আওয়ামী লীগের উপকার ভুললে মুনাফিক হবেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির এক নেতা। এমন একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় এবং রাজনৈতিক মহলে বেশ আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা এলাকায়। ওই বিএনপি নেতার নাম শফিয়ার রহমান। তিনি উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি।
জানা গেছে, রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা হাট-বাজারের সরকারি খাস জমি দখলের অভিযোগ উঠে স্থানীয় বিএনপি নেতা শফিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে। ২০২০ সালে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে গেলে ওই বিএনপি নেতাসহ তার ক্যাডার বাহিনী স্থানীয় আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতাকর্মীরা বাধা দেন। পরে সরকারি খাস জমি উদ্ধার না করে ফিরে যান প্রশাসন।
এদিকে ১ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের ওই অডিওতে শোনা যায়, আমার জায়গার বিষয়ে আওয়ামী লীগের ৭ থেকে ৮ জন ছেলে (নেতাকর্মী) আছে তাদের তো আমি ভুলতে পারছি না। তাদের ভোলাও যাবে না। ভুললে মুনাফিক হবো- বলে মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা শফিয়ার রহমান।
ওই অডিওতে আরও শোনা যায়, যখন আমার বিপদ আসছে ছক্কু আমার যে কাজটা করেছে আমার বাপের সমতুল্য কাজ করেছে। রেজাউল নামের ছেলেটা, এরশাদুল ও বক্কর এরা যে ওই সময়ে ভূমিকা পালন করেছে। তারা প্রকাশ্যে বলেছিলেন শফিয়ার চাচার ঘরে কে যায় দেখব। তখন তাদের (আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী) জন্য আমি রক্ষা পেয়েছি এবং বিএনপিও টিকে আছে বলে মন্তব্য করেন ওই বিএনপি নেতা শফিয়ার রহমান।
ছক্কু হলেন দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি। আর রেজাউল ছাত্রলীগের কর্মী। এছাড়াও এরশাদুল ওই ইউনিয়নের যুবলীগের সদস্য পদে রয়েছেন বলে জানা যায়।
দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনী দিয়ে হাট-বাজারের সরকারি সম্পত্তি দখল করে দোকানপাট নির্মাণসহ সীমান্ত চোরাচালানের অভিযোগও রয়েছে শফিয়ারের বিরুদ্ধে।
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, তিনি সবসময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে এলাকায় দাপিয়ে বেড়ান। তাই দলীয় পদপদবী থেকে এবং বিএনপি থেকে তার অপসারণ চায় স্থানীয় বিএনপি বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. শফিয়ার রহমান বলেন, রেকর্ডটি আমার তা সত্য, একটি মহল আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য ফেসবুকে দিয়েছেন। আমি কোনো সীমান্ত চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত নই। তাই এসব বিষয় নিয়ে ইতোমধ্যেই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এর প্রতিবাদ জানিয়েছি।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান রঞ্জু বলেন, রেকর্ডটি আমি শুনেছি। সেখানে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতার কথা রয়েছে। এ বিষয়ে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আজিজুর রহমান বলেন, শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা দিতে বাধা ও দলীয় নেতাকর্মীদের লাঞ্ছিতের ঘটনায় ইতোমধ্যে ওই বিএনপি নেতাকে শোকজ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ওই নেতার একটি অডিও বক্তব্য ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় দলে তার থাকার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। এ জন্য দলীয়ভাবে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি জেলা নেতৃবৃন্দকেও লিখিত ভাবে জানানো হবে।
এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির আহবায়ক মোস্তফাফিজুর রহমান মোস্তফা জানান, অডিওটি আমি শুনিনি। তবে আওয়ামী লীগের সুবিধা নিয়ে এবং তা অস্বীকার করলে মুনাফিক হবেন এমন মন্তব্য ওই বিএনপি নেতা করে থাকলে এবং সেই অডিওর বিষয়টি সত্য হলে তাহলে তার দলে থাকার গ্রহণযোগ্যতা তো নেই। থানা বিএনপি বিষয়টি দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।