Image description

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ-উর রহমান বলেছেন, কবির সুমনের একটা গান আছে।ওই গানের একটা লাইন এরকম, "টাকাটাই শেষ কথা বাকি সব বাতুলতা"। টাকা কথা রাখে, সারা পৃথিবীতেই টাকা কথা রাখে। কিন্তু আমাদের সমাজে একটু বেশি রাখে।

 

সিনিয়র সাংবাদিক শফিক রেহমানের বসুন্ধরাকাণ্ড প্রসঙ্গে আজ শুক্রবার নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, পৃথিবীতে সবকিছুই টাকা চাইলে কিনতে পারে না। সারা পৃথিবীতে বাস্তবে সে অবস্থা বিরাজ করে। কিন্তু বাংলাদেশে শফিক রেহমান ৯০ বছর বয়সে বিক্রি হয়ে যান। আমি তার ওই বক্তৃতায় শুনলাম তিনি বলছেন, এই বয়সেও এসে তার অনেক প্রয়োজন। তার কোন ডিল, হিসেব-নিকাশ, বেনিফিট আছে।

ডা. জাহেদ আরো বলেন, একটা পার্টি যেটা বাংলাদেশে খুবই সততা এবং নিয়মতান্ত্রিকতার কথা বলে এবং যে দলটার নামের সাথে ইসলামী শব্দটা আছে তারাও বসুন্ধরার সাথে কোলাবোরেট করে। আমাদের বাংলাদেশকে আসলেই পাল্টাতে হবে খুব অদূর ভবিষ্যতে। যাতে বাংলাদেশে টাকা যেন সব ক্ষেত্রে কথা রাখতে না পারে। এই বাংলাদেশ আমরা তৈরি করতে চাই।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অপ্রত্যাশিতভাবে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার সম্পাদক শফিক রেহমান। এ সময় বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আকবর সোবহানকে নিজ হাতে তুলে কেক খাইয়ে দেন কথিতযশা এই সাংবাদিক। এছাড়া বিগত সরকারের নেপথ্য কারিগর বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের ভূয়সি প্রশংসা করতেও দেখা যায় তাকে। আকবর সোহানকে অমায়িক ও অসাধারণ মানুষ হিসেবে বর্ণনা করেন শফিক রেহমান। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যাপক সমালোচনা।

ভিডিওটির শুরুতে ডা. জাহেদ বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ তার টাকার জাদু দেখাতে শুরু করেছে। বিগত শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে শেখ হাসিনাকে কিভাবে চাটতেন বসুন্ধরা গ্রুপের প্রধান আমাদের মনে হয় মনে থাকার কথা। একটা ভিডিও খুবই ছড়িয়ে পড়েছিল। সেখানে দেখা গেছে, শেখ হাসিনা তার কাছে পীরের মত কিছু একটা এবং তার জন্য সবকিছু করতে পারেন। অবশ্য আরো এরকম ব্যবসায়ী নিশ্চিতভাবেই আছেন। গতকাল থেকে আবার আলোচনা শুরু হয়েছে।

শফিক রেহমানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, গতকালের পর উনি উনার বিরাট অর্জন সারাজীবনে যেটা ছিল তার বড় অংশই হারিয়েছেন। জনাব শফিক রহমান গিয়েছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের পত্রিকা কালের কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এবং সেখানে বক্তৃতায় ভীষণ প্রশংসা করেছেন বসুন্ধরা গ্রুপের মালিক জনাব আহমেদ আকবর সোবহানের ।

তিনি বলেন, এই প্রসঙ্গে একটু বলব। আমরা সাথে সাথে ভুলে যাই। কারণ এই ডামাডোলটা অনেক বড় সেই প্রোগ্রাম নিয়ে‌ শিবিরের সেক্রেটারি কথা বলেছেন এবং অভ্যুত্থানের পরপর আমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে বা মনে না থাকলে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। জামায়াতের আমির ডাঃ শফিকুর রহমান বসুন্ধরা গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়ার অফিস পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। এগুলো নিয়ে একটু কথা বলতে চাই।

