
চব্বিশের জুলাই থেকে পঁচিশের জুলাই। দেখতে দেখতে এক বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেল। ৩৬ জুলাইয়ের বিভীষিকা এখনো জনমানসে দগদগে ঘা হয়ে আছে। শ’য়ে শ’য়ে লাশ, রক্তস্রোত, হাসিনার খুনে বাহিনীর উদ্যত মারণাস্ত্র আর নৃশংসতা এখনো হিম-আতঙ্ক ছড়ায়। বছরান্তে শহীদ পরিবার ও দৃষ্টিশক্তিসহ অঙ্গ হারানো পরিবারের সদস্যরা দৃষ্টান্তমূলক বিচারের প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছেন।
বিচার প্রক্রিয়া চলছে। মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এরই মধ্যে শহীদ আবু সাঈদ হত্যাসহ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের বিচারিক কার্যক্রমের সূচনা হয়েছে। আশার জায়গা হলো গদি টিকিয়ে রাখতে শেখ হাসিনা নিজে সরাসরি হুকুম দিয়ে ও প্রত্যক্ষভাবে তত্ত্বাবধান করে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন—এটা এখন প্রমাণিত সত্য। তিনটি আলোচিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন কার্যত হাসিনার বাঁচার পথকে রুদ্ধ করে দিয়েছে। অকাট্য প্রমাণ হাজির করেছে জাতিসংঘ অনুসন্ধানী দলের প্রতিবেদন।
নিজের খোঁড়া খাদে নিজেই পড়েছেন ফ্যাসিস্ট ও নির্দয় শাসক শেখ হাসিনা। ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে তিনি ইসরাইল থেকে যে নজরদারি ও আড়িপাতার যন্ত্র এনে গুম, খুন ও বিরোধীদের দমন করেছিলেন, সেই যন্ত্রেই ধরা পড়েছে গণহত্যার অকাট্য প্রমাণ। ফোনে হত্যার নির্দেশসহ অডিও বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও বিবিসি। এসব প্রতিবেদনের ফলে গণহত্যার বিচার সহজতর হওয়া ছাড়াও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শেখ হাসিনা ও তার ফ্যাসিবাদী শাসনের সাঙ্গোপাঙ্গদের কোনোরকম অনুকম্পা বা সহানুভূতি পাওয়ার পথও কার্যত সংকীর্ণ হয়ে গেছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানী ইউনিট (আই-ইউনিট) তিন দিন আগে চব্বিশের জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলন নিয়ে গণবিস্ফোরণের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার বেশ কিছু গোপন ফোনালাপ প্রকাশ করেছে। এর আগে একাধিক ফোনালাপ ফাঁস হলেও আল জাজিরার সর্বশেষ প্রকাশ করা ৪৯ মিনিটের প্রতিবেদনে কিছু নতুন তথ্য-প্রমাণ উঠে এসেছে। ওই ফোনালাপে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ দমন করতে সরাসরি প্রাণঘাতী হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।
‘হাসিনা—জুলাইয়ের ৩৬ দিন’ শিরোনামের আল জাজিরার অনুসন্ধানী ডকুমেন্টারিতে আন্দোলন চলাকালে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ মহলের কথোপকথন, সিদ্ধান্ত ও দমননীতির তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, টানা তিন সপ্তাহের সেই আন্দোলনে কমপক্ষে এক হাজার ৫০০ জন নিহত এবং ২৫ হাজারের বেশি আহত হন। সে সময় বিক্ষোভ দমন করতে নিরাপত্তা বাহিনী ৩০ লাখের বেশি গুলি ছোড়ে। জুলাই অভ্যুত্থান পণ্ড করতে ছোড়া গুলির এ সংখ্যাটি প্রথম জানা গেল।
এর আগে মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ-সংক্রান্ত অডিও ফাঁস হলেও তার অপর প্রান্তে কে ছিলেন, তা নিয়ে অস্পষ্টতা ছিল। আল জাজিরা তা শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। ১৮ জুলাইয়ের সেই আলোচিত অডিও রেকর্ডিংয়ে শেখ হাসিনা ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে কথা বলছিলেন। সেখানে বলতে শোনা যায়—‘আমার নির্দেশ তো আগেই দেওয়া হয়ে গেছে। আমি পুরোপুরি ওপেন অর্ডার দিয়ে দিয়েছি। এখন ওরা মারবে, যেখানে পাবে সেখানে গুলি করবে। আমি তো এতদিন থামিয়ে রেখেছিলাম। আমি ছাত্রদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছিলাম।’
নতুন এই ডকুমেন্টারি শেখ হাসিনার কথোপকথন রেকর্ড কে করেছে, তাও জানান দিয়েছে। তার নিজের গোয়েন্দা সংস্থার রেকর্ড করা আরেকটি কলে তাকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে হেলিকপ্টার ব্যবহার করার বিষয়টি স্পষ্ট করে বলতে শোনা গেছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেখানে তারা কোনো জটলা দেখছে, সেটা ওপর থেকে—এখন তো ওপর থেকেই হচ্ছে।’ হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে হত্যা অভিযানের কোড নাম ছিল ‘অপারেশন ক্লিন ডাউন’। অভিযানে ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল। যখন অনেক বিক্ষোভকারী একসঙ্গে জড়ো হতো, তখন তাদের হত্যা করার জন্য সেখানে হেলিকপ্টার পাঠানো হতো।
জুলাই আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠা রংপুরের ছাত্র আবু সাঈদের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আল জাজিরার অনুসন্ধানে বলা হয়, আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড হুমকি ও ঘুসের মাধ্যমে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে শেখ হাসিনার সরকার। আবু সাঈদের পরিবারকে হুমকি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং তা টেলিভিশনে প্রচার করানো হয়।
আল জাজিরা নতুন তথ্য হিসেবে তুলে আনে, শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ফোনে আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট টেম্পারিং করে সংগ্রহে তৎপর ছিলেন। অডিও রেকর্ডিংয়ে তাকে পোস্টমর্টেম করা হয়েছে কি না, তা বলতে শোনা যায়। এরপর তিনি জানতে চান, ‘রংপুর মেডিকেল কলেজের কেন আমাদের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দিতে সময় লাগছে? লুকোচুরি কে খেলছে—রংপুর মেডিকেল?’ এ অডিওটিও প্রকাশ হলো নতুন করে।
রংপুর মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক রাজিবুল ইসলাম আল জাজিরাকে বলেন, ‘আবু সাঈদের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আমাকে পাঁচবার লিখতে হয়েছে। আমি প্রতিবার রিপোর্ট লিখি—যখন জমা দিতে যাই, পুলিশের মনমতো হয় না। আমার মনে হয়েছে, সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকেই আবু সাঈদের রিপোর্টকে টেম্পারিং করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে।’
আল জাজিরা আরো জানিয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে ইন্টারনেট বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, যেন সহিংসতার রক্তাক্ত চিত্র আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে না পৌঁছায়। এর প্রমাণ মিলেছে ফাঁস হওয়া গোপন সরকারি নথিতে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের হাজার হাজার আইডির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছিল বিটিআরসি। এছাড়া আল জাজিরার ডকুমেন্টারিতে নতুন তথ্য হিসেবে উঠে এসেছে, আন্দোলনকারীদের গুলি করতে অস্বীকার করার পর তিন বাহিনী প্রধানের সামনে শেখ হাসিনা হাউমাউ করে কাঁদেন এবং তাকে হত্যা করে গণভবন এলাকায় পুঁতে ফেলতে বলেন। সেনাপ্রধান যে নিজ বাহিনীতে বিদ্রোহের মুখে পড়েছিলেন, সে তথ্যটিও এক সেনা কর্মকর্তার মুখে তুলে আনে আল জাজিরা।
আল জাজিরার এ প্রতিবেদনের মাসখানেক আগে আরেক চাঞ্চল্যকর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিসি। ওই প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো জানা যায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট (গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পলায়নের দিন) ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত এলাকা যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে মাত্র ৩০ মিনিটে কমপক্ষে ৫২ জন নিহত হয়েছিল। বিবিসি আই-এর অনুসন্ধানে এ ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। ঘটনাটিকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ানক পুলিশি সহিংসতাগুলোর একটি হিসেবে বর্ণনা করেছে বিবিসি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারবিরোধী বিক্ষোভের শেষ দিনে ভয়াবহ ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছিল, সেটি বের করার জন্য তখনকার শত শত ভিডিও, ছবি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য গ্রহণ এবং সেগুলো বিশ্লেষণের পাশাপাশি সরেজমিনে বেশ কয়েকবার যাত্রাবাড়ীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে বিবিসি।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে নানা খবর প্রকাশিত হলেও নির্বিচারে হত্যার ঘটনাটি কীভাবে শুরু ও শেষ হয়েছিল এবং তাতে কত মানুষ হতাহত হয়েছিল, সে সম্পর্কে বিবিসির অনুসন্ধানে এমন কিছু তথ্য ও বিবরণ উঠে এসেছে, যা আগে সেভাবে সামনে আসেনি।
বিবিসির অনুসন্ধানে জানা যায়, পুলিশ যখন বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে, সেই সময়ের ভিডিও ধারণ করেছেন মিরাজ হোসেন। মোবাইল ফোন ক্যামেরায় ওই ভিডিওতে মর্মান্তিকভাবে তার জীবনের শেষ মুহূর্তও ধরা পড়েছে। মিরাজ হোসেনের মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যরা তার মোবাইল ফোনটি খুঁজে পান এবং ফোনে সংরক্ষিত ভিডিওটি বিবিসিকে দেন।
ভিডিওর মেটাডেটা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেদিন নির্বিচারে গুলিবর্ষণের ঘটনাটি শুরু হয়েছিল বেলা ২টা ৪৩ মিনিটে। ভিডিওটিতে যাত্রাবাড়ী থানার মূল ফটকে বিক্ষোভকারীদের সামনে সেনাবাহিনীর একটি দলকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এরপর হঠাৎই তারা ওই এলাকা থেকে সরে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই যাত্রাবাড়ী থানার ভেতরের পুলিশ সদস্যরা ফটকের সামনে অবস্থানরত বিক্ষোভকারী জনতার ওপর আকস্মিকভাবে গুলিবর্ষণ শুরু করেন।
অনুসন্ধানে বিবিসি দেখেছে, ৫ আগস্ট বিকালে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে ৩০ মিনিটের বেশি সময় ধরে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল। ঘটনার সময়ের কিছু ড্রোন ভিডিও বিবিসির হাতে এসেছে। ভিডিওর মেটাডেটার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বেলা ৩টা ১৭ মিনিটেও যাত্রাবাড়ী থানার সামনের মহাসড়কে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাচ্ছিল পুলিশ। এরপর তাদের বড় একটি দলকে থানার উল্টো পাশে অবস্থিত একটি অস্থায়ী সেনা ব্যারাকে আশ্রয় নিতে দেখা যায়।
৫ আগস্টের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে থানার তৎকালীন ওসি আবুল হাসানের বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়েছে, যিনি হত্যাকাণ্ড চলাকালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। বিবিসির এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রাণঘাতী গুলির নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনা, সমন্বয়কারী হিসেবে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান কামাল ও দায়িত্বরত পুলিশ কর্তাদের বিচারের ক্ষেত্রে অকাট্য দলিল হিসেবে কাজে লাগবে বলে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমের সদস্যরা মনে করছেন। পুলিশ বাহিনীও বিবিসিকে জানিয়েছে, তারা ঘটনার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে।
দেশের তদন্ত টিমের বাইরে সর্বপ্রথম শেখ হাসিনার নির্দেশে পরিচালিত গণহত্যার প্রমাণ হাজির করে জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) তদন্ত প্রতিবেদন। ওই প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো জানা যায়, বাংলাদেশে গত জুলাই-আগস্টে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জনের মতো নিহত হয়েছেন। তাদের বেশিরভাগের মৃত্যু হয়েছে রাইফেল ও শটগানের গুলিতে। জাতিসংঘ প্রতিবেদন এও জানায়, ওই সময় নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমন্বয়কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান কামাল। তাদের নির্দেশেই বিক্ষোভ দমনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো।
জাতিসংঘ প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়, নিহত ছাড়াও হাজার হাজার মানুষ গুরুতর আহত হয়েছে। পুলিশ ও র্যাবের তথ্য অনুযায়ী, আন্দোলন দমনে ১১ হাজার ৭০০ জনকে তখন আটক করা হয়েছিল। যারা নিহত হয়েছে তাদের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ শিশু রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। পুলিশ ও অন্য নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা শিশুরা টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হয়েছে এবং পঙ্গু হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে অন্যান্য সূত্র থেকে পাওয়া প্রমাণের সমন্বয় করে ওএইচসিএইচআরের ওই প্রতিবেদনে এসব বলা হয়েছে।
ওএইচসিএইচআর মনে করে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, নিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র অংশ এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারে, সমন্বয়ে ও নির্দেশনায় এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, যেসব বিষয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে রয়েছে জীবনের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার, ব্যক্তি নিরাপত্তা, নির্যাতন ও বাজে আচরণ থেকে মুক্ত থাকার অধিকার, ব্যক্তির সম্মান ও মর্যাদার অধিকার, ন্যায়বিচারের অধিকার, ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে প্রতিকার পাওয়ার অধিকারের মতো বিষয়গুলো।
বিজিবি, র্যাব, ডিজিএফআই, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সরাসরি অপারেশনের বিষয়ে আদেশ ও অন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতারা, যা তাদের বিক্ষোভকারী ও অন্য বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত করেছিল। এর মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্বিচারে গ্রেপ্তারের মতো ঘটনা ছিল।
জাতিসংঘ রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশের পুলিশের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের ৯৫ সদস্যের নাম ও তাদের ভূমিকা কী ছিল, তার বিস্তারিত বিবরণ ওএইচসিএইচআর’কে সরবরাহ করা হয়েছে। পুলিশের মতে, এসব ব্যক্তিই বিক্ষোভের সময় সহিংস হামলায় ব্যবহারের জন্য নাগরিকদের অস্ত্র সরবরাহ করেছিল। যাদের অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে ১০ জন তখনকার সংসদ সদস্য, ১৪ জন আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা, ১৬ জন যুবলীগ নেতা, ১৬ জন ছাত্রলীগ নেতা ও সাতজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন।
পতিত আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের এ প্রতিবেদনগুলো বিতর্কিত করার যত চেষ্টাই করা হোক না কেন শেখ হাসিনা ও তার সরকারের মন্ত্রী, এমপি, দলীয় নেতা-কর্মীসহ ক্যাডারদের বিচারে এ তিনটি রিপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এগুলো আদালতে প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হলে তা খণ্ডন করা সহজ হবে না। ফলে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির মুখোমুখি হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও রাজনীতি বিশ্লেষক