
বর্তমান যুগ তথ্যের বিস্ফোরণের যুগ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে একটি ঘটনা মুহূর্তেই লক্ষ-কোটি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়তে পারে। একে আমরা বলি ‘ভাইরাল হওয়া’।
অনেকেই বিশ্বাস করেন, ভাইরাল কোনো ইস্যুতে বারবার পোস্ট করলে বা আলোচনা চালিয়ে গেলে নিজেও ভাইরাল হয়ে ওঠা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই প্রক্রিয়ায় মূল আলোচ্য বিষয় বা ব্যক্তি আরও বেশি প্রচার পায়, অন্যদিকে নিজেকে প্রচার করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।
একটি সহজ উদাহরণ বিবেচনা করা যাক। ধরা যাক, এক তরুণ ইউটিউবার একটি ব্যতিক্রমী ভিডিও বানিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়ে গেল। তার ভিডিও দেখে হাজারো মানুষ মুগ্ধ হলো, এবং তার নামটি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লো। এদিকে, কিছু কন্টেন্ট ক্রিয়েটর এই ইস্যুটি নিয়ে বিশদ আলোচনা শুরু করল, নিয়মিত পোস্ট লিখতে থাকল, এমনকি তার সমালোচনা কিংবা প্রশংসা করেও নিজেদের অবস্থান প্রকাশ করল। কিন্তু দিনশেষে মানুষ কার কথা বেশি মনে রাখবে? সেই তরুণ ইউটিউবারের, নাকি তার সমালোচকদের? বাস্তবতা হলো, যত বেশি আলোচনা হবে, মূল ইউটিউবারই সবচেয়ে বেশি প্রচার পাবে, এবং তার জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে।
প্রপাগান্ডার চক্র: কে কার প্রচার করছে?
একই চিত্র দেখা যায় রাজনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুতে। ধরুন, কোনো রাজনৈতিক নেতা এক বিতর্কিত মন্তব্য করলেন, যা নিয়ে পুরো দেশ আলোড়িত। এখন যদি বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন বারবার এই মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করতে থাকে, তাকে ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা চালায় কিংবা তাকে নিচু করার জন্য প্রচার চালায়—তাহলে দিনশেষে কি তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবেন না?
এই প্রসঙ্গে ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ারের একটি উক্তি মনে পড়েঃ “আমার বিরোধীরা যত বেশি আমার বিরুদ্ধে কথা বলে, তত বেশি আমার চিন্তাগুলো মানুষের মাঝে পৌঁছে যায়।”
এই বাস্তবতাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ক্ষেত্রে আরও প্রবলভাবে কাজ করে। সামাজিক মাধ্যমের অ্যালগরিদম মূলত জনপ্রিয় এবং বিতর্কিত বিষয়গুলোকেই প্রাধান্য দেয়। আপনি যতই কোনো ইস্যুর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন না কেন, আপনি সেটাকে যত বেশি চর্চা করবেন, সেটি তত বেশি মানুষের সামনে পৌঁছে যাবে। ফলে, যার বিরুদ্ধে আপনি কথা বলছেন, সেই ব্যক্তি বা ইস্যুই আরও ভাইরাল হবে।
আত্মপ্রচারের কৌশল: কীভাবে নিজের অবস্থান তৈরি করবেন?
যদি কেউ নিজেকে ভাইরাল করতে চায়, তাহলে কেবল অন্যদের বিষয়ে পোস্ট করা যথেষ্ট নয়। বরং নিজস্ব ভাবনা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মৌলিক বিষয়বস্তু তৈরি করাই উত্তম পথ। যারা সত্যিকারের প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছেন, তারা সাধারণত নিজেদের চিন্তাভাবনা, গবেষণা এবং কর্মের মাধ্যমে পরিচিত হয়েছেন, অন্যের আলোচনায় নিজেদের পরিচয় নির্মাণ করেননি।
তাই যদি কেউ নিজেকে পরিচিত করতে চায়, তবে তাকে মৌলিক চিন্তার উপর জোর দিতে হবে, নিজের বিশেষত্ব তৈরি করতে হবে এবং স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায়, সে কেবলই অন্যের আলোচনার ছায়ায় রয়ে যাবে।
“ওই কিরে” কিংবা “এটাই বাস্তব” বলে যতই পোস্ট করেন, লাভ হবে না।
লেখা: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত