
ড. আনোয়ার হোসেন
দেশের বিকাশে অনেকটাই নির্ভর করে সুশিক্ষিত ও কুশলী জনবলের উপর। তাদের মধ্যেকার ছাত্র সমাজের ভূমিকা অপরিসীম। সমগ্র দুনিয়াজুড়ে শিক্ষার্থীদের সংগঠনগুলি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগকারী গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করে। ইতিহাস বলে, এই ছাত্ররাই সরকারকে দায়বদ্ধ করে তোলে এবং তরুণদের অধিকার রক্ষা করে। ছাত্রদের দাবি আদায় করতে ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস বহু পুরনো। বাংলাদেশের অভ্যুত্থানে ছাত্র আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে অধিকার আদায়ে মাঠে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। ছাত্ররা দেশ গড়ার কারিগর। ছাত্ররা তাদের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে অসীম ধৈর্য, মেহনত, ত্যাগ আর তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে, যে কোনো ন্যায্য অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হয়ে গড়ে তুলতে পারে একটা সুশৃঙ্খল সমাজ তথা সমৃদ্ধিশালী রাষ্ট্র। বিশ্বব্যাপী ছাত্র রাজনীতি ও ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে তার সমাধানকল্পে দাবি-দাওয়া কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরে। ছাত্র রাজনীতি মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের অধিকার আদায়ের রাজনীতি হলেও এর অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি দেশকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য উৎকৃষ্ট নেতা তৈরি করা।
যুগে যুগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:
চীনে, ১৬০ খ্রিস্টাব্দে ইতিহাসে প্রথম ছাত্র আন্দোলন হয়। সরকারের কয়েকটি নীতির প্রতিবাদে ইমপেরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তখন রাস্তায় নেমেছিলেন। কিছু মেধাবী ছাত্রনেতা, যারা তুলনামূলকভাবে গরিব পরিবার থেকে এসেছিলেন, তারা আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন। প্রায় ৩০ হাজার মানুষ সেই আন্দোলনে অংশ নেয় এবং তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে। তবে, সরকার অমানুষিক নিার্য্যাতনের মাধ্যমে এই আন্দোলন কঠোরভাবে দমন করে।
ফরাসি বিপ্লবের সময় ফ্রান্সের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে। ১৮৪৮ সালের বোহেমিয়ান বিদ্রোহের সময় ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ছাত্ররা আন্দোলনে অংশ নেয়। তারা তাদের নিজ নিজ দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লড়াই করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নাৎসি শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন করেন। তারা একটি গ্রুপ গঠন করেন শাসনের নির্মমতা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করেন। নাৎসি সরকার ১৯৪৩ সালে তাদের গ্রেপ্তার করে এবং প্রধান সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এই আন্দোলন শাসক গোষ্ঠীর ফাটল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনায় সাদা-কালো ভেদাভেদের প্রতিবাদে কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্ররা ধর্মঘট শুরু করেন।এই আন্দোলনটি বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে। এই আন্দোলনের ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বর্ণবৈষম্য রহিত করা হয়।এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৪ সালে নাগরিক অধিকার আইন পাস হয়, যা নাগরিক অধিকার আন্দোলনের একটি মাইলফলক ছিল
ফ্রান্সের মে ১৯৬৮ মুভমেন্ট ছিল একটি বিশাল ছাত্র আন্দোলন। এই আন্দোলন ফ্রান্সের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে।
