
ঝিনাইদহে বিএনপির কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করতে না পারায় রাজনৈতিক সংঘর্ষ ও খুনোখুনির ঘটনা বেড়েই চলেছে। ফলে সাধারণ কৃষক থেকে শুরু করে দলীয় কর্মীরাও মারা যাচ্ছেন।
জানা গেছে, গত ৩০ এপ্রিল সদর উপজেলার দীঘিরপাড় গ্রামে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন ও কলেজছাত্র নাহিদ হোসেন নামের দুই ব্যক্তি নিহত হন। ওই সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন গুরুতর আহত হন।
গত ১ জুন কালীগঞ্জের নাকোবাড়িয়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ইউনুস আলী ও মহব্বত আলী নামের আপন দুই ভাই নিহত হন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হন অন্তত ১২ জন।
গত ১৩ জুন শৈলকুপার রামচন্দ্রপুর এলাকায় ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর সময় কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডুকে লক্ষ্য করে একাধিক ককটেল নিক্ষেপ করে দলীয় প্রতিপক্ষরা। এরপর থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে শৈলকুপা। উপজেলাজুড়ে একের পর এক বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা চালায় বিএনপির আরেকপক্ষ।
গত ১৫ জুন শৈলকুপার কবিরপুর এলাকায় জেলা বিএনপির উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম হিটুর বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হামলা-ভাঙচুর করে বিএনপির আরেক পক্ষ। এছাড়া গত ১৬ জুন শৈলকুপার নাকোইল গ্রামে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১২ জন আহত হন।
এদিকে কালীগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে দুইজন নিহতের ঘটনায় উপজেলা কমিট বিলুপ্তসহ দুই নেতাকে বহিষ্কার করা হলেও অন্যান্য উপজেলার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে তেমন কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সূত্র বলছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে বিএনপির মনোয়ন প্রত্যাশীরা নিজেদের আধিপত্য জানান দিতে একের পর এক সংর্ঘষে জড়িয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) ও ঝিনাইদহ-৪৯ (কালীগঞ্জ ও সদরের একাংশ) আসনে বিএনপির কোন্দলে চরমে পৌঁছেছে। এছাড়াও বাকি দুইটি আসনেও একাধিক মনোয়নপ্রত্যাশী থাকায় ওই এলাকাগুলোতেও রয়েছে দলীয় কোন্দল। শিগগিরি এসব এলাকার দলীয় কোন্দল না থামলে বড় ধরণের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা রয়েছে। এত করে অনেক প্রাণহাণী ঘটতে পারে।
সুজনের জেলা কমিটির সভাপতি আমিনুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘ সতেরো বছর বিএনপি গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে রাজপথে লড়াই-সংগ্রাম করেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থাণে আওয়ামী শাসনের অবসান ঘটেছে। তবে এরপর থেকে বিএনপির দলীয় কোন্দল বেড়ে গেছে। দলীয় কোন্দলের কারণে ঝিনাইদহের অনেক এলাকায় বিএনপির এক পক্ষ আরেক পক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। এ কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। কোন্দল নিরসনে শীর্ষ নেতাদের আরো সংযত হতে হবে। নইলে এর প্রভাব আগামী নির্বাচনে পড়তে পারে।’
জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এ মজিদ বলেন, ‘অনেকে এখন বিএনপির কাঁধে ভর করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। এ বিষয়ে তৃণমূল থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সর্তক করা হয়েছে। জেলার কয়েকটি উপজেলা কমিটিতে আগে কোন্দল ছিল। তবে এসব কোন্দল নিরসন করা হয়েছে। কেন্দ্রের কঠোর নির্দেশনা পালন করতে দলীয় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করার অনুরোধ করা হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে বিএনপির খুলনা বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত সহসাংগঠনিক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তৃণমূলের কোন্দল নিরসনের জন্য কেন্দ্র থেকে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। যে সকল নেতাকর্মীরা কোন্দলে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এমনিক ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করাসহ দুই নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘অনেক এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির কাঁধে ভর করে বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্তরা কাজ করছেন। শিগগিরি তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’