ্যমান রাজনীতি নিয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে কিছু কথাবার্তা বলেছেন। মির্জা ফখরুলের বিশ্বাস ভঙ্গ করে পত্রিকাটি সাক্ষাৎকার আকারে তার অসতর্ক মন্তব্য ছাপিয়ে দিয়েছে। আমার দুই ব্যাখ্যার মধ্যে যেটাই সত্যি হোক না কেন, বিএনপি এবং জামায়াত একে অন্যকে রাষ্ট্রক্ষমতার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী যে ভাবছে তাতে তো নিশ্চয়ই কারো মনে কোনো সন্দেহ নেই। পরস্পরের প্রতি তাদের আক্রমণাত্মক বক্তব্য প্রতিদিন সংবাদমাধ্যমে প্রচার পাচ্ছে।

মির্জা ফখরুল আদৌ ভারতীয় পত্রিকাকে কোনো সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কি না কিংবা দিলেও তিনি কী বলেছেন আমার জানা নেই। তবে দলটির অন্যান্য নেতার ভারতীয় পত্রিকায় দেওয়া একাধিক সাক্ষাৎকার আমার পড়ার সুযোগ হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে গেলেই এসব নেতা কে, কার চেয়ে বেশি ভারতবান্ধব, সেটা প্রমাণ করতে উদগ্রীব হয়ে পড়েন। জুলাই বিপ্লবপরবর্তী বাংলাদেশে বিএনপির জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার জন্য এসব নেতার ভারতসম্পর্কিত হীনম্মন্যতা যে অনেকাংশে দায়ী, সে বিষয়টি দলের নীতিনির্ধারকরা অনুধাবন করতে না পারলে আখেরে তাদেরই পস্তাতে হবে।

আমাকে ব্যক্তিগতভাবে কিংবা ভারত ও আওয়ামী লীগ প্রশ্নে আপসহীন আমার দেশ পত্রিকাকে গালমন্দ করে রাজনৈতিকভাবে তারা লাভবান হতে পারবেন না। আমাদের মতো বুড়োদের কেনা গেলেও বাংলাদেশের তরুণরা যে দেশের স্বার্থরক্ষায় ভারতকে কোনোরকম ছাড় দেবে না, সেটা জুলাই-বিপ্লবে তারা দেখিয়েছেন। বিএনপির নেতারা সম্ভবত জনতত্ত্বের এই পরিবর্তন (Demographic transformation) ধরতে পারছেন না। তারা তরুণদের আত্মপরিচয়ের এই অভিব্যক্তিকে মৌলবাদ এবং দক্ষিণপন্থার উত্থান মনে করে বোকার মতো হা-হুতাশ করছেন। একদা শহীদ জিয়ার বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের সৈনিকরা কী এক অজানা কারণে গত এক দশকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের আওয়ামী চোরাবালিতে পড়ে যত বেশি ‘চেতনা’, ‘চেতনা’ বলে হাত-পা ছুড়ছেন, ততই গভীর গাড্ডায় ডুবে যাচ্ছেন।

যাহোক, ক্ষমতালিপ্সু রাজনীতিবিদদের দেশের বৃহত্তর স্বার্থ নিয়ে ভাবার সময় না থাকলেও, মাত্র একটি দৈনিক পত্রিকাকে সম্বল করে আমরা গত বছর ২২ ডিসেম্বর পুনঃপ্রকাশের দিন থেকেই দেশি-বিদেশি চক্রান্তকে রুখে দেওয়ার আপ্রাণ প্রচেষ্টা করে চলেছি। আমার দেশ-এর অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা বলতে গেলে অসাধ্য সাধন করেছেন। দেশপ্রেমিক সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় আমার দেশ-এর সাংবাদিকরা এই সপ্তাহে অনেক শ্রম ও চেষ্টায় কলকাতায় আওয়ামী লুটেরা এবং সন্ত্রাসী ও খুনি, দেশদ্রোহী এবং পলাতক পুলিশ ও সামরিক অফিসারদের আস্তানার সন্ধান বের করতে সমর্থ হয়েছেন। সেই চাঞ্চল্যকর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের তৃতীয় কিস্তি আজ আমাদের পত্রিকার পাঠকরা পড়ছেন।

বাংলাদেশবিরোধী অপশক্তির গণহারে ভারতে আশ্রয় গ্রহণের মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বের কাছে আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশীর নগ্ন, আগ্রাসী রূপ প্রকাশ পেয়ে গেছে। এই প্রচণ্ড দাম্ভিক ও হেজেমনিক দেশটির কারণেই দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হচ্ছে না। সেই ১৯৪৭ সাল থেকে প্রায় সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ভারত সামরিক আগ্রাসন চালিয়েছে। ড. ইউনূস সঠিকভাবেই নিউ ইয়র্কে মন্তব্য করেছেন যে, ভারতের অসহযোগিতার ফলেই আঞ্চলিক ফোরাম সার্ককে (South Asian Association for Regional Cooperation) চল্লিশ বছর পার হয়ে গেলেও কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।

ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এবং শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট আমলে এদেশে নিযুক্ত হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রীংলা কদিন আগে দম্ভ সহকারে বলেছেন, বাংলাদেশের নাকি কোনো অভ্যন্তরীণ বিষয় থাকতে পারবে না। দক্ষিণ এশিয়ার সব রাষ্ট্রের সঙ্গেই দিল্লি অঘোষিত উপনিবেশের মতো আচরণ করতে চায়। শেখ হাসিনার পনেরো বছরে বাংলাদেশকে উপনিবেশের মতো করে যথেচ্ছ ব্যবহার করার পর আমাদের অসীম সাহসী তরুণ প্রজন্মের কাছে এই লজ্জাজনক পরাজয় ইসলামবিদ্বেষী হর্ষবর্ধনরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না।

ভূরাজনীতির সাম্প্রতিক পরিবর্তনে বিশ্বে ভারতের মূল্য দৃশ্যত কমতে শুরু করেছে। চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় ভারতকে ব্যবহার করার যে হিসাব পশ্চিমা বিশ্ব সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের প্রেক্ষিতে কষেছিল, সেটা এখন আর মিলছে না। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ভারতের অতিচালাকি সবার কাছে ধরা পড়ে গেছে। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি নিয়ে পশ্চিমারা আবার নকশার টেবিলে (Drawing Board) ফিরে গেছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এবারের আসরে একঘরে মোদির অনুপস্থিতি বিশেষ অর্থ বহন করে। আমেরিকার বলয় থেকে সরে দিল্লি এখন রাশিয়ার সহযোগিতায় চীনের কাছে আসার চেষ্টা করছে। তবে সেখানেও সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চীন-পাকিস্তান সামরিক, অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক হিমালয়ের মতো বিশাল বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো পাকিস্তান সম্প্রতি সৌদি আরবের সঙ্গে সামরিক চুক্তি করেছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দুই ইসলামি দেশের চুক্তিতে এশিয়ার পরাশক্তি চীনেরও সায় আছে। সুতরাং, দক্ষিণ

এশিয়ার ভূরাজনীতি পরিবর্তিত হয়ে স্থিতিশীল হতে বেশ সময় লাগবে। সেই সুযোগে আমরাও ঘর সামলানোর জন্য সময় পেয়েছি।

আমার বিবেচনায় ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর প্রথমবারের মতো আমরা বিশাল ভারতের নিয়ন্ত্রণ থেকেও মুক্তির সোপানে পা রাখতে সমর্থ হয়েছি। জুলাই বিপ্লবের পরের বাংলাদেশে প্রধান তিন রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং জেন-জিদের দল এনসিপি। এই ত্রিশক্তির মধ্যে ভারতের আগ্রাসন মোকাবিলার প্রশ্নে সব সীমাবদ্ধতা ও ভুলত্রুটি সত্ত্বেও আমি এনসিপির ওপর অধিকতর ভরসা রাখি।

গত এক বছরে ভারত প্রসঙ্গে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ১৯৭১ সালের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে ভারত-বাংলাদেশ প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। সুতরাং, তারাও ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কতটা প্রকাশ্য ভূমিকা পালন করতে পারবে, ঐতিহাসিক কারণে সেই সন্দেহ থেকেই যায়।

একমাত্র এনসিপি নেতাদের মধ্যে কোনো ঐতিহাসিক দুর্বলতা অথবা হীনম্মন্যতা কাজ করে না। তারা ভারতীয় গোয়েন্দাদের ফাঁদ এড়িয়ে রাজনীতির বন্ধুর পথে চলতে পারলে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ এদের কাছেই নিরাপদ থাকা উচিত। আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জনগণ যে দলকেই ক্ষমতাসীন করুক না কেন, বাংলাদেশের যে বিলীন হয়ে যাওয়া সার্বভৌমত্ব গত বছর জেন-জি প্রজন্ম ফিরিয়ে এনেছে, সেই সার্বভৌমত্ব ক্ষমতার অংশ হয়ে কিংবা ক্ষমতার বাইরে থেকে, তাদেরই রক্ষা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। ক্ষমতার মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে এটুকু প্রত্যাশা করব যে, তারা আওয়ামী ভোটব্যাংকের লোভে পতিত ফ্যাসিবাদ এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের সঙ্গে কোনো আপস করবে না।

বাংলাদেশের জনগণ যথেষ্ট রাজনীতিসচেতন। কোন দল, কী লক্ষ্যে কাজ করছে তার দিকে জনগণের ঠিকই নজর আছে। গত মাসে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বাংলাদেশের তরুণদের আকাঙ্ক্ষাকে অনেকাংশে প্রতিফলিত করেছে। জনমতকে উপেক্ষা করে কোনো বিদেশি শক্তির সমর্থনে ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব হলে, শেখ হাসিনারও পতন ঘটত না। দিল্লি যেভাবে শেখ হাসিনাকে সমর্থন করেছে এবং এখনো করে চলেছে, কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের কাছ থেকেই তেমন একতরফা সমর্থন পাওয়া বাংলাদেশের আর কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে সম্ভব নয় বলেই আমার ধারণা।

ভারতের সমর্থনে পনেরো বছর একচ্ছত্র ক্ষমতায় থাকতে পারলেও আজ পরিবারসহ শেখ হাসিনা এবং তার সাঙ্গোপাঙ্গোদের পালিয়ে, মর্যাদাহীন জীবন কাটাতে হচ্ছে। ভারতের পরবর্তী সরকার এই খুনি, লুটেরাদের প্রতি সহানুভূতিশীল নাও থাকতে পারে। প্রতিদিনের অনিশ্চয়তার মধ্যেই এদের এখন বেঁচে থাকা। অতএব, ভবিষ্যতের শাসককুল সময় থাকতে সাবধান হোন।

 মাহমুদুর রহমান