ডা. জাহেদ বলেন, শফিক রেহমানকে দীর্ঘ একটা সময় বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পক্ষের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। তিনি প্রথম তার যে যায়যায়দিন সাপ্তাহিকটা ছিল সেই সাপ্তাহিকটার মাধ্যমে তিনি কাজ করেছেন। পরবর্তীতে নানা রকম ভাবে তিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য একজন গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হিসেবে কাজ করে গেছেন।সেই শফিক রহমান কালের কণ্ঠে গেলেন এবং ভুইসী প্রশংসা করলেন, জনাব সোবহানকে কেক খাইয়ে দিলেন। উনার বক্তৃতা আমি শুনেছি। বক্তৃতায় তিনি এত প্রশংসা করেছেন, এত বড় গ্রুপ এত ভালো কিছু। "একটা জায়গায় ভেরি ইন্টারেস্টিং তিনি একটু খোঁচা দিয়েছেন ভারত বয়কটকে। তিনি ভারত বয়কট পছন্দ করেন না, উনি সমর্থন করেন না‌ । কিন্তু ভারতকে বিট করতে বলেছেন। জনাব সোবহানের মত বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকের মত শিল্পপতিরা সেই কাজটা করবেন বলে তিনি বলছেন"।

ডা. জাহেদ বলেন, একটু কথাই বাকি রেখেছিলেন সেটা হলো বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকের ছেলের যে সমালোচনা আছে একটা হত্যাকাণ্ডের সাথে তার সম্পৃক্ততা নিয়ে। সেটা প্রমাণিত হয়নি আমি আগেও বলেছি। এটা নিয়ে আলাদা করে ভিডিও করেছিলাম। সেটা হলো কোনভাবেই আসলে এই সম্পৃক্ততা নিয়ে আলাপ হতে পারে। কিন্তু কেউ একজনের নাম উঠলে তিনি অপরাধী হয়ে গেছেন তা না।

তিনি বলেন, আমাদের অভিযোগটা ছিল এই জায়গায় যে, তার নাম যখন আসে তার সাথে পুলিশ একবারের জন্য কথাও বলেনি যেটার ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে দেয়া হয়। এগুলোই ভুল, এগুলোই অন্যায়। আইনের চোখে অনেকেই বেশি সমান হতে পারেন না। তিনি সেই জিজ্ঞাসাবাদ হতে পারতো। ইনভেস্টিগেশনে চার্জ শিটে তার নাম নাও থাকতে পারতো বা চার্জ শিটে তার নাম আছে পরে বিচারে তিনি নিরপরাধ প্রমাণিত হতে পারতেন। কিন্তু একটা জুডিশিয়াল প্রসেস আছে বাংলাদেশে । সে সময় টাকা তার বিরাট সক্ষমতা আসলে দেখেছিল। এখন উনি তাকেও দুর্নামের শিকার কুৎসার শিকার বলেননি এটুকু হয়তো বাকি ছিল।

ডা. জাহেদ বলেন, যাই হোক একই অনুষ্ঠান নিয়ে মানে তাদের বর্ষপূর্তি নিয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্রজনতার পাশে ছিল কালের কণ্ঠ, শিবির সেক্রেটারি এরকম একটা ভিডিও করেছেন এবং ভিডিওটা আপলোডেড হয়েছে কালের কণ্ঠের পাতায়। আমরা বুঝতে পারছি আমি‌ তাহলে আগের অংশটা যোগ করি, তাহলে জামায়াত-শিবিরেরও ইনভলভমেন্ট এখানে বোঝা যাবে। এটা হচ্ছে ২০ আগস্ট ২০২৪ ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া ভবন পরিদর্শনে গিয়ে জামায়াত আমির দুর্বৃত্তদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বসুন্ধরার ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া ভবন পরিদর্শন করেছেন।

তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর ডাঃ শফিকুর রহমান সকাল সাড়ে দশটায় পরিদর্শনে যান। এসময় সেখানে উপস্থিত কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে স্বাগত জানান। তাদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত যানবাহন এবং মিডিয়া ভবনের বিভিন্ন অংশ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে বসুন্ধরা গ্রুপের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন । তিনি এই ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং এই ঘটনার নিন্দা জ্ঞাপন করেন। সম্প্রতি একটি মহল দেশকে অস্থিতিশীল এবং গণআন্দোলনের সফলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য কাপুরুষোচিত হামলা করতে পারে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। হামলাকারীদের গ্রেফতার এবং আইনের আওতায় আনার কথা বলেন।

ডা. জাহেদ বলেন, আমি সম্ভবত সবচেয়ে প্রথম মানুষদের একজন যিনি শেখ হাসিনার পতন এবং পালিয়ে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগ বা তাদের সাথে এফিলিয়েটেড প্রতিষ্ঠানের উপরে হামলার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলাম। সুতরাং বসুন্ধরার উপরে হামলা হয়েছে এটা আমি কোনভাবেই গ্রহণ করি না । এটার সাথে দায়ী যারা আছেন তাদের বিচার এবং তাদের সবকিছু ব্যবস্থা সবকিছু করা দরকার। কিন্তু জামায়তের আমির যখন গেছেন এই যাওয়াটাকে আমি একটা বার্তা বলে মনে করি। উনি সব জায়গায় যেখানে যেখানে ভাঙচুর হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠান সেখানে সেখানে গেছেন? যান নাই। উনি এখানে গেছেন। আমরা ধরে নিতে পারি যে বসুন্ধরা গ্রুপের সাথে মিডিয়া ক্ষেত্রে জামায়াতের কোনো না কোনো ধরনের কোন আলোচনা বা আন্ডারস্ট্যান্ডিং আছে। কারণ শিবিরের জেনারেল সেক্রেটারি বলছেন, গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রজনতার পাশে ছিল কালের কণ্ঠ। একটা পত্রিকা হিসেবে দু-চারটা নিউজ দেয়া যদি তাদের অতীত পাপ সরিয়ে তাদের প্রশংসার পরিস্থিতি তৈরি করে এর মধ্যে কিন্তু একটা পরিকল্পনা আছে। জামায়াতের আমিরের ওই যাওয়াটাকে আমি একটা সিরিয়াস এনডোর্সমেন্ট মনে করি এবং তার সাথে এখন শিবিরের সেক্রেটারিকে যদি একত্র করি তাহলে এটা খুব স্পষ্ট। জামায়াত এবংৎশিবির এই বসুন্ধরা গ্রুপের সাথে এফিলিয়েটেড হচ্ছে। পীর-ফকির কেউ এভাবে প্রশংসা করে বা চাটে না । সেই ভদ্রলোকদের সাথে তাদের এখন দহরম মহরম।

 

তিনি আরো বলেন, আমরা এটা বুঝতে পারি যারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অনেক বেশি কঠোর ছিলেন তাদের তো কিছু নৈতিক দুর্বলতা তৈরি হয়েছে‌। তাদেরকে চাপ দিয়ে আসলে বেনিফিট নেয়া সম্ভবত খুব কঠিন না বা তারা সতস্প্রণোদিত হয়ে তারা সতস্ফুর্তভাবেই হয়তো এই কাজটা করার সম্ভাবনা আছে সেটা তারা করে থাকতে পারে। তাদের যে মিডিয়া গ্রুপগুলো আছে সেগুলো চলুক তাদের মত করে। সেখানে কেউ কেউ যায় । কিন্তু এই যে প্রশংসা, তাদেরকে এনডোর্স করা এই জিনিসগুলো ভয়াবহ। সার্টিফিকেট দেয়া এই জিনিসগুলোকে আমরা কোনভাবেই আসলে গ্রহণ করি না।