
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে যখনই আন্দোলন, গণতন্ত্র ও আত্মত্যাগের কথা উঠে আসে, তখন শহিদুল ইসলাম বাবুলের নামটি অবধারিতভাবে উচ্চারিত হয়। ফরিদপুরের এই জননন্দিত নেতা কেবল একজন রাজনৈতিক কর্মী নন—তিনি একজন দৃষ্টান্তস্বরূপ সংগ্রামী চরিত্র, যিনি নিজের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত গণমানুষের অধিকারের পক্ষে উৎসর্গ করেছেন।
ছাত্ররাজনীতি থেকে রাজপথের নেতৃত্বে
স্বাধীনতা-পরবর্তী অস্থির সময়ে শৈশব ও কৈশোর পার করা বাবুলের রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটে ছাত্রদলের মাধ্যমে। ১৯৮২ সালে এরশাদের সামরিক শাসন শুরু হলে তিনি বুঝতে পারেন, জনগণের শক্তিই পারে দেশের প্রকৃত মুক্তি নিশ্চিত করতে। সেই সময় থেকেই তিনি রাজপথে সক্রিয়। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ১/১১ সেনাশাসিত সময় ও সাম্প্রতিক নির্বাচনী অনিয়মবিরোধী প্রতিরোধ—প্রতিটি পর্বেই তিনি ছিলেন অগ্রভাগে।
কৃষক-শ্রমিকের অকৃত্রিম প্রতিনিধি
শুধু দলের পলিসি নয়, বাবুল ভাই বরাবরই নজর রেখেছেন তৃণমূলের বাস্তব চাহিদার দিকে। ফরিদপুরের গ্রামের পর গ্রামে ধানের ন্যায্যমূল্য, সারের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, সেচ সুবিধা নিশ্চিত করার দাবিতে তিনি বছরের পর বছর মাঠে ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে হাজারো কৃষক ও শ্রমিক রাজপথে নেমেছে।
২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের বিরুদ্ধে আন্দোলনে, ফরিদপুরে তিনি পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হন এবং গ্রেফতার হয়ে কারাগারে কাটান বহুদিন। অথচ, কারাগারের অন্ধকারেও তাঁর কণ্ঠে ছিল সাহসের দীপ্তি—সংগঠনের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, সহযোদ্ধাদের উদ্দীপ্ত করেছেন।
সাহস, চিন্তা ও চরিত্রের বিরল সমন্বয়
বাবুল ভাইয়ের অসাধারণ দিক হলো তাঁর চটপটে বুদ্ধিমত্তা ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা। কঠিন পরিস্থিতিতেও ভেঙে পড়েন না, দুঃখ পান না, হতাশ হন না। তিনি সৎ, পরিশ্রমী, এবং আত্মনিয়ন্ত্রিত। অতিকথন, বিলাসিতা, অলসতা বা বাহুল্য তার চরিত্রে নেই।
"বাবুল ভাইয়ের কথায় এমন এক মহাজাগতিক সৌন্দর্য আছে—যা মানুষকে আকর্ষণ করে। তিনি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার এক প্রকৃতি-প্রদত্ত শক্তি। তিনি অহঙ্কার করেন না, শত্রুতা করেন না—বরং ভালোবাসা দিয়ে জয় করেন।"
তিনি শান্ত, কিন্তু দুরন্তও
তিনি একজন নেতার মতো স্থিতধী এবং একজন যোদ্ধার মতো দুর্বার। শান্ত চেহারার আড়ালে তাঁর অন্তরে আছে সংগ্রামের আগুন। নেতৃত্বের মাঠে তিনি স্থির, কিন্তু দরকারে রণক্ষেত্রে দুর্বার গতিতে ছুটে চলেন।
তাঁর চরিত্রে সততা, সহনশীলতা, কৃতজ্ঞতা, আর ধৈর্যশীলতা যেমন আছে, তেমনি আছে ভবিষ্যতের প্রতি দূরদৃষ্টি ও পরিকল্পনার বুৎপত্তি।
"তিনি পাথরে নাম খোদাই করার চেয়ে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিতে চান। তিনি সত্য দিয়ে পথ দেখান, উদাহরণ দিয়ে নেতৃত্ব দেন।"
কারাগারে থেকেও অদম্য চেতনার আলোকবর্তিকা
বর্তমানে তিনি একাধিক মামলায় অন্যায়ভাবে কারাবন্দি। তবুও, রাজপথের প্রতিটি স্লোগানে, কৃষকের মুখে, তরুণের আশায় এখনো উচ্চারিত হয় তাঁর নাম। তিনি যেন অদৃশ্য নেতৃত্বে অনুপ্রাণিত করছেন একটি গোটা প্রজন্মকে।
"যুবসমাজই পারে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে।"
এই বার্তা নিয়ে তিনি শত শত তরুণকে রাজনীতিতে উদ্বুদ্ধ করেছেন—সংগঠিত করেছেন গণআন্দোলনের জন্য।
নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি বাবুল ভাই
শহিদুল ইসলাম বাবুল আজ শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা নন, তিনি এক আদর্শের নাম।
তিনি আমাদের শেখান—রাজনীতি মানে সেবা, ত্যাগ ও শুদ্ধতার পথে চলা।
তিনি ক্ষমতা নয়, মানুষের আস্থা অর্জনে বিশ্বাসী।
তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলেও কাউকে শত্রু ভাবেন না।
তিনি নেতৃত্ব দেন হৃদয়ের, সাহসের, আদর্শের।
এই যুগে যখন আদর্শবাদ সংকটে, তখন বাবুল ভাইয়ের মতো নেতাই প্রমাণ করেন—
এই যুগে যখন আদর্শবাদ সংকটে, তখন বাবুল ভাইয়ের মতো নেতাই প্রমাণ করেন—
সত্যিকারের নেতাদের শক্তি বন্দি রাখা যায় না।
আমরা তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করি এবং আশা করি, তাঁর আদর্শ আগামী দিনের রাজনীতির পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে।
এই প্রতিবেদনটি উৎসর্গ করা হলো কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি জনতার পক্ষ থেকে তাঁদের প্রিয় নেতাকে।
লেখা: রাজীব কুমার ঘোষ