৭ আগস্ট ১৯৭১। জাতীয় পরিষদে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত ৮৮ এমপি তাদের আসন ফেরত পাবেন বলে ঘোষণা দেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। পরে প্রাদেশিক পরিষদে ২৮৮
৭ আগস্ট ১৯৭১। জাতীয় পরিষদে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত ৮৮ এমপি তাদের আসন ফেরত পাবেন বলে ঘোষণা দেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। পরে প্রাদেশিক পরিষদে ২৮৮ জনের মধ্যে ৯৪ জন আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন বলে ১৯ আগস্ট আরেকটি ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া। যদিও দলটি তখন রাজনীতিতে নিষিদ্ধ।
ওই ঘোষণায় জাতীয় পরিষদের আওয়ামী লীগের বাকি ৪৭ শতাংশ এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৬৭ শতাংশ এমপিকে রাষ্ট্রদ্রোহ ও হত্যা মামলায় বিচারের মুখোমুখি হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে ডিসেম্বরে ফাঁকা আসনগুলোয় উপনির্বাচন দেয়ার পরিকল্পনার কথাও জানানো হয়। আর পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত করা হয় আবদুল মুতালিব (এএম) মালেককে।
তৎকালীন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ইয়াহিয়া খানের এ ঘোষণায় বহিরাবরণে ব্যাপক পরিবর্তনের কথা বলা হলেও মূল সংকটগুলো চলমান থাকায় অর্থপূর্ণ কোনো রাজনৈতিক সহাবস্থান ঘটানো সম্ভব হয়নি।
নিউইয়র্ক টাইমসে ৮ আগস্ট প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘নিষিদ্ধ ঘোষিত দল আওয়ামী লীগের ৮৮ এমপি জাতীয় পরিষদে তাদের আসন বহাল রাখতে পারবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন ইয়াহিয়া খান। নির্বাচনে ৩১৩টির মধ্যে ১৬৭টি আসনে জয়লাভ করেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণ শুরুর পরপরই দলটিকে নিষিদ্ধ করেন ইয়াহিয়া খান।’
এতে আরো বলা হয়, ‘আওয়ামী লীগের অভিযুক্ত অন্য ৭৯ এমপিকে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ থেকে নিজেদের নিষ্কৃতির সুযোগ দেয়া হবে।’
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমে সে সময় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, আওয়ামী লীগের যেসব সদস্য তাদের আসন ধরে রেখেছেন; তারা সরকারকে সহযোগিতা করার মতো প্রস্তাব দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে তারা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারেন কিংবা বিদ্যমান দলগুলোর মধ্যে একটিতে যোগ দিতে পারেন। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের আরেক প্রধান দল বামপন্থী পিপলস পার্টি। দলটির নেতৃত্বে আছেন জুলফিকার আলী ভুট্টো। তারা জাতীয় পরিষদে ৮৮টি আসন জিতেছে, যার সবক’টিই পশ্চিম পাকিস্তানে।
১৯৭১ সালের আগস্টেই ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মার্কিন সরকারের ইন্টারডিপার্টমেন্টাল ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইস্ট পাকিস্তান ডিজাস্টার রিলিফের চেয়ারম্যান মরিস জে উইলিয়ামস। সেখানে পাকিস্তানে নিযুক্ত তৎকালীন রাষ্ট্রদূত জোসেফ ফারল্যান্ডও উপস্থিত ছিলেন। ওই সাক্ষাতের বিষয়বস্তু নিয়ে ২০ আগস্ট পাকিস্তানের মার্কিন দূতাবাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি তারবার্তা পাঠানো হয়।
এতে বলা হয়, ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগের সাবেক ৮৮ জনপ্রতিনিধিকে প্রাদেশিক প্রশাসনে যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর বেশি সংখ্যককে যুক্ত করা সম্ভব কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, অন্য সবাইকে বিশেষ অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে তারা এ অভিযোগগুলো থেকে নিজেদের মুক্ত করে পরবর্তী জাতীয় পরিষদে তাদের আসন ফিরে পাওয়ার সুযোগ পাবেন।
ইয়াহিয়া খান বলেছিলেন, ‘৮৮ জনের মধ্যে মাত্র ১৫-১৬ জন বর্তমানে ঢাকায় রয়েছেন। জীবনের শঙ্কা থাকায় পাকিস্তান সরকার তাদের সুরক্ষা দিচ্ছে। অন্যরা হয়তো গ্রামাঞ্চলে বা ভারতে অবস্থান করছেন।’
তাদের মধ্যে কতজন তাদের আসন দাবি করতে এগিয়ে আসবেন, সে বিষয়ে ইয়াহিয়া খানের কোনো ধারণা ছিল না। তাই এ বিষয়ে তাকে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে বলে তিনি অনুমান করেছিলেন। বৈঠকটি উপসংহারে আসার কালে এক পর্যায়ে ইয়াহিয়া বলেন যে তিনি দ্রুতই একটি বেসামরিক সরকারের দিকে অগ্রসর হওয়ার আশা করছেন।
সে সময় মরিস উইলিয়ামসের মনোভাব ছিল, এ ৮৮ জন যদি এগিয়ে আসতে অনীহা দেখায় সেক্ষেত্রে তা শুধু আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার সঙ্গে সম্পর্কিত নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ যদি নিজেকে পুরনো নেতৃত্ব থেকে মুক্ত করতে পেরেছে বলে ঘোষণা দেয়, তাহলে ইয়াহিয়া খান দলটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে এবং পুনর্গঠিত আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে ৮৮ জনকে নিয়ে কাজ করতে পারেন।
সে সময় ইয়াহিয়া খান বলেন, ‘এ ৮৮ আওয়ামী লীগ সদস্যকে এমপি হিসেবে বৈধ ঘোষণা করায় তাকে পশ্চিম পাকিস্তানে মারাত্মক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন