
একজন মানুষকে ভাগ্যবান অ্যাখ্যা দিতে কী কী উদাহরণ দরকার বলুন তো? বার বার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা, লটারি জিতে ধনী হওয়া, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সুখে শাস্তিতে বসবাস করা। এগুলো যদি ভাগ্যবান মানুষের সংজ্ঞা হয় তাহলে বিশ্বের সবচেয়ে ভাগ্যবান ব্যক্তি হিসেবে ফ্রেন সিলাক একেবারে উপযুক্ত।
ফ্রেন সিলাক সাতবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। তারপর আবার লটারিতে পুরস্কার জিতে হয়েছেন কোটিপতি! ৪ বার ব্যর্থ বিবাহের আঘাত সহ্য এখনো তিনি দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ক্রোয়েশিয়ার সংগীত শিক্ষক ফ্রানে সেলাকের জীবন কাহিনি শুনলে বিশ্বাস করা কঠিন। ফ্রানে সেলাককে অনেকেই বলেন, পৃথিবীর ‘সবচেয়ে ভাগ্যবান’ মানুষ। ফ্রানে সেলাক ক্রোয়েশিয়ান। বিশ্বজুড়ে তিনি পরিচিত তার অবিশ্বাস্য সৌভাগ্যের জন্য।
তার জীবনে যা ঘটেছে, তা যেন কোনো চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যের মতো! বাস্তব জীবনের সীমা ছাড়িয়ে যায় সেই গল্প। বিশ্বাস করা কঠিন। তবে সেলাক নিজেই মনে করেন, বাস্তব সিনেমার চেয়েও অদ্ভুত। ১৯২৯ সালের ১৪ জুন ক্রোয়েশিয়ায় জন্ম ফ্রেন সিলাকের। কিছুদিন পরই তার বয়স হতে যাচ্ছে ৯৫ বছর। এরই মধ্যে সাংবাদিকদের কাছে তিনি ‘ওয়ার্ল্ড’স লাকিয়েস্ট ম্যান’ এবং ‘ওয়ার্ল্ড’স লাকিয়েস্ট আনলাকিয়েস্ট ম্যান’ খেতাব জিতেছেন।
ফ্রেন পেশায় একজন সংগীত শিক্ষক ছিলেন। তার জীবন ছিল খুবই সাধারণ। বিবিসির মতে, ফ্রানে সেলাকে অবিশ্বাস্য সৌভাগ্য খেলা দেখাতে শুরু করে ১৯৫৭ সালে। একটি বাস দুর্ঘটনায় তিনি নদীতে পড়ে যান। এর পর তিনি জীবনে আরও ৬ বার মৃত্যুর থেকে অল্পের জন্য বেঁচে যান।
প্রথম দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরেন ১৯৬২ সালে। ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে নদীতে পড়ে যায়, কিন্তু সেলাক প্রাণে বেঁচে যান।সারাজেভো থেকে ডুব্রোভনিকের রেলপথে যাওয়ার সময়, অদ্ভুত ভাবে তিনি যে ট্রেনে ছিলেন সেটি একটি নদীতে পড়ে যায়। সতেরো জন যাত্রী নিহত হয়েছিল সেই দুর্ঘটনায়। সেলাক প্রাণে রক্ষা পেলেও ত্রা একটি হাত ভেঙে গিয়েছিল। ভাঙা হাত নিয়ে সাঁতরে সেদিন তীরে এসে প্রাণ রক্ষা করতে পেরেছিলনে।
পরের বছর, ফ্রেন জাগরেব থেকে রিজেকা যাচ্ছিলেন। এবার ছিলেন বিমানে। মাঝ আকাশে বিমান থেকে একটি দরজা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, বিমান গিয়ে একটি খাদের মধ্যে বিধ্বস্ত হয়। বিমানের উনিশ জন আরোহী প্রাণ হারিয়েছিলেন, সেলক গিয়ে পড়েন একটি খড়ের গাদায়। ভাগ্যক্রমে এবারও বেঁচে যান তিনি। কিছুদিন হাসপাতালে থেকে বাড়ি ফিরে আসেন।
১৯৬৬ সালে ফ্রেন পড়েছিল বাস দুর্ঘটনায়। তিনি যে বাসে চড়েছিলেন সেটি আবার নদীতে পড়ে যায়। সেখানে চারজন হতাহতের ঘটনা ঘটলেও তিনি অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে আসেন। এরপর ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তুলনামূলকভাবে অস্বাভাবিক কিছু বছর কেটে গেছে। সেলাক জানায় যে তার গাড়ির জ্বালানি ট্যাঙ্ক মোটরওয়েতে বিস্ফোরিত হয়েছিল।
এর শুরুটা হয়েছিল যখন তার ৩২-৩৩ হবে। জীবনে কখনো বিমানে ওঠার অভিজ্ঞতা ছিল না। একদিন কাজের জন্য বিমানে ওঠার সুযোগ আসে। নির্দিষ্ট দিনে পৌঁছে গেলেন বিমানবন্দরে। উঠে পড়লেন বিমানে। সেই বিমান পড়লো দুর্ঘটনার কবলে। কিন্তু ফ্রেন দুর্ঘটনায় পড়া বিমান থেকে সোজা খড়ের গাদার উপর ভূপতিত হয়ে জানে রক্ষা পেলেন।
এমনকি তিনি একটি বাসের ধাক্কা থেকেও ফিরে আসেন জীবনে। এত সব ঘটনার পর ভাগ্য তার প্রতি শেষমেশ দয়া দেখায়। সেলাক এক মিলিয়ন ডলারের (প্রায় ₹৮.৩৬ কোটি) লটারি জেতেন। তবে অবাক করার মতো বিষয় হল, তিনি তার প্রায় সব অর্থ পরিবার ও বন্ধুদের মধ্যে বিলিয়ে দেন।
‘রিপ্লেস বিলিভ ইট অর নট’ অনুযায়ী, ২০০০ সালের মাঝামাঝি সেলাক ক্রোয়েশিয়ায় লটারি জেতেন। তিনি সেই টাকায় একটি বিলাসবহুল বাড়ি কেনেন। কিন্তু ২০১০ সালে সেই বাড়ি বিক্রি করে দেন। এরপর পঞ্চম স্ত্রীকে নিয়ে সাধারণ জীবনে ফিরে আসেন। সেলাকের জীবনের শেষ অধ্যায় ছিল শান্তিপূর্ণ। তিনি লটারিতে জেতা টাকার কিছুটা খরচ করেন হিপ সার্জারিতে। একটি গির্জাও তৈরি করেছিলেন বলে জানা যায়।
সূত্র: রিপ্লেস বিলিভ ইট অর নট