Image description
বর্তমান পরিস্থিতি ও জামায়াতের স্ট্রাটেজি
সাকিব হেলাল নির্বাচন ৬ মাস বা ১ বছর বা ২ বছর পরে যখনই হোক না কেন - রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে সংলাপ এখনই শুরু হতে পারে। বিশেষকরে বিএনপি, জামায়াত ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা - এই তিন পক্ষের মাঝে মিনিমাম কিছু আন্ডারস্টেন্ডিং অত্যন্ত জরুরী। এই তিন পক্ষের মাঝে অনৈক্য ও রেষারেষি মারাত্বক পরিণতি বয়ে আনবে, বিপ্লবটাই বেহাত হয়ে যেতে পারে। বিশেষকরে জামায়াত যেন কোনভাবেই অন্য দুইপক্ষের সাথে অহেতুক দূরত্ব সৃষ্টি না করে।মিশর ও তিউনিশিয়া থেকে শিক্ষা নিতে হবে যাতে জামায়াত ওভার-গেম খেলতে গিয়ে সবার থেকে আইসোলেটেড হয়ে না যায়। বাংলাদেশ সহ মুসলিম বিশ্বের বাস্তবতা হলো ইসলামী আন্দোলনগুলোর প্রকৃত বন্ধু আসলে কেউ নয়- নিজনিজ দেশের এস্টাব্লিশমেন্ট, আর্মি, সিআইএ/মোসাদ ইত্যাদির কারসাজিতে সবদেশেই অন্যান্য সবাই ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্বে দ্রুত এক হয়ে যায়। ইসলামী আন্দোলনগুলো আইসোলেটেড হতে বেশি সময় লাগেনা। এজন্য ইসলামী আন্দোলনগুলোর অপরিপক্কতাই বেশি দায়ী। বিপ্লবের পরপর তাদেরকে নিয়ে এস্টাব্লিশমেন্ট বিশেষকরে আর্মি ও সিআইএ একধরণের ওভার-গেম খেলে, তাদেরকে দৃষ্টিকাড়া লাইমলাইট দিয়ে অন্যদের মনে অবিশ্বাস, হিংসা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করে, একপর্যায়ে অন্যরা সবাই হিংসার কারণে হোক বা অন্য কারণে হোক তাদের বিরুদ্বে ঐক্যবদ্ব হয়ে যায়। তখন ইসলামী আন্দোলন আইসোলেটেড হয়ে দুর্বল হয়ে যায়, আবার বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। মিশর ও তিউনিশিয়া উভয়ক্ষেত্রেই ইসলামী আন্দোলন যে ভুল করেছে তা হলো ছাত্র-জনতার সাথে ঐক্য ধরে রাখার চাইতে এস্টাব্লিশমেন্ট তথা আর্মির প্রতি ঝুকে গেছে, একপর্যায়ে অন্যান্য বিপ্লবী শক্তির সাথে তাদের চরম অবিশ্বাস ও দূরত্ব তৈরি হয়েছে, আর তখন আর্মি তাদেরকে ছুড়ে ফেলেছে। আর্মি এবং সিআইএ এরকম ডিভাইড এন্ড রুল সবদেশেই খেলেছে- একেকসময়ে একেক পক্ষকে ব্যবহার করেছে। তবে প্রথমে ইসলামী আন্দোলনগুলোকে বেছে নিয়েছে কারণ শুরুতে তাদের ইমেজ ও সংগঠন ব্যবহার করা দরকার ছিল। তাই আর্মি, এস্টাব্লিশমেন্ট, বিদেশী শক্তি তথা ইউএন, আমেরিকা, ইউরোপ ইত্যাদি এদের কাউকেই বিশ্বাস করা যাবেনা। এদের প্রত্যেকের নিজনিজ এজেন্ডা আছে, নিজস্ব এজেন্ডার প্রয়োজনেই তারা জামায়াতকে ব্যবহার করবে, লাইমলাইট ও সুযোগ সুবিধা দিবে, যার মাধ্যমে অন্যদের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি করে আইসোলেটেড করে ফেলবে। জামায়াত হয়তো মনে করছে এখানে দুই পক্ষেরই স্বার্থ আছে- উভয় উভয়কে ব্যবহার করবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এস্টাব্লিশমেন্ট ও আর্মিকে ব্যবহার করা বা তাদের সাথে খেলার মতো যোগ্যতা বা পরিপক্কতা ইসলামী আন্দোলনগুলোর নাই। তারা এস্টাব্লিশমেন্টকে ব্যবহার করতে গিয়ে বরং এস্টাব্লিশমেন্ট দ্বারা ব্যবহৃত হবার সম্ভাবনা বেশি- যেটা ১/১১ এর সময়েও বাংলাদেশে জামায়াতের ক্ষেত্রে ঘটেছিল। কারণ জামায়াত রাজনৈতিক শক্তিগুলোর চাইতে আর্মিকে বেশি ট্রাস্ট করেছিল কিন্তু আর্মির গোয়েন্দাদের প্রাতিষ্ঠানিক প্রফেশনালিজম এর সাথে জামায়াতের সাংগঠনিক যোগ্যতার তুলনাই হয়না। এস্টাব্লিশমেন্ট, আর্মি ও বিদেশিদের এজেন্ডার সাথে জামায়াতের আদর্শের কখনো মিল হবেনা, আবার সেসব শক্তির চালাকির সাথে জামায়াত বা কোন ইসলামী আন্দোলনই এখনো পেরে উঠবেনা। তাই তাদের সাথে সম্পর্ক রাখতে হলে জামায়াত যতটুকু পাবে তার চাইতে অনেক বেশি দিতে হবে। কারণ এগুলো কেবল ঘরোয়া দেশি রাজনীতির বিষয় না, বরং আন্তর্জাতিক জিওপলিটিক্যাল বড় বড় ইস্যু এবং শক্তি এর সাথে জড়িত। তাছাড়া আর্মির প্রতি মানুষের পজিটিভ ধারণা খুবই অল্প সময় টিকে থাকে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিশর ইত্যাদি সব দেশেই দেখা গেছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থেকে নিস্তার পেতে আর্মিকে প্রাথমিক পর্যায়ে মানুষ ওয়েলকাম করলেও অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মানুষ সেনাশাসনের বিরোধী হয়ে যায়, একই সাথে যারা আর্মির কাছাকাছি ছিল জনগণ তাদের বিরুদ্বেও চলে যায়। পাকিস্তানে জেনারেল জিয়াউল হকের সাথে সখ্যতার জন্য পাকিস্তান জামায়াতকে এখনো নিন্দা শুনতে হয়, তেমনি যারা পারভেজ মুশাররফের সাথে সখ্যতা করেছিল তারা এখন পাকিস্তানে অপাংতেয়। অথচ এক সময় জেনারেল জিয়াউল হক ও জেনারেল পারভেজ মুশাররফ উভয়কেই পাকিস্তানী জনগণ ওয়েলকাম করেছিল। আর্মির সাথে অতিবেশী সখ্যতা কোন রাজনৈতিক দলের জন্যই দীর্ঘমেয়াদে ভালো হয়নি। তাই জামায়াতের উচিত আর্মি তথা বিদেশিদের প্রতি বেশি না ঝুঁকে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তি ও ছাত্র জনতার সাথে সম্পর্ক মজবুত করার দিকে বেশি নজর দেয়া। অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও ছাত্র জনতার সাথে সম্পর্ক ঠিক রেখে আর্মি/এস্টাব্লিশমেন্ট/বিদেশী শক্তির সাথে যতটুকু ভালো সম্পর্ক করা যায় ততটুকু করবে, কিন্তু যদি দুইটার মাঝে কোন কনফ্লিক্ট সৃষ্টি হয় বা দুই শক্তির মাঝে কোন একটিকে প্রাধান্য দিতে হয় তাহলে অবশ্যই দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও ছাত্র জনতার সাথে সম্পর্ককেই অধিকতর বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। জামায়াতকে কোনভাবেই রাজনৈতিকভাবে আইসোলেটেড হওয়া যাবেনা। এই মুহূর্তে অন্য সবাইকে নিয়েই পথ চলতে হবে, অন্যদের তুলনায় অতিবেশী অগ্রসর হয়ে একাকী হাটা যাবেনা।