Image description
ঢাবি উপাচার্যের নিকট নিয়মবহির্ভূতভাবে শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ অধ্যাপকের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদের জন্য ৩ জন প্রার্থী বিজ্ঞাপিত পদের ন্যূনতম শর্তাবলি পূরণ না করলেও ওই পদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য তোড়জোড় চলছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। উক্ত অভিযোগ করেছেন স্বয়ং ওই বিভাগেরই অধ্যাপক এ. কে. এম. রেজাউল করিম। অভিযোগ একই বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোঃ কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বরাবর মেইলে পাঠানো চিঠিটির একটি কপি মানবজমিনের কাছে এসেছে। চিঠিতে অধ্যাপক রেজাউল লিখেছেন, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পূর্বের তুলনায় উঁচুমানের শর্তাবলি (বিশেষ করে গবেষণা সম্পর্কিত) আরোপের যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন এবং ইতোমধ্যে যা কার্যকর করা আরম্ভ করেছেন তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তবে মনোবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও যেন এর ব্যতিক্রম কিছু না ঘটে। তাই নিচের অভিযোগটি আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখার জন্য আপনাকে বিনীত অনুরোধ করছি।" ঘটনার পটভূমি ব্যাখ্যা করে অধ্যাপক রেজাউল লিখেছেন, "২১/০৯/২০২৩ তারিখে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় সিএন্ডডি সভায় সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ প্রার্থীদের আবেদনপত্রসমূহ পর্যালোচনা করে একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করা হয় যেখানে ৩ জন প্রার্থী বিজ্ঞাপিত পদের শর্তাবলি পূরণ করে বলে উল্লেখ করা হয় যা পুরোপুরি অসত্য ও বিভ্রান্তিকর। প্রকৃতপক্ষে, আবেদনকারীদের কেউই বিজ্ঞাপিত পদের ন্যূনতম শর্তাবলি পূরণ করেন না। আমি মনোবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ও সিএন্ডডি সদস্য হওয়া সত্ত্বেও, আদালতের রায় (তাং ০৪/০৪/২০২৩) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আদেশ (তাং ১০/০৯/২০২৩) আমার পক্ষে থাকা সত্ত্বেও মনোবিজ্ঞান বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোঃ কামাল উদ্দিন আমাকে সিএন্ডডি সভায় অন্তর্ভুক্ত না করেই সিএন্ডডি সভা আহ্বান করেন এবং সেই সভায় নিয়োগ প্রার্থীদের যোগ্যতা সম্পর্কে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ম-নীতি ও আদর্শের পরিপন্থী। তিনি কী উদ্দেশ্যে, কী স্বার্থে এসব করছেন তা তিনিই জানেন। ইতিপূর্বে তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে স্টোর কিপার পদে নিয়োগ প্রদানের চেষ্টা করেছিলেন যা মহামান্য হাইকোর্ট ২৭/০৪/২০২২ তারিখে এক আদেশের মাধ্যমে স্থগিত করে দিয়েছেন এবং সেই রায় অদ্যবধি কার্যকর আছে।" অধ্যাপক রেজাউলের বক্তব্য, "তাই সহকারী অধ্যাপক পদে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য আমি ২৪/০৯/২০২৩ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার বরাবর একটি চিঠি প্রেরণ করি। আপনার সাথে দেখা করতে গিয়েও দেখা হয়নি। এরপর বেশ কয়েক মাস পার হয়ে গেছে। আমি ভেবেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হয়ত উক্ত শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াটি বন্ধ রেখেছেন। কিন্তু, গতকাল অকস্মাৎ জানতে পারলাম যে, ২৮/০২/২০২৪ তারিখে উক্ত পদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য নিয়োগবোর্ড বসেছিল। সেই বোর্ডে সাক্ষাৎকারের জন্য যেসব প্রার্থীদেরকে আহ্বান করা হয়েছিল তারা সবাই বহিরাগত এবং তাদের কেউই বিজ্ঞাপিত পদের ন্যূনতম শর্তাবলি পূরণ করেন না। আমি দৃঢ়তার সাথে বলছি, আমার কাছে প্রমাণাদি আছে প্রার্থীদের কেউই বিজ্ঞাপিত পদের ন্যূনতম শর্তাবলি পূরণ করেন না।" চিঠির শেষে অধ্যাপক রেজাউল লিখেছেন, "মনোবিজ্ঞান বিভাগের একজন সচেতন সিনিয়র শিক্ষক ও সিএন্ডডি সদস্য হিসেবে এই বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আমার ভালবাসা ও দায়িত্ববোধ থেকে আপনার নিকট আমার এই লেখা। আমার বিশ্বাস নিয়োগবোর্ড তথা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবহিত নন যে, কোন প্রার্থীই বিজ্ঞাপিত পদের ন্যূনতম শর্তাবলি পূরণ করেন না। কাজেই, ২৮/০২/২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত নিয়োগবোর্ডের সভায় মনোবিজ্ঞান বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ সংক্রান্ত যে সিদ্ধান্তই গৃহীত হয়ে থাকুক না কেন তা আসন্ন সিন্ডিকেট সভায় বাতিলপূর্বক দোষী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আপনার মর্জি হয়।" অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ. কে. এম. রেজাউল করিম অভিযোগ এবং উপাচার্য বরাবর উক্ত চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।