প্রযুক্তির প্রসারে স্মার্টফোন এখন অনেকেরই জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সারা বিশ্বে এখন ৪০০ কোটির বেশি মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। যন্ত্রটি মানুষে মানুষে যোগাযোগ সহজ করলেও এর অতিরিক্ত ব্যবহার মানুষের শরীর ও মনের জন্য নানা ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, স্মার্টফোনের ব্যবহার মস্তিষ্ক, দৃষ্টিশক্তি ও শিশুদের বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। স্মার্টফেন ব্যবহারে এসব নেতিবাচক প্রভাবের ফলে কি মানুষের বার্ধক্যের প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত হচ্ছে?
বাংলাদেশ ও ভারতের গবেষকদের যৌথ গবেষণায় উঠে এসেছে, স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার ঘাড়, কাঁধ, কনুই এবং হাতে পেশিজনিত ব্যথার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে, যা সাধারণত বার্ধক্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। ২০২২ সালে ‘স্প্রিঙ্গার নেচার’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গবেষণাটির শিরোনাম ছিল ‘কলেজগামী শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন আসক্তি এবং এর ফলে ঘাড়, কাঁধ, কনুই ও হাতে পেশিজনিত ব্যথার প্রভাব: একটি ক্রস-সেকশনাল রিসার্চ’।
গবেষণায় বলা হয়েছে, স্মার্টফোনে আসক্তি শরীরের অঙ্গভঙ্গিতে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন এনে এ ধরনের ব্যথার সৃষ্টি করছে। এ গবেষণায় ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৩২৬ শিক্ষার্থীর ওপর পরীক্ষা চালানো হয়। এতে বিভিন্ন সূচক পরিমাপ করে দেখা গেছে, প্রায় ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী ঘাড়ের ব্যথায় ভুগছেন। ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ ঘাড়ে ব্যথা, ৪২ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী কাঁধে ব্যথা অনুভব করছেন এবং প্রায় ২৭ দশমিক ৯ শতাংশের কনুইয়ে ব্যথার সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ৬৯ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী স্মার্টফোনের প্রতি মধ্যম থেকে মারাত্মকভাবে আসক্ত।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, স্মার্টফোন ব্যবহারের সময় শরীরের ভঙ্গির পরিবর্তনের কারণে ব্যথা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। দীর্ঘক্ষণ স্মার্টফোন ব্যবহারের সময় অনেকেই সামনের দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে রাখেন। ফলে ঘাড় ও মেরুদণ্ডে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয় এবং দীর্ঘ মেয়াদে ঘাড়ব্যথার কারণ হয়। এ ছাড়া ফোন ব্যবহারের সময় একটানা পেশির সংকোচন, আঙুল ও কবজির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে কাঁধ, কনুই ও হাতে চাপ পড়ে এবং সেখানেও ব্যথার সৃষ্টি হয়। এ ধরনের শারীরিক সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী আকার ধারণ করলে দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কার্যক্রমে প্রভাব পড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্মার্টফোনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে সচেতন হতে হবে। এর পাশাপাশি স্মার্টফোন ব্যবহারে নিয়মিত বিরতি নেওয়া এবং সঠিক অঙ্গভঙ্গি বজায় রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা বলছেন, ফোন ব্যবহার করার সময় মাথা সোজা রাখতে হবে এবং ফোনটি চোখের উচ্চতায় ধরে রাখতে হবে।
ব্যথা এড়াতে স্মার্টফোন ব্যবহারের সময় কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। দীর্ঘক্ষণ টেক্সট করার সময় বারবার হাত বদলানো এবং দীর্ঘ সময় ফোনে কথা বললে হেডফোন ব্যবহার করা উচিত। এক হাতে ফোন না ধরে দুই হাতে ধরলে আঙুলের ওপর চাপ কমে। এ ছাড়া চোখের জন্য প্রতি ২০ মিনিট পর স্ক্রিন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ২০ ফুট দূরের কোনো কিছুর দিকে ২০ সেকেন্ড তাকানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ডটকম
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন