
নূরে আলম সিদ্দিকী
আহত বা নিহত হয়েছে তাদের? নাকি কর্তৃপক্ষের।
বঙ্গবাজার
২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হয়। এ ঘটনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গঠিত তদন্ত কমিটি ও ফায়ার সার্ভিস গঠিত তদন্ত কমিটি তখন বলেছিল, মশার কয়েলের আগুন বা বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে বঙ্গবাজারে আগুনের সূত্রপাত হয়।
বঙ্গবাজারে আগুন লাগার ঘটনায় ২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল। তারা বলেছিল, মার্কেটের তৃতীয় তলায় একটি টেইলার্স থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। সিগারেটের অথবা মশার কয়েলের আগুন থেকে এই ঘটনা ঘটে। এতে ৩ হাজার ৮৪৫ জন ব্যবসায়ী সর্বস্ব হারান। ক্ষয়ক্ষতি হয় ৩০৫ কোটি টাকার।
এক ভবনে এতগুলো দোকান ও যথাযথ পূর্ব ব্যবস্থা না থাকার দায় তাহলে কি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের নাকি যেসব প্রতিষ্ঠান তদারকি করে তাদের। এসব বিষয় নিয়ে কি আমরা আগে থেকেই সতর্ক হতে পারি না?
বেইলি রোড
২০২৪ সালের ১ মার্চ ঢাকার বেইলি রোডে একটি বহুতল ভবনে আগুন লেগে ৪৬ জন নিহত হন এবং ১২ জন গুরুতর আহত হন। ভবনটির নিচতলার একটি রেস্তোরাঁ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় এবং দ্রুত তা ছড়িয়ে পরে।
ভবনের নিচতলায় অবস্থিত একটি রেস্তোরাঁ থেকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত হয়, যা পরে দ্রুত ছড়িয়ে পরে।
জানা যায়, ভবনটিতে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল ছিল এবং অনুমোদন ছাড়াই এটিকে ৭ তলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হয়েছিল, যা পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তোলে। তাদের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যে দুর্বল ছিল সেটি এ দুর্ঘটনা না ঘটলে কখনো জানা যেত না। দুর্ঘটনায় প্রাণ যাওয়ার পর বাড়ে কর্তৃপক্ষের ছোটাছুটি।
সর্বশেষ মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ঘটনা। এখন পর্যন্ত ২৭ জনের মরদেহ নিশ্চিত করা গেছে। গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন অনেকে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বের হবে একদিন। হয়তো ক্ষতিপূরণ পাবে পরিবারগুলো। কিন্তু যে ক্ষতি হয়েছে সেগুলো কি আদৌ পূরণযোগ্য?
ঢাকা মহানগর ইমারত (নির্মাণ, উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও অপসারণ) বিধিমালা-২০০৮ এবং ২০০৩ সালের অগ্নিকাণ্ড রোধ ও নির্বাপণ আইন অনুযায়ী, প্রতিটি ভবনে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা, অগ্নিপ্রতিরোধক দরজা এবং নিরাপদ সিঁড়ি থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বাস্তবে এই নিয়মগুলোর বাস্তবায়ন প্রায় নগণ্য। বেশিরভাগই ভবন নির্মাণ বিধিমালা মেনে গড়ে ওঠেনি। বাণিজ্যিক স্বার্থে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করা হয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে প্রাণহানি ঘটে।
প্রতিটি বড় অগ্নিকাণ্ডের পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, কিন্তু এই তদন্তগুলোর ফলাফল বা সুপারিশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা স্পষ্ট। এই দুর্ঘটনাগুলোর জন্য শুধু কর্তৃপক্ষই দায়ী নয়, আমাদের সামাজিক উদাসীনতাও একটি বড় কারণ। অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের ব্যবহার শেখা, নিরাপত্তা সচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে এই ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ প্রশিক্ষণ এবং জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়ানো জরুরি।
এসব প্রতিরোধে পরিকল্পিত নগরায়ণ এবং নির্মাণ বিধিমালার কঠোর প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি। রাজউক এবং ফায়ার সার্ভিসের মতো সংস্থাগুলোকে আরও সক্রিয় ও জবাবদিহিমূলক করতে হবে। অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া কোনো ভবনের অনুমোদন দেওয়া যাবে না।