১৯৭৬ সালে আফ্রিকার জোহানেসবার্গে শিক্ষাথীর্রা বর্ণবৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন। পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায় এবং এতে অনেক শিক্ষার্থী নিহত ও আহত হন। এই আন্দোলনে শেষ পর্য্যন্ত দেশটির বর্ণবিদ্বেষী শাসনব্যবস্থার পতন ঘটায়। নেলসন ম্যান্ডেলা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং আত্মত্যাগের ফলস্বরূপ দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবিদ্বেষী শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটে।
চীনের শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হাজার হাজার ছাত্র অধিকার আদায়ের দাবিতে রাস্তায় নামেন। ১৯৮৯ সালের ৪ জুন, সেনাবাহিনী সমবেত মানুষের ওপর গুলি চালায় এবং এতে কয়েকশো মানুষ নিহত হন। এই আন্দোলনের পর চীনে কিছুটা উদারনীতি গ্রহণ করা হয়।
ব্রিটিশ থেকে দেশভাগের পর বাংলার ছাত্রসমাজ ১৯৫১ সালে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গড়ে তোলে ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’। ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণা দেন- উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। আর তাতেই গর্জে ওঠে ছাত্রসমাজ। ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অভিযোগে মিছিলে গুলি বর্ষণ করে পুলিশ তাতেই নিহত হয় রফিক, শফিক, জব্বার, শফিউরসহ আরো কয়েকজন। শফিউর ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়। চাপের মুখে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয় পাকি সরকার।
অন্যান্য সকল আন্দোলনের মতো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও ছিল ছাত্রদের সরব ভূমিকা। মুক্তিযুদ্ধে কি করেনি ছাত্র সমাজ ?। ২ মার্চ ছাত্ররা প্রথম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে। ছাত্র নেতারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন যুদ্ধে। যুদ্ধের নয় মাস ছাত্ররা সারা বাংলায় শত্রুর মোকাবেলা করার সাহস জুগিয়েছে। অসংখ্য ছাত্র সীমানা পেরিয়ে ভারত চলে গেছে যুদ্ধের প্রশিক্ষণে। ফিরে এসে লড়াই করেছে, রক্তের বিনিময়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করেছে।
১৯৮২ সালে এরশাদ রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করেন। সেই সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম গর্জে ওঠে ছাত্রসমাজ। জেহাদ নামক এক ছাত্র পুলিশের গুলিতে নিহত হলে একত্রিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র সংগঠকরা। গড়ে ওঠে ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’। ছাত্র সংগঠনের মিলিত শক্তির সামনে সেনাবাহিনী কার্য্যকর কিছু করে উঠতে পারেনি। এবং গণঅভ্যূত্থানের মুখে ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ইতিহাসে ৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ছাত্রদের দৃঢ়তায় সফল হয়েছিল।
১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি-র প্রহসনের নির্বাচনের বিরুদ্ধেও ছাত্র-জনতা প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলেন। এক পর্য্যায়ে তৎকালীন সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার-এর দাবি মেনে নিয়ে সংসদে বিল উত্থাপন করতে বাধ্য হন। অতঃপর মাত্র কয়েকদিন আগে গঠিত জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
২০০৮ সালেও একই সরকারের বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু নিয়ে ছাত্র জনতার ব্যাপক আন্দোলনে মুখে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।
২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতি সংস্কারের জন্য গর্জে উঠেছিল ছাত্র সমাজ। রাজপথে নেমে আসে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। বাস চাপায় সহপাঠী নিহতের ঘটনার প্রতিবাদে রাষ্ট্র মেরামতের কাজে হাত দেয় তারা।
