Image description

আবদুল লতিফ মাসুম

ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছিলেন, ‘পরসি পেহলে লেকেন বাংলাদেশ সাবচে পেহলে।’ ভারত যে প্রতিবেশী দেশগুলোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়, তিনি তা বোঝাতে চেয়েছেন। আবার প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে সবচেয়ে নিকটবর্তী মনে করেন এবং সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে চান, তা বোঝাতে চেয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে আমরা কী দেখছি? তাদের কথা ও কাজের মধ্যে কোনো মিল নেই। নীতিগতভাবে উচ্চারিত শব্দাবলি কূটনৈতিক ভাষায় যথার্থ, কিন্তু কার্যত প্রতিটি প্রতিবেশীকে প্রথম থেকেই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। পাকিস্তান তাদের চিরশত্রু। যুদ্ধ-উন্মাদনায় পাক-ভারত সীমান্ত উত্তেজিত থাকে সবসময়। এই অঞ্চলের আরেকটি হিন্দুপ্রধান দেশ নেপাল। দেশটিকে ভারত করায়ত্ত করতে চায় সব দিক দিয়ে। এজন্য সেখানে ভারতবৈরিতা তুঙ্গে। শ্রীলঙ্কাকে সুকৌশলে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তামিল বিদ্রোহীদের বরাবরই অস্ত্র দিয়েছে ভারত। আবার উল্টোপাল্টা করতে গিয়ে তামিলদের হাতে প্রাণ দিয়েছেন রাজীব গান্ধী। শ্রীলঙ্কা জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সংকটে এখন চীনের দ্বারস্থ। সেখানে ভারতবৈরী সরকার বর্তমান। ভুটানের অবস্থান ভারতের কাছে করদ রাজ্যের মতো। মালদ্বীপ থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে ভারত। সেখানকার শাসন কর্তৃত্বও ভারতবিরোধী। ‘একে একে নিভিছে দেউটি’; বাকি ছিল বাংলাদেশ। ছলে-বলে-কলেকৌশলে আওয়ামী শাসন টিকিয়ে রেখেছিল তারা; একরকম প্রকাশ্য ও নগ্নভাবে। বাংলাদেশের সাহসী জনগণ দ্বিতীয়বারের জন্য স্বাধীন করেছে বাংলাদেশ। পলায়ন করেছেন শেখ হাসিনা প্রভুদেশে। তা হলে দেখা যাচ্ছে, সুষমা স্বরাজ উচ্চারিত বাক্যাবলি সত্য! তবে বিপরীত অর্থে। কথাটা এভাবে বলা যায়, ‘পরসি পেহলে বাঁশ দেনে কে লিয়ে, লেকিন বাংলাদেশ কো সাবচে বড়া বাঁশ দেনে কে লিয়ে।’

পররাষ্ট্রনীতি নির্ণীত হয় জনগণের জন্য। যথার্থ পররাষ্ট্রনীতিতে অভ্যন্তরীণ উপাদানটি গুরুত্বপূর্ণ। পররাষ্ট্রনীতি অতি অবশ্যই জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার অনুবর্তী হবে। হাসিনা সরকার তলে তলে ইসরাইলের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক রেখে ক্ষমতায় থাকার কৌশলগত ও তথ্যগত সুবিধা নিয়েছে। বিরোধীদের দমন করার জন্য তাদের পেগাসাস ব্যবহার করেছে। পাসপোর্ট থেকে ইসরাইলের প্রতি আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে, কিন্তু ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য কুমির-অশ্রু বর্ষণ করেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে তুষ্ট করার জন্য এই দ্বৈত নীতি অবলম্বন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। জাতীয় স্বার্থের পরিবর্তে ক্ষমতার স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেছিলেন, তারা ভারতকে এতকিছু দিয়েছেন যে চিরকালই তারা মনে রাখবে। সত্যিই তারা তা মনে রেখেছে। এখন শেখ হাসিনা পলায়নের পর বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের মৈত্রী ও ভালোবাসার পরিবর্তে তারা একমাত্র শেখ হাসিনা ও আওয়ামীপ্রীতির নগ্ন নমুনা প্রদর্শন করছে। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব চরমে পৌঁছে। বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী সরকারকে ক্ষমতায় রাখার জন্য তারা সবকিছু করেছে। সেই সুযোগে হাসিনা সরকার বাংলাদেশের মানুষের ওপর অবর্ণনীয় অন্যায়-অত্যাচার, নিপীড়ন-নির্যাতন ও গুম-খুন করেছে। মানুষের ক্রোধ বেড়েছে ভারতের প্রতি। