Image description
এম আবদুল্লাহ মাগুরায় শিশু ধর্ষণ এবং মৃত্যুর ঘটনা রাষ্ট্র ও সরকারকে আরেকবার ঝাঁকুনি দিল। সমাজের সচেতন মানুষ ধর্ষণের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালো। দেশজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছে, হচ্ছে। একই সময় আরো অনেক জেলা থেকে নৃশংস ধর্ষণের সংবাদ আসছে, যা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধে নিদারুণ অবক্ষয় দিনে দিনে আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, তা নিয়েও জনমনে দুশ্চিন্তা ভর করছে। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করার আগে গেল সপ্তাহের উল্লেখযোগ্য ঘটনায় দৃষ্টিপাত করা যাক। ক্ষমতায় থাকতে নিজেকে ‘নিঃস্ব-রিক্ত’ জাহিরকারী পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের ১২৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬৩৫ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এ তথ্য জানানোর পাশাপাশি ইউরোপ-আমেরিকাসহ পাঁচ দেশে হাসিনা পরিবারের বিপুল সম্পদ পাওয়ার কথা জানিয়েছে। চিহ্নিত ১১টি পাচারের ঘটনায় হাসিনা পরিবারের সংশ্লিষ্টতা মিলেছে। রাজনীতিতে টাকার উৎস নিয়ে নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের মধ্যে বাহাস উপভোগ করেছে মানুষ। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যে রাজনীতির পেছনে টাকা ঢালে, তার পেছনে যে মহৎ উদ্দেশ্য থাকে না, সেটি আলোচনা-সমালোচনায় উঠে এসেছে। ছয়টি সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশ মতামতের জন্য ৩৪টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো সংস্কার যাত্রায় বড় অগ্রগতি। সপ্তাহ শেষের বিশ্বের নজরকাড়া ইভেন্ট ছিল জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস কক্সবাজারের উখিয়ায় শরণার্থীশিবিরে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে ইফতার করেছেন। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) দপ্তর শুক্রবারের অভূতপূর্ব ইফতার অনুষ্ঠানটি আরআরআরসির ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচার করে বিশ্ববাসীকে দেখার সুযোগ করে দেয়। অনুষ্ঠানে গুতেরেস রোহিঙ্গাদের প্রতি বিশেষ সহানুভূতিশীল মনোভাব ব্যক্ত করে বলেছেন, তহবিলের কাটছাঁটের ফলে নাটকীয় প্রভাব পড়বে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ওপর। এর পাশাপাশি মিয়ানমারের অবনতিশীল পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সংহতি এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রয়োজন। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সুনির্দিষ্ট সহায়তা এবং পদক্ষেপের মাধ্যমে এগিয়ে আসতে হবে। আন্তোনিও গুতেরেসের পাশে বসে বিশ্বনন্দিত নোবেল লরিয়েট প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস আশা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘রোহিঙ্গারা যেন আগামী বছর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাদের নিজ বাড়িতে ফিরে গিয়ে ঈদ উদযাপন করতে পারে, সেই লক্ষ্যে জাতিসংঘের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করছি।’ অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিবেচনায় বাংলাদেশের জন্য গলার কাঁটা হয়ে ওঠা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের এ সফর যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা সংশ্লিষ্ট ওয়াকিবহাল মহলই শুধু অনুধাবন করতে পারবে। চার দিনের সফরের দ্বিতীয় দিনে শুক্রবার কক্সবাজারে পৌঁছে প্রথমে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সর্বশেষ রিপোর্ট জেনে নেন। পরে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের সময় সেখানে শিশু, তরুণ, ইমাম ও নারী শিক্ষকদের সঙ্গে আলাদাভাবে হৃদ্যতাপূর্ণ মতবিনিময় করেন মহাসচিব। এরপর ইফতার করেন। ইফতার অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিব লম্বা পাঞ্জাবি ও পায়জামা পরে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রতি বিরল সম্মান জানান। শুধু তাই নয়, তিনি রোজাদার রোহিঙ্গা শরণার্থী মুসলমানদের সঙ্গে সংহতি জানাতে ‘রোজা’ রাখেন। বিশ্বসংঘের প্রধানের জন্য ইফতারে আলাদা কোনো জৌলুস ছিল না। সাধারণত রোহিঙ্গারা যে ধরনের ইফতারির সঙ্গে পরিচিত, সেটাই পরিবেশন করা হয়। ছিল অন্য রকম এক আন্তরিক পরিবেশ। সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে জানা যায়, রাখাইনে নিজেদের আবাসে মর্যাদার সঙ্গে ফেরা নিয়ে সংশয়, জনপ্রতি রেশন বরাদ্দের অর্থ কমে যাওয়ার মতো কষ্ট ছাপিয়ে রোহিঙ্গাদের ছুঁয়ে যায় ইফতারের আনন্দ। প্রধান উপদেষ্টা ইফতারের পর তার বক্তৃতা দিয়েছেন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায়। সে বক্তৃতায়ও ছিল গভীর ভালোবাসা ও সহমর্মিতার ছোঁয়া। ড. ইউনূস জঙ্গলের মধ্যে জাতিসংঘ মহাসচিবের উপস্থিতিকে মস্তবড় খুশির বিষয় হিসেবে বর্ণনা করেন। গুতেরেসের এ সফরের মূল লক্ষ্য ছিল বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ। পতিত শেখ হাসিনা নোবেল পাওয়ার আশায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও মানবতাবিরোধী শাসনের কারণে অচিরেই সেই আশার গুড়ে বালি পড়ে। বিশ্ব সম্প্রদায় প্রথমে রোহিঙ্গাদের সাহায্য ও সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এলেও নিষ্ঠুর কর্তৃত্ববাদী শাসনে বাংলাদেশ ইমেজ সংকটে পড়লে সাহায্যকারী দেশগুলোও ধীরে ধীরে নিজেদের গুটিয়ে নেয়। গুতেরেসের সফর ও ব্যতিক্রমী আয়োজনের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা সংকটের দিকে নতুন করে বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজরকাড়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। রোজা রাখা, ইফতারে অংশ নেওয়া ও পাঞ্জাবি-পায়জামা পরা দৃষ্টি আকর্ষণের প্রয়াস হিসেবেই দেখা যেতে পারে। এবার আশা যাক আছিয়া প্রসঙ্গে। ছোট্ট শরীরে নরপশুর লালসার একরাশ যন্ত্রণা নিয়ে টানা হাসপাতালের বিছানায় ২০৪ ঘণ্টা জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে অবশেষে হেরে যেতে হয়েছে মাগুরার নিষ্পাপ শিশু আছিয়াকে। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ ও সহৃদয় চেষ্টা, দেশবাসীর আকুতিকে ব্যর্থ করে বৃহস্পতিবার চলে যেতে হলো এই নিষ্ঠুর পৃথিবী ছেড়ে। মাগুরার এই শিশুটির মতো মানুষরূপী অমানুষদের হাতে অতীতে অসংখ্য শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, জীবন দিয়েছে; কিন্তু এ সমাজ তার প্রতিকারে ব্যর্থ হয়েছে। দৈনিক আমার দেশ-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে— পতিত ফ্যাসিবাদী শাসনের শেষ ছয় বছরে ৪৩ হাজার নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে এবং তার মধ্যে শিশুর সংখ্যা ছিল সাত হাজার। মাগুরার শিশু আছিয়ার ভাগ্য ভালোই বলতে হবে। তার জন্য পুরো দেশ শোকে মেতেছে। সামরিক হেলিকপ্টারে চড়ে ঢাকায় এসে চিকিৎসা তথা বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা ভাগ্যে জুটেছে। মানুষরূপী পশুদের প্রতি একরাশ ঘৃণা জানিয়ে চিরবিদায়ের পর সামরিক কপ্টারে দামি কফিনে মুড়ে চিরবিদায় হয়েছে। এমন ভাগ্য কজনের হয়! কোটি মানুষের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসাকে সঙ্গী করে অন্তিমশয্যার পর নিশ্চয়ই জান্নাতের পাখি হয়ে উড়বে আছিয়া। আছিয়া আরো ভাগ্যবতী এ কারণে যে, তাকে নিয়ে যখন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহর-ক্যাম্পাস উত্তাল, তখনো কিন্তু তার বয়সি অনেক শিশু নরপশুদের লালসার শিকার হয়েছে। তাদের কেউই আছিয়ার মর্যাদা পায়নি। জাতীয়-আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতে পারেনি। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় সাড়ে ৭ বছর বয়সি এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে জহুরুল ইসলাম (২২) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একই দিন সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে সাত বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলায় ১৪ বছরের এক কিশোরকে আসামি করা হয়েছে। রংপুরের তারাগঞ্জে এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে সাগর ইসলাম নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সংবাদপত্রে সংবাদ হলেও এদের কারো নির্যাতনের ঘটনাই প্রতিবাদীদের আছিয়ার মতো স্পর্শ করতে পারেনি। গত পক্ষকালজুড়ে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার পাচ্ছে। এ অর্থ এই নয় যে পক্ষকাল আগে ধর্ষণ-নির্যাতন বা হত্যার ঘটনা ঘটেনি। জাতি হিসেবে আবেগী ও হুজুগী হিসেবে আমাদের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। কখন যে আমাদের আবেগ উথলে ওঠে, তা আন্দাজ করা কঠিন। বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনের শেষ ছয় বছরে সাত হাজার শিশুসহ ৪৩ হাজার ধর্ষণের ঘটনায় কতটিতে আমরা প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছি, সে প্রশ্ন এখন হয়তো অবান্তর ঠেকবে। সেসব ঘটনায় সরাসরি শাসকদল আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের ক্যাডাররা জড়িত ছিল বলে প্রতিবাদ করতে পরিণাম বিবেচনায় নিয়ে দশবার ভাবতে হয়েছে। ৫ আগস্টের বিপ্লব-উত্তর নতুন স্বাধীনতা আমাদের প্রতিবাদের ভাষাকে অবারিত করেছে। সে সুযোগে আমরা সীমালঙ্গনও করছি। পনেরো বছরে গণভবন ও সেটির বাসিন্দার নাম উচ্চারণের আগে ডানে-বাঁয়ে দেখেছি, কেউ শুনে যাচ্ছে কি না। সতর্ক থেকেছি আড়ি পাতছে কি না। ফ্যাসিবাদের রোষানলে পড়ার আতঙ্কে কুঁকড়ে গেছি। ‘বোবার কোনো শত্রু নেই’ থিওরিতে অভ্যস্ত ছিলাম। আর এখন কথায় কথায় ‘যমুনা’র উদ্দেশে তেড়ে যাচ্ছি। কারণ ‘যমুনা’র বাসিন্দা ড. ইউনূস বাকস্বাধীনতা, প্রতিবাদের অধিকার, তাকে গালি দেওয়ার স্বাধীনতা কবুল করেছেন, নির্বিঘ্ন করেছেন। মনখুলে সমালোচনা করতে বলেছেন। প্রতিবাদ-বিক্ষোভকে বন্দুকের ভাষায় প্রতিহত করছেন না। কর্মসূচি ঘোষণার পর আগের রাতে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন না। তাই তো এখন পুলিশ কর্তাকে প্রকাশ্য দিবালোকে শত শত ক্যামেরার সামনে বেদম কিল-ঘুষি লাথি মেরেও বাসায় নিরাপদে-নির্ভয়ে ঘুমানো যায়, আলো-বাতাসে দিব্যি ঘুরে বেড়ানো যায়। অকারণে পুলিশ কর্মকর্তাকে ধাক্কা দিয়ে সঙ্গে হুমকিও দেওয়া যায়Ñ ‘খবরদার টাচ করবি না’। এমন উসকানিমূলক ঔদ্ধত্য হজম করে গো-বেচারার মতো চলে যেতে হয় পুলিশ কর্তাকে। এটাই হালের স্বাধীনতা চর্চার নমুনা! এটাই নতুন বাংলাদেশ! পতিত স্বৈরশাসনে সময়ে সময়ে ধর্ষণের মহামারি রূপ দেখেছে বাংলাদেশ। ২০২০ সালে দিকে দিকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটতে থাকলে সারাদেশ বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে একজন গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ওই সময়ে আরো বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ থেকে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করা হয়। এমনকি দাবি ওঠে, ধর্ষণের মতো নিষ্ঠুর ঘটনা বন্ধ করতে হলে ধর্ষণকারীদের শাস্তি হিসেবে ‘ক্রসফায়ার’ দিতে হবেÑ অর্থাৎ তাকে বিনা বিচারে হত্যা করতে হবেÑ যাতে এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর প্রতি ভয় তৈরি হয়। পরিস্থিতি সামলাতে আইন সংশোধন করে সরকার। ওই বছরের ১২ অক্টোবর বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান যোগ করে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে। চাপে পড়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও আরেকবার আইন সংশোধন করছে। এই সংশোধন সমাধান হবে? ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান আছে বিশ্বের এমন দেশের সংখ্যা মাত্র সাতটি। বাংলাদেশ সপ্তম দেশ, যেখানে ধর্ষণের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান আছে। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি নিয়ে বিতর্ক হয়েছে বিভিন্ন সময়। ২০২০ সালে যখন শাস্তি বাড়িয়ে যাবজ্জীবন থেকে মৃত্যুদণ্ড করা হয়, তখনো ভিন্নমত ছিল। মূল কথা হচ্ছেÑ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। সেটা দেখা যায়নি কোনো সরকারের সময়েই। আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অনেক ক্ষেত্রে জামিন পেয়ে যায় অভিযুক্ত। কিছুদিন পরই তারা জেল থেকে বের হয়ে যায়। আশা করা হয়েছিল, শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হলে পুরোপুরি বন্ধ না হলেও ধর্ষণ বা নিপীড়নের মাত্রাটা অনেক কমে আসবে। কিন্তু সে আশা চার বছরেও পূরণ হয়নি। আইনের প্রয়োগ বা বাস্তবায়ন এবং নির্যাতিত নারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন অনেকে। অস্বীকার করার উপায় নেই, এসব ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। ধর্ষণের অভিযোগ বিচারের পর্যায়ে যেতেই অনেক সময় লেগে যায়। আবার নিম্ন আদালতে বিচার হওয়ার পর উচ্চ আদালতে মামলার জটে পড়ে যায়। নির্যাতিত নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে আনা এবং রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে থেকে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াÑ এ বিষয়গুলোয় কার্যকর পদক্ষেপে জোর দেওয়া বাঞ্ছনীয় । বর্তমান সরকার পথেই হাঁটতে চাইছে। তদন্ত ও বিচার সম্পন্ন করার সময়সীমা কমিয়ে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অচিরেই অধ্যাদেশের মাধ্যমে তা বাস্তবায়নের কথা জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুর। যারা ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনকে ইস্যু করে পানি ঘোলা করতে চাইছে, সরকারকে নাস্তানাবুদ করতে উদ্যত, তাদের কাছে কিছু প্রশ্ন রাখাই যায়। সাম্প্রতিক সময়ে যতগুলো নারী-শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, তার কয়টি আইনশৃঙ্খলাজনিত? আছিয়ার ঘটনা কি আইনশৃঙ্খলাজনিত ব্যর্থতার মধ্যে পড়ে? অন্যগুলো? স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পদত্যাগ করলে ঘরে-পরিবারে যে পৈশাচিক লালসা ও বর্বরতার ছড়াছড়ি, তার প্রতিকার হবে? এখন কি ক্ষমতার ছত্রছায়ায় ধর্ষণের সেঞ্চুরি হচ্ছে? শাসক দলের পরিচয়ে ধর্ষক আশকারা পাচ্ছে? কোনো উপদেষ্টার আত্মীয়স্বজন কি ধর্ষণ-নির্যাতনে জড়াচ্ছে? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি হ্যাঁ-সূচক না হয়, তাহলে প্রতিবাদের ভাষা ও ধরন কেমন হওয়া উচিত? সামাজিক, ধর্মীয় ও নৈতিক অবক্ষয়জনিত নৃশসংতার আংশিক দায় অবশ্যই সরকারের। কিন্তু পুরো দায় যখন সরকারের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়, তখন বস্তুত প্রকৃত রোগকে আড়াল করে ভুল ডায়াগনসিসে ভ্রান্ত চিকিৎসার পথে পা বাড়ানো হয়, যা মোটেই কাম্য নয়। ধর্মীয় অনুশাসন-বিবর্জিত সেক্যুলার সমাজ প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা এ দায় এড়াতে পারে না। নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধবিধ্বংসী উপাদানগুলো অপসারণ এখন সময়ের দাবি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো যৌন সুড়সুড়ির কনটেন্ট অপসারণ ও তার উৎস বন্ধ করারও কোনো বিকল্প নেই। লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট