Image description

এম আবদুল্লাহ

 

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহটি ছিল বেশ ঘটনাবহুল। বাংলাদেশের আগামীর রাজনীতির জন্যও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বক্তব্য ঘিরে রাজনীতিতে সরবে-নীরবে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে।

রাজনীতিতে আলোড়নের পাশাপাশি ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোকে সম্ভবত কিছুটা ঝাঁকুনিও দিয়েছে রাওয়া ক্লাবে প্রধান সেনাপতির হুঁশিয়ারিমূলক বক্তব্য। এরই মধ্যে বহু বছর পর বিএনপির বর্ধিত সভা সংসদ ভবনের এলডি হল চত্বরে জমকালো আয়োজনে সম্পন্ন হয়েছে।

সে সভায় যুক্তরাজ্যে চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সপ্রতিভ ভার্চুয়াল উপস্থিতি এবং দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দলটিতে নতুন সঞ্জীবনী শক্তি জুগিয়েছে।

আরেকটি আলোচিত বিষয় ছিল অন্তর্বর্তী সরকার থেকে জুলাই আন্দোলনের নেতা নাহিদ ইসলামের পদত্যাগ। অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে তিন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ছেড়ে রাজনীতির বন্ধুর পথ বেছে নিয়েছেন। তার এ সিদ্ধান্ত বিপুলভাবে অভিনন্দিত হতে দেখা গেছে।

তার নেতৃত্বেই মাসের শেষ দিনে দেশের রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিক অভিষেক হয়েছে বাংলাদেশ নাগরিক পার্টি বা এনসিপির। তুমুল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দলটির নেতৃত্বে আসীন হয়েছেন পদত্যাগী উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতা আখতার হোসেনসহ জুলাই আন্দোলনের নায়করা। এর আগে নবগঠিত এনসিপির ছাত্রফ্রন্ট হিসেবে পুনর্গঠিত হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মধুর ক্যান্টিনে এ নিয়ে খানিকটা মারামারিও হয়েছে।

এ ছাড়া অপারেশন ডেভিল হান্ট চলমান রয়েছে। ১২ হাজারের বেশি ‘ডেভিলকে’ চৌদ্দ শিকে বন্দি করা হয়েছে। কক্সবাজার বিমানঘাঁটি ঘিরে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় এক যুবকের মৃত্যু এবং অপারেশন ডেভিল হান্টের মধ্যেই ঢাকায় অনেকগুলো চাঞ্চল্যকর ছিনতাই ও গণপিটুনির ঘটনা সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলেছে।

এদিকে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনে তিনটি ভুয়া নির্বাচনের কারিগর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ গেল সপ্তাহের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। জনগণের ভোটাধিকার হরণে শেখ হাসিনার এসব বিশ্বস্ত দোসরের কাউকে বাধ্যতামূলক অবসর, আবার অনেককে ওএসডি করা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে দায়িত্বরত ছিলেন।

ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সংঘটিত বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদলের পর মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা আরো তীব্র হয়েছে। জনগণ আর গতানুগতিক ধারার পুরোনো রাজনীতি দেখতে চায় না। পুরোনো দলগুলোর কাছেও মানুষ নতুন বাস্তবতায় পরিশীলিত আচরণ প্রত্যাশা করছে। ছাত্র-তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ সেই আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন হিসেবে দেখা যেতে পারে।

শুক্রবার যাত্রা করা নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির সংগঠকরা বয়সে একেবারেই তরুণ। নাহিদ ইসলাম বাংলাদেশের ইতিহাসে কনিষ্ঠতম দলীয় প্রধান হয়েছেন। বয়স ২৬ বছর। সরকারের কেবিনেটেও তিনি ছিলেন সবচেয়ে কমবয়সি দুই সদস্যের একজন। বর্তমানে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধানদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে কমবয়সি। যতটা জানা যায়, ১৯৭২ সালের জাসদ গঠনের সময় আ স ম আবদুর রবের বয়স ছিল ২৭।

১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান বিএনপির আহ্বায়ক হন ৪২ বছর বয়সে। আর ১৯৮৬ সালের জানুয়ারিতে ৫৬ বছর বয়সে জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করে প্রধানের দায়িত্ব নেন লে. জে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দুজনই ক্ষমতায় থেকেই দল গঠন করেন। সফল রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমান শাহাদাতবরণের পর অনেকটা বাধ্য হয়ে গৃহবধূ খালেদা জিয়া দলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন ৩৬ বছর বয়সে। তারেক রহমান দলীয় প্রধান হয়েছেন ২০১৮ সালে ৫০ পেরিয়ে।

নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির অভিযাত্রার ইতিবাচক দিক হলো, আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ইতোমধ্যে নিজেকে নির্লোভ, নিরহংকার ও সাহসী নেতা হিসেবে তুলে ধরতে পেরেছেন। মাত্র ১০ বছর আগে ২০১৪ সালে মাধ্যমিকের গণ্ডি অতিক্রম করেন কিশোর নাহিদ। সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন।

একই বিভাগে স্নাতকোত্তর। এখনো তিনি শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাড়াও পাঠচক্রে ছিলেন। ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলন থেকেই তার পরিচিতি। ২০২৪ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলনে এক নম্বর সমন্বয়ক হিসেবে স্থান করে নেন।

জুলাই আন্দোলনকালে তুলে নিয়ে আয়নাঘরে রেখে নির্মম নির্যাতন চালানো হয় তার ওপর। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্বে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপের আহ্বান প্রথম নাহিদ ইসলামের মুখে উচ্চারিত হয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শহীদ মিনারে হাসিনা পতনের এক দফার ঘোষণা দেওয়ার মধ্য দিয়ে সতীর্থদের কাছে গণঅভ্যুত্থানের আইকন হিসেবে গণ্য হন। সহযোদ্ধারা বলছেন, সাংগঠনিক দক্ষতা, রাজনৈতিক বোঝাপড়া এবং জনগণের সঙ্গে ডিলিংসটা নাহিদ দক্ষতার সঙ্গে করতে পারেন বলেই তাকে দলের প্রধান হিসেবে বেচে নেওয়া হয়েছে। উপদেষ্টা পদ ছেড়ে আসার সময় তিনি বলেছেন, ক্ষমতা থেকে বের হয়ে তিনি রাজপথে মানুষের সঙ্গে থাকতে চান। একজন নেতা হিসেবে মানুষের সঙ্গে থাকার যে প্রতিশ্রুতি, তা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন নতুন দলের সহযোদ্ধারা।

উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনের ছয় মাসে তিনি ছিলেন মৃদুভাষী। তথ্য ও সম্প্রচার এবং আইসিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে ছয় মাস দায়িত্ব পালন করেও ক্লিন ইমেজ নিয়ে হাসিমুখে কেবিনেট ছেড়ে আসতে পেরেছেন নাহিদ ইসলাম।

যার উদাহরণ বিরল। রাষ্ট্রীয় টিভির সংবাদ বেসরকারি টিভিতে প্রচারের বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়া, বিটিভিসহ সরকারি প্রচারমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে চলতে দেওয়া, বিটিভির ডেডিকেটেড নিউজ চ্যানেল চালু, কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে সাংবাদিক সন্তানদের জন্য মেধাবৃত্তি চালু, প্রবীণ সাংবাদিকদের মাসিক ভাতার আওতায় আনার উদ্যোগ, সৎ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা উৎসাহিত করতে ফেলোশিপ চালু, সংবাদমাধ্যমের সত্যিকারের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা নাহিদ ইসলামের অন্যতম সাফল্য। সংবাদপত্রে সরকারি ক্রোড়পত্র প্রকাশে অবৈধ অর্থের লেনদেন ও কেলেঙ্কারি তার হাত দিয়ে বন্ধ হয়েছে। সাংবাদিকদের জন্য নতুন অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা জারি করেছেন। সাইবার নিরাপত্তার নিবর্তনমূলক আইন সংশোধন করে সাংবাদিকদের স্বস্তি দিয়েছেন।

‘ক্ষমতা না জনতা-জনতা, জনতা’ এই স্লোগানটি মানিক মিয়া এভিনিউর মঞ্চেই শুধু উচ্চারণ করেননি, নিজে ক্ষমতা ছেড়ে জনতার কাতারে এসে প্রমাণ করেছেন নাহিদ ইসলাম। পদ নিয়ে কাড়াকাড়ি, খুনোখুনির এ যুগে তিনি আহ্বায়ক হিসেবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। সদস্য সচিবসহ অন্যান্য পদ নিয়ে তীব্র মতবিরোধের আভাস পাওয়া গেলেও শেষ পর্যন্ত ঐকমত্যের ভিত্তিতেই দলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করতে পেরেছেন।

রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউর মতো বিশাল ভেন্যুতে মোটামুটি ভালো জনসমাগম ঘটিয়ে যাত্রা শুরু করতে পারাটাও নতুন দলের প্রাথমিক সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তেমন কোনো অঘটন বা বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সংবাদ আসেনি। টগবগে তরুণরা সূচনাটা যে সুশৃঙ্খল করতে পেরেছে, তা অবশ্যই প্রশংসনীয়।

আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে যোগদানকারী ছাত্র-জনতার অনেকে মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছেন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলদারির গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে ভিন্নধারার জনকল্যাণমুখী রাজনৈতিক দলের প্রতি তাদের আগ্রহ আছে। উত্তরাধিকার ও পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির পরিবর্তন নিয়েও অনেকে কথা বলেছেন।

এমন মতামত নতুন দলের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক। যদিও দ্বি-ধারার ক্ষমতার রাজনীতি থেকে বাংলাদেশ কতটা বের হতে পারবে বা আদৌ পারবে কি না, সংশয় এখনো প্রবল। প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং পতিত প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ছাড়াও গণঅভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশে জামায়াতসহ ইসলামপন্থি রাজনীতির নব-উত্থান নতুন দলের ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ।

নতুন দলটির গোড়াপত্তনে তেমন বড় কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরকার অনুভূতি যাই থাকুক, প্রকাশ্যে স্বাগত জানিয়েছে বা জানাতে হয়েছে। এক মাস আগেও ছাত্রদের দল নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল বিএনপি। সেখান থেকে সরে এসে এখন দৃশ্যত স্বাগত জানাচ্ছে। ভবিষ্যৎ নির্বাচনী রাজনীতির সমীকরণ থেকেই হয়তো ছাত্রনেতৃত্বের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করতে হচ্ছে। আর জামায়াত শুরু থেকেই ছাত্রদের দলকে কাছে রাখতে চাইছে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার মানিক মিয়া এভিনিউর সমাবেশে উপস্থিত হয়ে নতুন দলের প্রতি তাদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বার্তা দিয়েছেন।

এনসিপির মিডিয়া-ভাগ্যও প্রসন্ন। প্রায় সব গণমাধ্যমের আনুকূল্য পেয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি। এটা নতুন দলের জন্য বড় প্রাপ্তি। বাংলাদেশে আর কোনো রাজনৈতিক দলের সূচনা-পর্বে এতটা মিডিয়া কভারেজ পেয়েছে বলে মনে হয় না। শুক্রবার আত্মপ্রকাশের খবরটি দিনভর ইলেকট্রনিক মিডিয়া দখলে রেখেছিল। শনিবারের পত্রিকায় ইতিবাচক শিরোনামে শীর্ষ সংবাদের মর্যাদাই শুধু পায়নি, বেশিরভাগ পত্রিকা একাধিক সাইড-স্টোরি করেছে। লোকসমাগমের ছবি প্রকাশের ক্ষেত্রেও সংবাদপত্রগুলো নতুন দলের প্রতি উদারতা দেখিয়েছে।

নাহিদ-আখতারের নেতৃত্বাধীন নতুন দলের সামনে চ্যালেঞ্জও কম নয়। জুলাই বিপ্লবের তরুণ নেতারা বলেছেন, পুরোনো রাজনীতি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে। নতুন দল জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সংগতি রেখে পরিচালিত হবে। দেশকে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় এগিয়ে নিতে পুরোনোর অভিজ্ঞতা ও তরুণদের উদ্যমের সমন্বয় থাকবে। নীতি, আদর্শ ও কর্মসূচির অভিনবত্বে রাজনীতিতে নতুনত্বের ছাপ রাখতে সক্ষম হবে।

বাংলাদেশের বাস্তবতায় নতুন দলের সামনে যে চ্যালেঞ্জ থাকে, এনসিপির ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না। প্রতিষ্ঠিত ও পরীক্ষিত দলগুলোর বিকল্প হিসেবে এনসিপিকে কেন বেছে নেবে, পরিষ্কারভাবে জানান দিতে হবে। ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকার বিপ্লবী ছাত্রনেতাদের সমর্থিত। ফলে সরকারের ব্যর্থতার দায়ভার অনেকটাই নতুন দলের ওপরও বর্তাবে।

বিশেষ করে সরকারের পক্ষে বা বিপক্ষে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে নাহিদ-আখতারের দলকে দোটানায় পড়তে হতে পারে। ঘোষিত কর্মসূচি বা জন-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নে এনসিপি প্রেশার ফোর্স হিসেবে কাজ করতে গেলে সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া ও প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, তা-ও দেখার বিষয়।

গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় জন্ম হওয়ায় জুলাই শহীদদের পরিবার ও অঙ্গ হারানো হাজারো ছাত্র-জনতার পাশে দাঁড়ানোও নতুন দলের অন্যতম দায়িত্ব হবে। মানিক মিয়া এভিনিউতে যে ঘোষণা পাঠ করা হয়েছে, তার অনেকগুলো ইস্যুতেই প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের কঠোর ভিন্নমত রয়েছে। নতুন প্রজাতন্ত্র, নতুন সংবিধান, গণপরিষদ গঠন, নয়া বন্দোবস্তের মতো বিষয়গুলো বাস্তবায়ন অতটা সহজ না-ও হতে পারে।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দল পরিচালনায় অর্থের জোগান ও স্বচ্ছতা এক বড় চ্যালেঞ্জ। নতুন দলের দিকে কড়া নজর থাকবে পুরোনো দল ও রাজনীতির বিভিন্ন নিয়ামক শক্তিগুলোর। আবার তরুণদের মধ্যে ক্ষমতাচর্চা ও আধিপত্য বিস্তারের একধরনের নেশা থাকে। দুর্বিনীত ও বেপরোয়া আচরণও তারুণ্যের সহজাত। জাতীয় নাগরিক পার্টির বেশিরভাগ সদস্য ও নেতা যেহেতু তরুণ, তারা মাঠপর্যায়ে কতটা সংযত থাকবে, সামাজিক আচরণে কতখানি সংযমী ও জনবান্ধব হবে, সেটাও পর্যবেক্ষণ করবে প্রতিপক্ষ। ব্যত্যয় ঘটলে তা নতুন দলের ভাবমূর্তির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

নির্বাচন কমিশনের শর্ত পূরণ করে দলের নিবন্ধন গ্রহণ, আগামী নির্বাচনের জন্য দলের যোগ্য প্রার্থী বাছাই এবং সেসব প্রার্থীর জনভিত্তির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। নির্বাচনে প্রয়োজনীয় অর্থের প্রবাহ নিয়েও সংকটের মুখে পড়তে হতে পারে নতুন দলকে। ধারণা করি, জাতীয় নাগরিক পার্টি আগামী নির্বাচন বা নির্বাচনোত্তর রাজনীতিতে ‘ব্যালান্স অব পাওয়ার’ হতে পারলেই সম্ভব খুশি হবে।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট