Image description
হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু
‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল-হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়াল-মুলক, লা শারীকা লাক’- অর্থাৎ উপস্থিত ‘হে আমার আল্লাহ, উপস্থিত। উপস্থিত তোমার কোনো অংশীদার নেই, উপস্থিত। নিশ্চয় সকল প্রশংসা ও নিয়ামত তোমার এবং রাজত্ব, তোমার কোনো অংশীদার নেই’- এই তালবিয়াহ ধ্বনি উচ্চারণ ও মহান আল্লাহ তা‘আলার এককত্ব ও সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করে ২০ লক্ষাধিক হজযাত্রী আজ মিনা প্রান্তরে উপস্থিত হয়েছেন। শ্বেতশুভ্র পোশাকে আবৃত এসব হজযাত্রীর মিনায় উপস্থিতির মাধ্যমে তাদের ৫ দিনের তারবিয়াহ বা হজের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সুন্নতি পদ্ধতি অনুযায়ী আজ সূর্যোদয়ের পর হজযাত্রীদের মিনায় নিয়ে আসার কথা থাকলেও পথের যানজট এড়াতে স্থানীয় মোয়াল্লিমরা গতরাত থেকেই তাদের মিনায় নিয়ে আসা শুরু করেন। হজযাত্রীদের পরিবহনে নির্ধারিত বাসগুলোকে একাধিক ট্রিপ দিতে হয় বিধায় আগের রাত থেকেই পরিবহন শুরু হয়। বিশ্বের বৃহত্তম তাঁবুর শহর মিনায় আজ হজযাত্রীরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন স্ব স্ব তাঁবুতে। তবে যারা মসজিদে খায়েফ বা কুয়েতী মসজিদের আশপাশে অবস্থান করছেন তারা সেখানে গিয়ে জামাতেও শরিক হতে পারবেন। হজযাত্রীরা ১০, ১১ ও ১২ যিলহজ কোন পথে জামারাতে পাথর নিক্ষেপ করতে যাবেন তার পথনির্দেশিকা অনুসন্ধান ছাড়াও পাশেই অবস্থিত মোয়াইসমে কোরবানীর স্থান পরিদর্শন করতে পারবেন ২৫ নং সড়ক ধরে এগিয়ে গেলেই। আজ এশা নামাযের পর থেকেই হজযাত্রীরা তাদের কাক্সিক্ষত আরাফাতের ময়দানে যাবার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করবেন। মোয়াল্লিমরা সাধারণত রাত ১০টার পর থেকে যে কোনো সময় তাদের মিনা তাঁবু থেকে আরাফাতে নিয়ে যাবেন। সেখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে সুসজ্জিত তাঁবু। মূল হজ হবে সেখানেই। হজযাত্রীরা আরাফাতের ময়দানে তাদের জন্য নির্ধারিত তাঁবুতে ৯ জিলহজ তথা শুক্রবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করবেন। এখানে তাদের ফজর ছাড়াও যোহর ও আসর নামাজ আদায় করতে হবে। এ বছর পবিত্র হজের মূল খুতবা দেবেন মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়খ মাহের বিন হামাদ আল-মুআইকিলি। আগামীকাল মসজিদে নামিরা থেকে ২০ লাখেরও বেশি হাজির উদ্দেশে তিনি হজের খুতবা পেশ করবেন। ২০টি ভাষায় তা স¤প্রচার করা হবে। এসব কাজের তত্ত¡াবধান করছে মক্কা ও মদিনার পবিত্র দুই মসজিদের তত্ত¡াবধানকারী সাধারণ কর্তৃপক্ষ। এবারের পবিত্র হজের খুতবা সরাসরি অনুবাদ করা হবে বিশ্বের ২০টি ভাষায়। এর মধ্যে অন্যতম হলো বাংলা। আর এ অনুবাদ খুতবা চলাকালীন বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের অন্তত একশ’ কোটি মানুষ সরাসরি শুনতে পাবে। মক্কা ও মদিনার ২ পবিত্র মসজিদের নির্বাহী প্রধান শায়খ আব্দুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল সুদাইস খুতবার অনুবাদ প্রজেক্ট উদ্বোধনকালে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজের নামে এই প্রজেক্টের নামকরণ করা হয়েছে। আশা করা যায় এ প্রজেক্টের মাধ্যমে ধর্মীয় সহনশীলতা, সংযম ও শান্তির বার্তা তুলে ধরা হবে। এ বছর হজের খুতবার বাংলা অনুবাদের দায়িত্বে থাকবেন সউদী আরবে অধ্যয়নরত বাংলাদেশের চার শিক্ষার্থী। তারা হলেন– ড. খলীলুর রহমান, আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান মাক্কী, মুবিনুর রহমান ফারুক ও নাজমুস সাকিব। গত বছরও এই চার বাংলাদেশি হজের খুতবার অনুবাদের দায়িত্বে ছিল। আরাফাতের ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থানের মাধ্যমে হজ আদায় করবেন ২০ লক্ষাধিক ভাগ্যবান। সেখানে তারা মহান আল্লাহর কাছে কাকুতি মিনতি করে জীবনের সব গুনাহের ক্ষমা চাইবেন। গুনাহ মাফের মাধ্যমে তারা হয়ে উঠবেন বেগুনাহ বা মাসুম। সূর্যাস্তের সাথে সাথে মাগরিব না আদায় করে হাজী সাহেবদের যাত্রা শুরু হবে মুযদালিফার উদ্দেশ্যে। সেখানে যাওয়া মাত্র মাগরিব ও এশা এক আজানে, দুই ইকামাতে আদায় করবেন তারা। এরপর মুযদালিফায় খোলা আকাশের নিচে মাথা খোলা অবস্থায় রাত্রীযাপন করতে হবে। ১০ যিলহজ সূর্যোদয়ের পর আবার মিনায় ফিরে সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়ার পূর্বে বড় জামারাতে ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ, কুরবানী সম্পন্ন করার পর মাথা মুÐন করে ইহরাম পরিত্যাগ করবেন হাজী সাহেবরা। সুযোগ বুঝে মক্কায় গিয়ে ফরজ তাওয়াফ করতে হবে ৩ দিনের মধ্যে। ১১ ও ১২ যিলহজও হাজী সাহেবদের সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়ার পর ৩টি জামারাতে ৭টি করে মোট ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে। যারা সংক্ষেপ করতে চান ১২ যিলহজ সূর্যাস্তের পূর্বে মিনা ত্যাগ করবেন। নইলে ১৩ যিলহজ সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়ার পর আবারও ৩টি জামারাতে ৭টি করে ২১টি কঙ্কর মেরে মিনা ত্যাগ করতে হবে। পরিশেষে মক্কায় ফিরে বিদায়ের দিন বিদায়ী তাওয়াফের পূর্ব পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে প্রতি ওয়াক্তের নামাজ ও যত বেশি সম্ভব তাওয়াফে সময় কাটাবেন হাজী সাহেবরা। আল্লাহ তা‘আলা সকলকে সহীহ তরিকায় হজ পালন করে মাসুম বা গুনাহমুক্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।