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরে বাংলাদেশের জনমতকে তোয়াক্কা না করে ভারত শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পক্ষ নেয়। সব কূটনৈতিক রীতিনীতি ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেই চলেছে। শেখ হাসিনার প্রতি তাদের রাজনৈতিক দায় আছে। তাকে আশ্রয় দেওয়াও তাদের প্রয়োজন। কিন্তু তাকে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা চালানোর প্রশ্রয় তারা দিতে পারে না। মোদিজি এই সেদিন বলেছেন, শেখ হাসিনাকে নিরস্ত করার দায় তার নেই। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার পর তার নিন্দা করেছে। বাংলাদেশ যে তাদের রাজ্য নয়, তারা তা ভুলে গেছে। অভ্যুত্থানের পর থেকে যে ভাব ও ভাষায় বাংলাদেশ সম্পর্কে তারা মন্তব্য করেছে, তা অভাবনীয়। ১৯৭১ সাল থেকে যদি পর্যালোচনা করা হয়, কখনোই তারা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক চায়নি। যখনই আওয়ামী লীগ-বহির্ভূত সরকার কায়েম হয়েছে, তারা বৈরী আচরণ করেছে। জিয়াউর রহমান সরকারকে বিব্রত করার জন্য কাদের সিদ্দিকী বাহিনীকে সীমান্ত আক্রমণে সহায়তা দিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তি সৃষ্টির জন্য তথাকথিত শান্তিবাহিনী তৈরি করেছে। পদ্মা নদীর পানি বণ্টনের জন্য বাংলাদেশকে জাতিসংঘে যেতে হয়েছে। তারপর তারা একটি চুক্তিতে উপনীত হতে বাধ্য হয়েছে। এরশাদ সরকার আওয়ামী লীগের মতো অত বিশ্বস্ত হতে পারেনি। পরবর্তীকালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতাসীন হওয়ার পর কারণে-অকারণে তাদের বৈরিতা অব্যাহত থেকেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর তাদের আগ্রাসনের মাত্রা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের নামে তারা এই সরকারকে বিব্রত করেছে। সীমান্তে হত্যাযজ্ঞ বাড়িয়ে বাংলাদেশের মানুষকে নিঃশেষ করেই চলেছে। নেপালের সঙ্গে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মন্দা দেখা দিয়েছে। চিকিৎসার জন্য ভিসাও দিতে তারা দ্বিধাদ্বন্দ্ব করছে। অবশেষে তাদের নগ্ন বৈরিতার প্রমাণ মিলেছে ‘পুশ ইনে’।

যখন কোনো দেশের কর্তৃপক্ষ বা নিরাপত্তা বাহিনী জোর করে একদল লোককে তাদের সীমান্ত পেরিয়ে অন্য দেশের ভূখণ্ডে ঠেলে দেয়, তখন তাকে ‘পুশ ইন’ বলে। এটি সাধারণত সেই দেশের কর্তৃপক্ষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে করা হয়। যাদের ‘পুশ ইন’ করা হয়, তাদের উপযুক্ত কাগজপত্র ব্যতিরেকেই পাঠানো হয়। ‘পুশ ইন’-এর নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য পাঁচটি—১. জোরপূর্বক স্থানান্তর; ২. যে দেশে পাঠানো হয় সেই রাষ্ট্র ও সরকারের সম্মতির অভাব; ৩. সার্বভৌমত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ; ৪. মানবাধিকার লঙ্ঘন; এবং ৫. পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে জোর করে অনেক মানুষকে ঠেলে দিচ্ছে। ভারতীয়রা কোনোরকম আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বা অবহিতকরণ ব্যতিরেকেই এই ‘পুশ ইন’ করছে। তারা বলছে সীমান্তে ঠেলে দেওয়া এসব লোকেরা বাংলাদেশি নাগরিক। অথচ তাদের মধ্যে ভারতীয় নাগরিক ও রোহিঙ্গা শরণার্থীরা রয়েছে। পুশ ইনের বিপরীত কার্যক্রম হচ্ছে পুশ আউট। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ মানবিক কারণে এবং আরো সম্পর্কের অবনতি যাতে না হয়, এ কারণে পুশ আউট করেনি।

কয়েক দিন আগে একটি জনপ্রিয় জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ সীমান্তে ‘পুশ ইন’ সম্পর্কে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশের ওপর অন্যায় চাপ সৃষ্টির জন্য নতুন কৌশল হিসাবে ‘পুশ ইন’-কে ব্যবহার করছে ভারত। বিএসএফ বিভিন্ন রাজ্য থেকে ধরে আনা বাংলাভাষীদের বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বিএসএফের তত্ত্বাবধানে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তবে স্থানীয় নাগরিক ও বিজিবির প্রতিবাদে পিছু হটতে বাধ্য হয় তারা। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, দিল্লি বাংলাদেশের ভূখণ্ডে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে নতুন এই কৌশলে পথ বেছে নিয়েছে। কূটনীতিকরা বলছেন, এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। গত ৪ মে থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ৩৭০ মানুষকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ‘পুশ ইন’ করেছে বিএসএফ। ১৫ মে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলসহ কয়েকটি সীমান্ত এলাকা দিয়ে ‘পুশ ইন’ করার সময় ৩০ জনকে আটক করেছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)। বিএসএফ অমানবিকভাবে জনবসতি নেই এমন সব জায়গায় ‘পুশ ইন’ করছে। প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, এসব লোকেরা ২০-২৫ বছর আগে ভারতে গিয়েছে। তাদের অনেকেরই ভারতের নাগরিকতার প্রমাণপত্র আছে। ভারতের পুলিশ ও বিএসএফ সেগুলো রেখে দিয়ে তাদের বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে। এর মধ্যে কিছু রোহিঙ্গাও আছে। এরা জাতিসংঘের শরণার্থী-বিষয়ক কমিশনের আইডি কার্ড বহন করছে। দিল্লি সরকার ঢাকা সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে কূটনৈতিকভাবে বা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো যোগাযোগ করেনি। ভারতের জাতীয় দৈনিক ‘দ্য হিন্দু’ জানাচ্ছে, এক মাস ধরে ভারত পূর্ব সীমান্ত দিয়ে আটক অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের ফেরত পাঠাচ্ছে। গত ৪ মে গুজরাটে আটক করা হয় এ ধরনের অভিযুক্ত ৩০০ মানুষকে। দ্য হিন্দুর তথ্য মোতাবেক এদের এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে আগরতলা পাঠানো হয় বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ করার জন্য। এদের মধ্যে ২০০ নারী ও শিশু রয়েছে। গত ২৬ এপ্রিল গুজরাট পুলিশ আহমেদাবাদ ও সুরাট থেকে এক হাজারেরও বেশি সন্দেহভাজন বাংলা ভাষাভাষী ব্যক্তিকে আটক করে। গত ১৪ মে রাজস্থানের আইন ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী যোগরাম প্যাটেল জয়পুরে বলেছেন, ‘রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বসবাসকারী এক হাজার সন্দেহভাজন বাংলাদেশি নাগরিককে চিহ্নিত করা হয়েছে।’ প্যাটেল আরো বলেছেন, ‘এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।’ এর আগে ১০ মে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা গুয়াহাটিতে বলেছেন, ‘সরকার অনুপ্রবেশ রোধে এ ব্যবস্থা নিচ্ছে।’ উল্লেখ্য, আসামে বিজেপি সরকারের শুরুতে ২০ লাখ মুসলমানকে বিদেশি বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর আগের বছরগুলোয় বিশেষ করে ২০১৯ সালে এ রকম বেশকিছু ব্যক্তিকে বাংলাদেশে জোর করে পাঠানো হয়। সে সময় দিল্লি সরকারের অনুগত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেছিলেন, তিনি কিছুই জানেন না।