রাস্তায় হাঁটছেন, কিংবা বাইরে কোথাও কোনো কাজ করছেন। তার মধ্যে হঠাৎ মাথা ঘুরে গেল; চোখের সামনে অন্ধকার দেখছেন, এমন অবস্থা হলে কী করবেন? বুঝতে পারেন না অনেকেই! কিন্তু হঠাৎ মাথা ঘুরলে বড়সড় সমস্যা হতে পারে। তাই কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
হঠাৎ মাথা ঘুরলে যা করবেন
হঠাৎ মাথা ঘোরা খুব বড় কোনো সমস্যা না। কিন্তু মাথা ঘুরতে শুরু করলে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই একটুও মাথা ঘুরলে সঙ্গে সঙ্গে কোনো একটি নিচু জায়গা দেখে বসে পড়া জরুরি।
সামনে একটু শুয়ে নেয়ার মতো জায়গা থাকলে আরও ভালো। তবে টান টান হয়ে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলে দ্রুত কমবে সমস্যা। ভার্টিগোর মতো সমস্যা থাকলে কিছুক্ষণ অন্ধকার ঘরে কিছুক্ষণ চুপচাপ শুয়ে থাকতে হবে।
মাথা ঘোরা কমাতে আরও একটি বিষয়ে জোর দেয়া জরুরি। বারবার পানি খেতে পারেন। টানা কিছুক্ষণ পানি খাওয়া গেলে তাড়াতাড়ি কমতে পারে সমস্যা। তবে এই অসুবিধা যদি কিছুক্ষণে না কমে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
হঠাৎ মাথা ঘোরার কারণ
অতিরিক্ত পরিশ্রম, দুশ্চিন্তা, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, অন্তঃকর্ণের রক্তনালির অস্বাভাবিকতা, অন্তঃকর্ণের প্রদাহ, মেনিয়ারস রোগ, অস্বাভাবিক দৃষ্টিগত সমস্যা, অনেক উঁচুতে উঠে নিচের দিকে তাকালে এবং চলন্ত ট্রেন বা গাড়ি থেকে প্ল্যাটফর্মের দিকে তাকালে মাথা ঘোরে।
এ ছাড়া অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ, মাথার পেছন দিকে ও ঘাড়ের রক্তনালিতে বাধা বা রক্ত সরবরাহে ত্রুটি, মস্তিষ্কের নিচের দিকে টিউমার, মাল্টিপল স্লেরসিস রোগ, ভাইরাসজনিত ভেস্টিবুলার নিউরাইটিস, মধ্যবয়সীদের মিনিয়ার্স রোগ, আঘাতের কারণে পেট্রাস হাড়ের ক্ষতি ইত্যাদি কারণেও মাথা ঘুরতে পারে। রক্তে চিনির মাত্রা কমে গেলেও মাথাব্যথা ও মাথা ঘোরার সমস্যা দেখা দিতে পারে। শরীরে পানির পরিমাণ কমে গেলেও মাথা ঘোরার সমস্যা দেখা দেয়। মাথা ঘোরার পাশাপাশি কানের ভেতর শোঁ শোঁ বা দপ দপ শব্দ হতে পারে। কখনো কখনো মাথার বা ঘাড়ের অবস্থান পরিবর্তন করলে সমস্যা বাড়ে-কমে।
মাথা ঘোরা প্রতিরোধে যা করবেন
মাথা ঘোরা প্রতিরোধে নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলতে পারেন-
দুশ্চিন্তা করবেন না: বর্তমান সময়ে আমাদের সবার জীবনেই মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা রয়েছে। তবে এগুলোকে কোনোভাবেই বাড়তে দেয়া যাবে না। অনেকেই তাদের ফুসফুসে অতিরিক্ত চাপ দেয় এবং খুব দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে শুরু করে। ফলে মাথা ঘুরতে পারে। তাই এটি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সেই সঙ্গে ধীরে ধীরে নিয়মিতভাবে শ্বাস নিতে হবে।
ঘাড় সোজা রাখা: অনেক ক্ষেত্রে ঘাড় সোজা না রাখার কারণে মাথা ঘুরতে পারে। কারণ, ঘাড়ে স্পনডাইলোসিসের পরিবর্তন না হলে মস্তিষ্ক রক্ত সরবরাহকারী ধমনিগুলোর ওপর চাপ পড়তে পারে। ফলে মাথা ঘোরা শুরু হতে পারে। তাই ঘাড়ের সঠিক অবস্থান এটিকে প্রতিরোধ করতে পারে এবং ঘাড়ে মাংসপেশিকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।
অতিরিক্ত পরিশ্রম না করা: আমরা অনেকেই শরীরের ওপর অনেক প্রেশার দিই। এর ফলে আমরা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি ডেকে আনছি। কোনো অবস্থাতেই এটি করা যাবে না। শরীরের ওপর অতিরিক্ত চাপ দিলে অনেক সময় মাথা ঘোরার মতো অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। তাই কোনো কাজ করতে হলে আগে থেকে সেটির পরিকল্পনা করতে হবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
সুগারের মাত্রা না কমানো: কোনো অবস্থাতেই শরীরে সুগারের মাত্রা কমানো যাবে না। অনেক সময় এমন হয় যে একটা কাজ করতে করতে সময় চলে যাচ্ছে, কিন্তু খাচ্ছেন না। আবার অনেক সময় অলসতা করেও সঠিক সময়ে খাবার খাচ্ছেন না। এতে করে রক্তে চিনির মাত্রা কমে যায়। তখনই মাথা ঘোরার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়। তাই অলসতা না করে সঠিক সময়ে খাবার গ্রহণ করুন।
পর্যাপ্ত পানি পান করা: নানা ধরনের কাজ করার সময় আমরা ঘেমে যাই। এতে শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায়। আর শরীরে পানির পরিমাণ কমে গেলে মাথা ঘোরার সমস্যা দেখা দেয়। তাই শরীর যেন পানিশূন্য হয়ে না পড়ে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। এতে শরীর সব সময় পানিপূর্ণ থাকবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন