
আজকের মন্তব্য প্রতিবেদন পড়ে দেশের সব প্রধান রাজনৈতিক দলই যে আমার ওপর বেজায় রেগে যাবে, সে বিষয়ে আমি মোটামুটি নিশ্চিত। তবে জীবনের এমন এক প্রান্তে পৌঁছে গেছি যখন আর রাগবিরাগের তোয়াক্কা থাকে না। আমাদের নেতারা মুখে যতই মিডিয়ার স্বাধীনতার কথা বলুন না কেন, তারা সবসময়ই দলদাস-জাতীয় জীবদের পছন্দ করেন। কোনো পত্রিকা তাদের ব্যক্তি কিংবা দলীয় স্বার্থের বাইরে কিছু প্রকাশ করলেই সেই পত্রিকাকে তারা কালবিলম্ব না করে বিরোধীদলীয় ট্যাগ দিয়ে থাকেন। প্রধান দল বিএনপি চায় ‘দিনকাল’ মার্কা পত্রিকা আর দ্বিতীয় প্রধান জামায়াতের পছন্দের শীর্ষে অবশ্যই ‘সংগ্রাম’। বিএনপির ভেতরে আবার বেশ কিছুদিন ধরে একধরনের মিশ্র রাজনৈতিক চরিত্রের রূপান্তর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এক সময়ের ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী’ আদর্শের প্রচারকরা এখন ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদী’ হয়ে সব চিহ্নিত সুশীল মিডিয়া ও ইসলামোফোবিক টকশো স্টারদের সমর্থন পাওয়ার প্রাণান্তকর চেষ্টা চালাচ্ছেন। দলটিতে একধরনের বিস্ময়কর বিবর্তন আমরা অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে লক্ষ করছি। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদাধিকারী ফজলুর রহমানের মতো ভারতীয় হেজেমনিক মতাদর্শের এজেন্ট, রাজনীতিবিদ বিএনপির রাজনৈতিক আদর্শ স্খলনের দৃশ্যমান এক ক্ষুদ্র উপসর্গ বলেই আমার ধারণা। মূল ব্যাধি সম্ভবত অদৃশ্য ক্যানসারের মতো আরো গভীরে ছড়িয়েছে। যাকগে, মূল প্রসঙ্গে আসি।
৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া সর্বশেষ ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণা এবং নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানোর প্রেক্ষিতে রাজনীতির সকল অনিশ্চয়তার অবসান ঘটার আশা করা গিয়েছিল। নির্বাচনের কমবেশি পাঁচ মাস বাকি থাকতে দলগুলোর এতদিনে যার যার কর্মসূচি নিয়ে জনগণের দ্বারে দ্বারে পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ভোটারদের মন পাওয়ার চেষ্টার পরিবর্তে রাজনৈতিক নেতারা তাদের নিত্যকার বক্তব্যে নিজেদের পরস্পরবিরোধী, বিদ্বেষমূলক এবং অনড় অবস্থানের কথাই বেশি জানান দিচ্ছেন। এতে করে দেশপ্রেমিক জনগণ ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত বোধ করলেও দিল্লিতে পলাতক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা, গোপালগঞ্জসহ আওয়ামী বলয়ের অন্ধ সমর্থক গোষ্ঠী এবং ভারতীয় প্রভুদের দল বেজায় পুলক অনুভব করছে। এরা আশা করছে, অনিশ্চয়তা শেষ পর্যন্ত একদা সহযোদ্ধাদের মধ্যে পারস্পরিক হানাহানিতে রূপ নিলে তাদের ‘আপা’র ফেরার পথ প্রশস্ত হবে।
আওয়ামী লীগকে আপাতত হিসাবের বাইরে রাখলে, বাংলাদেশের রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষিতে দেশে প্রধান রাজনৈতিক দলের সংখ্যা দুই হলেও রাজনৈতিক শক্তি কিন্তু তিনটি। আমার ব্যক্তিগত বিবেচনায় তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শক্তি, তরুণদের এনসিপি এখনো পুরোপুরি একটি দলের রূপ পরিগ্রহ করতে পারে নাই। আগামী নির্বাচনে এনসিপি একক শক্তি হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে নাকি বিএনপি অথবা জামায়াতের সঙ্গী হবে কিংবা বিভক্ত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন পথের পথিক হবে, সেটা আমাদের অনুমানের বাইরেই থাকুক। নির্বাচন নিয়ে তিন রাজনৈতিক শক্তির কৌশল এবং বয়ানের পার্থক্য খানিকটা বোঝার চেষ্টা করা যাক। বর্তমান বন্দোবস্তে এনসিপির নির্বাচনে অনাগ্রহ অনেকটাই স্পষ্ট। তাদের প্রধান দাবি দুটি। প্রথমত এনসিপি অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন দেখতে চায়। দ্বিতীয়ত তারা ১৯৭২ সালের সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য প্রথমে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি তুলেছে। এছাড়া তারা যুক্তরাজ্যের সংসদীয় নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তে জার্মানির ধাঁচে পিআর পদ্ধতির পক্ষে বলেই মনে হচ্ছে। অপরদিকে, জামায়াতে ইসলামীর ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে আপত্তি না থাকলেও দলের শীর্ষ নেতারা পিআর পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না বলে বিভিন্ন সভায় জোরালো বক্তব্য দিচ্ছেন। এই বক্তব্যে দলটি শেষ পর্যন্ত অনড় থাকবে কি না এ নিয়ে অবশ্য সন্দেহ রয়েছে।
সম্প্রতি একটি জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৭১ শতাংশ মানুষও নাকি পিআরের পক্ষে। আমার অবশ্য সন্দেহ আছে, জরিপে অংশ নেওয়া কতজন মানুষ পিআর পদ্ধতিটা পুরোপুরি জানেন অথবা বুঝতে পারছেন। খানিক পরে আমি অতি সংক্ষেপে পদ্ধতিটি বোঝানোর চেষ্টা করব। সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি আসন্ন নির্বাচনে বিজয় সুনিশ্চিত ধরে নিয়ে বর্তমান সংবিধানের অধীনে আগের নিয়মেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচনে যেতে চায়। হাতের নাগালের রাষ্ট্রক্ষমতার জন্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করাটাই তাদের জন্য কষ্টকর বলে মনে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই, বিএনপি পিআর কিংবা গণপরিষদ, কোনোটাই চায় না। তবে, নির্বাচনে জেতার জন্য দলটি সাম্প্রতিককালে যেসব বয়ান দিচ্ছে সেটা চমকিত হওয়ার মতো।
হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর গত এক বছরে পদ্মা নদী দিয়ে অনেক পানি গড়িয়ে যাওয়ার পর এত বিলম্বে গণপরিষদের দাবি আমার কাছে আর বাস্তবসম্মত বলে মনে হচ্ছে না। নানা কারণে জুলাইযোদ্ধাদের আর আগের অবস্থান নেই যে তারা কোনো দাবি মানতে সরকারকে এখন বাধ্য করতে পারে। বিচিত্র সব কর্মকাণ্ডে বিতর্কিত করতে নিজেদের দায় এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ বিপ্লবী তরুণরা রাখে নাই। রূঢ় বাস্তবতা হলো, এদের ডাকে জনগণ আর রাস্তায় নামবে না। আমি সর্বদা তরুণদের অপরিসীম সাহস এবং নিখাদ দেশপ্রেমের প্রশংসা করে এলেও, তাদের আত্মসংযম এবং বিচক্ষণতার অভাবকে উপেক্ষা করতে পারি না। রাজনীতি করতে হলে প্রশংসা এবং তিরস্কার, দুটোকেই স্বীকার করার মানসিকতা থাকতে হবে। তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য ড. ইউনূস সরকারের ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের মতোই দ্রুত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া দরকার। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কোনো দল আগামী ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতায় এলে তাদের মধ্যে দিনবদলের সনদ বাস্তবায়নের কোনো আগ্রহ নাও থাকতে পারে। সুতরাং, আমি মনে করি এনসিপির প্রধান দুই দাবির মধ্যে একটি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত যৌক্তিক।
এবার পিআর নিয়ে আলোচনা। আগে জার্মানির পদ্ধতিটা খানিকটা বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করি। সেখানে ভোটাররা দুটো করে ভোট দেন। একটি ভোট ২৯৯ জন স্থানীয় প্রার্থী নির্বাচনের জন্য, যারা যুক্তরাজ্যের মতো সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। দ্বিতীয় ভোটটি দলের জন্য। এই ভোটে পিআর পদ্ধতিতে অতিরিক্ত ২৯৯ জন নির্বাচিত হবেন বিভিন্ন দলের আগে থেকে নির্ধারিত প্রার্থীর তালিকা অনুসারে। ধরুন, একটি দলের ১০ জন সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন (স্থানীয় ২৯৯ জনের মধ্যে), কিন্তু পিআর পদ্ধতিতে বেশি হারে ভোট পাওয়ায় সেই দলের ১৫টি আসন পাওয়া উচিত, সেক্ষেত্রে দলটি তাদের পূর্বনির্ধারিত তালিকা থেকে ক্রমানুসারে অতিরিক্ত ৫টি আসন পাবে (পিআর ২৯৯ আসন থেকে)। অনেক সময় দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা সরাসরি ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পাশাপাশি পিআর তালিকাতেও অন্তর্ভুক্ত থাকেন যাতে স্থানীয় নির্বাচনে হেরে গেলেও জার্মান সংসদ ‘বুন্দেসতাগে’ তাদের আসন একপ্রকার সংরক্ষিত থাকে। ব্যাপারটি নিঃসন্দেহে বেশ জটিল। এদিকে, কোনো দল যদি ৫ শতাংশের কম ভোট পায় তাহলে সেই দল কোনো অতিরিক্ত আসন পাবে না। বাংলাদেশের বাস্তবতায় কয়টি দল ৫ শতাংশের বেশি ভোট পেতে পারে সেটা বিবেচনার ভার আমি পাঠকদের ওপর ছেড়ে দিলাম। আমি মনে করি, এত অল্প সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠেয় আগামী নির্বাচনে এমন একটি জটিল পদ্ধতি নিয়ে অভিনব কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করাই শ্রেয়। যদি সব দল একমত হয় তাহলে নতুন সংবিধান প্রণয়ন অথবা সংবিধান সংশোধন সাপেক্ষে পরবর্তী নির্বাচনে উপরোক্ত মিশ্র পিআর পদ্ধতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। সব মিলিয়ে আমার কাছে মিশ্র পিআর পদ্ধতি জটিল হলেও অধিকতর গণতান্ত্রিক নির্বাচনি ব্যবস্থা বলেই মনে হচ্ছে। আমার প্রত্যাশা হলো, কোনো দলই যেন পিআর ব্যবস্থা মেনে নেওয়ার দাবিতে নির্বাচন বর্জনের মতো হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে গণতান্ত্রিক উত্তরণকে বাধাগ্রস্ত না করে। আমাদের উপলব্ধি করা উচিত যে, ভারতীয় ডিপ স্টেটের লক্ষ্য হলো প্রথমত ড. ইউনূস সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা এবং দ্বিতীয় লক্ষ্য, বাংলাদেশে এমন একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, যার সুযোগে ঢাকায় অতীতের মতো একটি ভারত-সমর্থক সরকার ক্ষমতাসীন হতে পারে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে আমরা একটি অবাধ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে আমাদের হেজেমনিক প্রতিবেশীর উপরোক্ত অপচেষ্টাকে সম্মিলিতভাবে রুখে দিতে পারি। দেশের সব রাজনৈতিক দল এই গুরুদায়িত্ব উপলব্ধি করবে বলেই আমার প্রত্যাশা। অতীতে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক দলের ভুল সিদ্ধান্ত এবং ব্যক্তিবিশেষের উচ্চাকাঙ্ক্ষার ফলে আমাদের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে একাধিকবার আঘাত এসেছে।
জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী বাংলাদেশে বিএনপির মধ্যে ‘একাত্তরের চেতনা’র বিস্ময়কর হঠাৎ বিস্ফোরণ নিয়ে আলোচনা করে আমার আজকের লেখা শেষ করব। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা তার পনেরো বছরের দানবীয় শাসনকালে এই ‘চেতনা’ ব্যবহার করেই তাবৎ গুম-খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, জুডিশিয়াল কিলিং এবং আয়নাঘরের জুলুমকে দেশে এবং বিদেশে বৈধতা দিয়েছেন। ২০১৪, ২০১৮, এবং ২০২৪ সালের ভুয়া নির্বাচনের পর তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি ও মৌলবাদ ঠেকানোর গল্প ফেরি করেই তিনি বিশ্বকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লড়াকু ছাত্রছাত্রীদের সেই অবিস্মরণীয় স্লোগান ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’, হাসিনা ও ভারতের দালালদের বহু ব্যবহারে জীর্ণ ‘একাত্তরের চেতনা’র ব্যবসাকে কবর দিয়েছিল। কোন বিশেষ রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিএনপি সেই কবরস্থ চেতনাকে পুনর্জীবন দান করতে চাচ্ছে তা আমার জানা নাই। আগামী সংসদে সম্ভাব্য বিরোধী দল জামায়াতকে মোকাবিলা করার জন্য বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তাদের আওয়ামী বাঙালিত্বের বয়ানকে কেন নিজেদের করে নিতে হচ্ছে সেটাও দলটির নীতিনির্ধারকরাই ভালো জানেন। ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি’ কবে থেকে এবং কীভাবে শহীদ জিয়া প্রতিষ্ঠিত বিএনপির স্লোগান হলো সেটাও এক রহস্য। কদিন আগে তারেক রহমানের বাংলাদেশকে ‘মৌলবাদের অভয়ারণ্যে’ পরিণত করতে না দেওয়ার দৃঢ় ঘোষণা শুনে প্রায় আকাশ থেকে পড়েছি।
নির্বাসন থেকে ফিরে গত প্রায় এক বছরে দেশের বিভিন্ন শহরে ঘুরে বেড়িয়েছি, নানা অনুষ্ঠানে অনেকগুলো কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণদের সঙ্গে মেশার সুযোগ হয়েছে। আমার দেশ অফিসেও প্রতিদিন কয়েক ডজন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আমার সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে আলাপ করতে আসেন। আমি তো কোথাও মৌলবাদের কোনো উত্থান খুঁজে পেলাম না। বিদেশি দূতাবাসের কূটনীতিকরাও আমার সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনায় স্বীকার করেছেন যে, আমাদের দেশে কোনো ইসলামি জঙ্গিবাদ নাই। আলাপচারিতায় আমরা একমত হয়েছি যে, সমাজের অতি ক্ষুদ্র অংশের মধ্যে চরমপন্থি চিন্তা থাকলেও এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু ঘটে নাই। পৃথিবীর সব দেশেই কম আর বেশি এরকম চরমপন্থার অস্তিত্ব রয়েছে। বিদেশি কূটনীতিকরা এটাও স্বীকার করেছেন যে, কেবল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই শেখ হাসিনা ইসলামি জঙ্গিবাদের বয়ান অনবরত ব্যবহার করেছেন। আমি বুঝতে পারছি না, প্রায় সতেরো বছর ধরে নির্বাসিত তারেক রহমান বাংলাদেশে মৌলবাদের কাল্পনিক অভয়ারণ্যের ভীতি ছড়ানোকে কেন দলের নতুন রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে গ্রহণ করলেন? তিনি বাংলাদেশের প্রকৃত পরিস্থিতি এত দূর প্রবাসে থেকে কোন পদ্ধতিতে জানতে পেরেছেন? কোন পরামর্শকরা তাকে এ-জাতীয় আত্মবিধ্বংসী আওয়ামী বয়ান শেখালেন? বিএনপি এ বিষয়ে আমাদের অজান্তে কি কোনো জরিপ চালিয়েছে? এ ধরনের প্রচারণার মাধ্যমে বিএনপি কেমন করে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে? একমাত্র ভারতীয় গোদি মিডিয়া এবং দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট ছাড়া বিশ্বে কোথাও বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থানের গল্প খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমনও হতে পারে যে, বিএনপির নীতিনির্ধারকরা হয়তো ধরে নিয়েছেন, নির্বাচনে যেহেতু তারা জিতবেনই, অতএব ভারতকে খুশি রাখাই ক্ষমতা ধরে রাখার মোক্ষম উপায়!
যে ভারত সারা বিশ্বে ইসরাইল ব্যতীত সবচেয়ে কট্টর মৌলবাদী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত, সেই রাষ্ট্রের নেতাদের কাছ থেকে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িকতা এবং পরমতসহিষ্ণুতা সম্পর্কে জ্ঞান নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নাই। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে চরম ইসলামবিদ্বেষী ভারতের বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারের বয়ান মিলে যাচ্ছে। একজন প্রবীণ নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি যে, দেশে ফিরে বাস্তব অবস্থা নিজে না জানা পর্যন্ত তারেক রহমানের এ-জাতীয় বক্তব্য প্রদান নিজ স্বার্থেই পরিহার করা উচিত। যারা তাকে এসব কথা বলতে উৎসাহিত করছেন, তারা তার নিজের কিংবা তার দলের বন্ধু হতে পারেন না। মুখের কথা একবার বেরিয়ে গেলে কিন্তু আর ফিরিয়ে নেওয়া যায় না। যাই হোক, রাজনৈতিক দলসমূহের আদর্শভেদে ভিন্ন কৌশল থাকাটাই স্বাভাবিক। ২০০১ সালের পর বাংলাদেশের জনগণ দেশি কিংবা বিদেশি বিশেষ মহলের হস্তক্ষেপ ব্যতিরেকে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের সুযোগ প্রকৃতপক্ষে পায় নাই। ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়েও বহু প্রশ্ন রয়েছে। আমরা আশা করি, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধের প্রত্যাশিত নির্বাচনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ আবার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় ফেরার সুযোগ পাবে। ড. ইউনূস তার দায়িত্ব সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন সেই আশা সকল দেশপ্রেমিক নাগরিকের।