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ৮ মে ভারতকে এর প্রতিবাদে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। সেখানে নয়াদিল্লিকে প্রতিষ্ঠিত প্রত্যাবাসন ব্যবস্থা মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে বিভিন্ন রাজ্য থেকে তথাকথিত অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা হয়। গত ২২ এপ্রিল পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের প্রাক্কালে পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর এই প্রক্রিয়া আরো জোরদার করা হয়েছে বলে ভারতে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, বর্তমান বাংলাদেশ সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য তারা এসব কাজ করছে। একটি কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ভারত মিয়ানমারের একই পন্থায় এগুচ্ছে। মিয়ানমার যেমন নির্যাতন-নিপীড়নের পর হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে মুসলিম রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশ করাচ্ছে, ঠিক একই পন্থায় ভারত বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ করছে। ভারত অতীতে যেমন জিয়াউর রহমান সরকারকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করে ভারতের অনুগামী করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারেনি; ঠিক তেমনিভাবে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দিল্লির প্রতি অনুগত করতে ‘পুশ ইন’-এর মতো বেআইনি কার্যক্রম চালাচ্ছে। স্বস্তির কথা, প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রথম থেকেই ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের প্রতি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করছে এবং ভারসাম্যমূলক জবাব দিচ্ছে।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা প্রতিটি কেস আলাদা আলাদাভাবে নিরীক্ষণ করছি। আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, দেশের নাগরিক যদি কেউ হয়ে থাকেন, আর সেটি যদি প্রমাণিত হয়, তা হলে আমরা তাদের গ্রহণ করব। তবে এটা ফরমাল চ্যানেলে হতে হবে। এভাবে ‘পুশ ইন’ করাটা সঠিক প্রক্রিয়া নয়। বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের ‘পুশ ইন’-কে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও গভীর উদ্বেগের বিষয় বলে মনে করে। তারা মনে করে, এটি চূড়ান্তভাবে সামরিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করবে এবং জনমনে প্রবহমান ভারতবিরোধী নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিকে জোরদার করবে। এই পদক্ষেপগুলো ১৯৭৫ সালে সীমান্ত কর্তৃপক্ষের জন্য যৌথ ভারত-বাংলাদেশ নির্দেশিকা, সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং ২০১১ সালে সম্মত বিজিবি-বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তের পরিপন্থী। কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার মনে করেন, ‘এখন যুদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের পরিবেশে কোনো না কোনো বর্ডারে একটা সংঘর্ষ তারা (ভারত) লাগাতে চায়। সেই চেষ্টা তারা করছে।’ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া এবং বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে আশু করণীয় নির্ধারণ করা। প্রয়োজনে বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপন করা যেতে পারে। পর্যবেক্ষক মহল আরো মনে করে, ‘পুশ ইন’-এর মতো আরো নানা ধরনের বিষয় হয়তো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য অপেক্ষা করছে। তবে বাংলাদেশের জনগণ বিশেষ করে চব্বিশের বিপ্লবী প্রজন্ম দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পাহারাদার হিসেবে কাজ করবে যত দিন, বাংলাদেশ পরাস্ত হবে না তত দিন।

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাবেক অধ্যাপক, সরকার রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়