ফেনীতে বেপরোয়া নেতাকর্মীদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বিএনপি
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ফেনীতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। গত ৫ আগস্টের পর জেলার দাগনভূঞা, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার একাধিক জায়গায় স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি মামলার ঘটনা ঘটেছে। জেলা যুবদলের এক নেতার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবুও থামছে না বিতর্কিত কর্মকাণ্ড। এ নিয়ে বিব্রত অবস্থায় পড়েছে দলের জেলা ও উপজেলার নেতারা।
অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের একাধিক নেতাকর্মী জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ীসহ ভিন্নমতের লোকজনকে মারধর করে টাকা দাবি করে। স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুরে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. শাহজাহান সিরাজীর নেতৃত্বে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাদের বাড়িতে হামলা, ভাংচুরের অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি আজ বুধবার তদন্ত প্রতিবেদন জেলা বিএনপির নিকট জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে সদর উপজেলার ছনুয়ায় ছাত্রদলের দু’পক্ষের সংঘর্ষে উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম ও সাংবাদিকসহ ১২ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ফেনী মডেল থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়। একইভাবে ফেনী সদর উপজেলার ফরহাদনগর, মোটবী, লেমুয়া, শর্শদী, কালীদহ, কাজীরবাগসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
অপরদিকে দাগনভূঞা উপজেলার বিএনপির সভাপতি আকবর হোসেনের সাথে যুবদল-ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জের ধরে মারামারি ও পাল্টাপাল্টি মামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা যুবদল থেকে ইসমাইল হোসেন সবুজ নামে এক নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া আরো ১০ নেতাকে শোকজ করা হয়েছে এবং যুবদলের পক্ষ থেকে সোনাগাজী ও ছাগলনাইয়ার দুটি অভিযোগের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পরশুরামের মির্জানগর ইউনিয়নের মধুগ্রামে ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র করে বিএনপির দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পাঁচ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। একইভাবে জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুরে অভ্যন্তরীণ বিরোধ কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তবে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের অনেকেই হাইব্রিড বলে অভিযোগ রয়েছে।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান মাহমুদ সবুজ বলেন, কিছু দুষ্কৃতী, কিছু নব্য বিএনপি দলের নাম ভাঙ্গিয়ে দলের বদনাম ছড়ানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে না পারে সেজন্য সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জেলার একাধিক স্থানে সংঘর্ষ, আহত ও পাল্টাপাল্টি মামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফেনী জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন খোন্দকার বলেন, যুবদলের কোন নেতাকর্মী দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। জেলার কিছু কিছু স্থানে বহিরাগত অনেকেই যুবদলের নাম ভাঙ্গিয়ে বিশৃঙ্খলার পাঁয়তারা করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থেকে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির এক সদস্য জানান, শেখ হাসিনার পতনের পর পরিস্থিতি এমন অবস্থানে গেছে দলীয় নেতাকর্মীদের সংঘর্ষসহ বিতর্কিত কর্মকাণ্ড সামলানো যাচ্ছে না। এ নিয়ে বিব্রত জেলার শীর্ষ নেতারা। বিএনপির নাম ব্যবহার করে কেউ অপকর্ম করতে চাইলে তাকে আইনের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানান।
ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, জেলার বিভিন্ন স্থানে দলের মধ্যে অনুপ্রবেশকারীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন। সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ানি দিয়ে তিনি বলেন, ছাত্রদলসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিরোধের জের ধরে সংঘর্ষের ঘটনাগুলোর বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র থেকে তদন্ত করা হচ্ছে এবং তদন্ত সাপেক্ষে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে নেতাদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ এড়াতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া যারা ফৌজদারী অপরাধে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যবস্থা নেবে।