২০২৪ সালে বাংলাদেশে সব ধরনের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটার ভিত্তিতে নিয়োগের প্রচলিত ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারী আহত হওয়ার পাশাপাশি ৮০০ জনের অধিক নিহত হন। কোটা-সংস্কার আন্দোলনের বিস্ফোরোণ¥ুখ লেলিহান শিখা কোনোভাবেই দমানোর মতো ছিল না সরকারের পক্ষে। এক পর্য্যায়ে সরকারের পতন হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সংসদ বলা হয়। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেতনা ও স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার হল এই ছাত্র সংসদ। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই গৌরবময় ভূমিকা রাখে এই ছাত্র সংসদ। ৫২'র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তীতে ৬২'র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান, ৭১-এর স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণের লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম এবং পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে স্বৈরাচার ও সামরিকতন্ত্রের বিপরীতে দাঁড়িয়ে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে সাহায্য করেছে ঢাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ১৯৯০ পর্য্যন্ত ৩৬ বার নির্বাচন হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেকে রাজনীতিতে অসাধারণ অবদান রেখেছেন। কিন্তু এর দুঃখজনক পরিণতি হলো, এই ছাত্ররাজনীতি এক পর্য্যায়ে তাদের আদর্শলগ্ন রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠনে পরিণত হয়েছে। এমনকি নির্লজ্জ লেজুড়বৃত্তি এবং ওই রাজনৈতিক দলের স্বার্থ রক্ষায় সহিংসতায় জড়িয়ে গেছে। সেই সঙ্গে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্যেও ছাত্রনেতাদের নাম এসেছে।
গত ৩০ বছর ধরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়নি বললেই হলো। ডাকসুতে ক্ষমতাসীন দল বিরোধী ছাত্রসংগঠন জয়ী হতে পারে-এই আশঙ্কা থেকে ৯০ পরবর্তী সরকারগুলো এ নির্বাচন অনুষ্ঠানে অনীহ ছিল। ক্যাম্পাসে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের অর্থবহ কোনো উদ্যোগ নেয়নি সরকার-ঘনিষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলোয় ক্রমে ক্রমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সরকারি দলের ছাত্রসংগঠনের একক আধিপত্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ না থাকায় মাস্তানতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে নতুন ছাত্ররাজনীতির প্রত্যাশা বেগবান হয়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে দেশের প্রধান কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ৯ই সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে প্রার্থিতার ক্ষেত্রে নারীরা অনেকটাই পিছিয়ে। ডাকসুতে এবার ২৮টি পদে নির্বাচন হবে। প্রার্থী ৪৭১ জন। তাঁদের মধ্যে নারী প্রার্থী ৬২ জন, যা মোট প্রার্থীর মাত্র ১৩ শতাংশ। যদিও ডাকসুতে মোট ভোটারের ৪৮ শতাংশই ছাত্রী।
যদ্যপি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ছাত্রদের পাশাপাশি সম্মুখসারিতে ছিলেন ছাত্রীরা। তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলা-নির্য্যাতন ও গুলি মোকাবিলা করে ছাত্রদের সঙ্গে সমানতালে রাজপথে ছিলেন তাঁরা।
ডাকসু ভোটারদের যা প্রভাবিত করতে পারে : ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের পর হলে হলে ছাত্ররাজনীতি সাধারণ ছাত্রদের অপছন্দের বিষয় হয়ে ওঠে। বিশেষ করে কোনো কোনো ছাত্রসংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের নামে তারা গুপ্ত সংগঠন চালানোর সুবিধে নিচ্ছে। এবারের ডাকসু নির্বাচনে সেটাই সম্ভবত বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে গণরুম-গেস্টরুমের নিপীড়নের রাজনীতি থেকেও বের করে আনতে চান। যারা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন, তারা সবাই সেই প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন।
শেষাবধি ডাকসু নির্বাচন নামে-বেনামে দেশের মূলরাজনীতির ছায়ারাজনীতি হিসাবে গঠিত রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলোর আদলেই ফিরে এসেছে।
৪৮ শতাংশ নারী ভোটও এবারের ফলাফল নির্ধারণে খুবই গুরুত্ব বহন করছে। থাকবে প্রার্থীর ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি। ফলে ডানপন্থী, বামপন্থী, মধ্যপন্থী সকল ভোট বিভাজিত হয়ে ডাকসু ভোটকে এক নতুন মাত্রায় দাঁড় করিয়েছে। যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী, তারা বিচ্ছিন্ন ভোটের অনেকটাই হয়তো পাবেন।
এবারের ডাকসু নির্বাচন নিছক একটি প্রাতিষ্ঠানিক আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি দেশের ছাত্ররাজনীতির ইতিহাসে এক সম্ভাবনাময় বাঁক। ডাকসুর ইতিহাসে নারী শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ও প্রভাব সবসময় সীমিত পরিসরে থাকলেও এবার সেই চিত্র পাল্টে দেওয়ার আভাস দিচ্ছে নারী ভোটাররা।
২০২৫ সালের ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থীদের তালিকা পর্য্যালোচনায় করলে দেখা যায়, অধিকাংশ প্যানেল কোন না কোন রাজনৈতিক দল কতৃক মনোনীত। কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছেন। মূলত একটি মাত্র পূর্ণাঙ্গ স্বতন্ত্র প্যানেল রয়েছে। বাংলাদেশের অতীত অভিজ্ঞতা হল রাজনৈতিক দলের প্যানেল-কে সহযোগী সংগঠন বলা হলেও, ছাত্র নেতারা প্রকৃতপক্ষে মূল সংগঠনের নির্দেশনায় কাজ করেন। তাদের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোন এখতিয়ার থাকে না। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এ সকল প্যানেল হতে নির্বাচিত হলে অতীতের ন্যায় মেরুদন্ড বিসর্জন দিয়ে মুল দলের আজ্ঞাবহ হিসেবেই কাজ করতে বাধ্য হবেন। তবে আশা জাগাচ্ছে স্বতন্ত্র প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। কতক বিশ্লেষক মনে করেন,স্বতন্ত্র প্যানেল হতে নির্বাচিত হলেই ছাত্রনেতারা নিজেদের মেরুদন্ড অক্ষত রেখে অর্থাৎ বিবেককে স্বাধীনভাবে কাজে পারতে পারেন।
প্রচলিত বচন রয়েছে যে, আন্দোলনে যে শক্তিশালী নির্বাচনেও সে শক্তিশালী। সাম্প্রতিক সময়ে স্বতন্ত্র প্যানেল ভিপি পদপ্রার্থী উমামা ফাতেমার ১২ ঘন্টার আল্টিমেটামে হল কেন্দ্রিক ছাত্র রাজনীতি বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভাইস চ্যান্সেলর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত। ডাকসু নির্বাচনে ভিপি হিসেবে একাধিক নারী প্রার্র্থী থাকলেও, উমামা ফাতেমা নেতৃত্বাধীন একমাত্র পূর্ণাঙ্গ প্যানেল এগিয়ে রয়েছেন বলে আমার মনে হচ্ছে।
আমি সর্বদাই আশাবাদী মানুষ এবং মনে করি অন্তত সাধারন ছাত্রছাত্রীরা, বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা নিজেদের স্বার্থেই এ বিষয়টি গুরুত্বর সঙ্গে নিবেন।
আশা করা যাচ্ছে উৎসবমুখর পরিবেশে হতে যাচ্ছে বহু আকাক্সিক্ষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ(ডাকসু) নির্বাচন। নির্ভয়ে-নির্বিঘ্নে ডাকসুতে ভোট দেবেন শিক্ষার্থীরা-এমনটা প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের।
পরিশেষে আশা করি প্রা”্যরে অক্সফোর্ড খ্যাত বাংলাদেশের দ্বিতীয় মিনি পার্লামেন্ট হিসেবে পরিচিত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা গত ৩০ বছরের ছাএ রাজনীতির ইতিহাস অধ্যায়ন করে অতীতে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে লেজুড়বৃত্তি, দলদাস, যৌন নিপীড়ণকারী, নারী নির্যাতক, সাইবার বুলিং এ জড়িত, মাদক সেবী, যৌতুক লোভী, মব ভায়োলেন্স এর সঙ্গে জড়িত, বক ধার্মিক ও কোন আদু ভাইকে ভোট প্রদান হতে নিজে বিরত থাকবেন এবং অন্যদেরকেও বিরত রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করবেন। তবেই ছাত্র রাজনীতির হারানো ঐতিহ্য রক্ষার প্রথম ধাপ সম্পন্ন হবে এই ডাকসুর হাত ধরেই।
লেখক: ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন, প্রাবন্ধিক, কথা সাহিত্যিক এবং প্রেসিডেন্ট আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী সংগঠন ফ্রিডম ইন্টারন্যাশনাল এন্টি অ্যালকোহল।