Image description
প্রথম তিন মাসে সরকারের যত ব্যর্থতা
টানা চতুর্থবারের মতো দায়িত্ব গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। চতুর্থবার দায়িত্ব গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ যে সমস্ত নির্বাচনী অঙ্গীকার করেছিল তার অনেকগুলো পূরণের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে কিছু কিছু অঙ্গীকার পূরণের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কথা এবং কাজের সঙ্গে সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আর বর্তমান সরকার সফল না ব্যর্থ সেটি বলার এখনও সময় হয়নি। একটি সরকারের জন্য তিন মাস কোন সময় নয়। কিন্তু প্রথম তিন মাসে সরকারের উদ্যোগ এবং আন্তরিকতার একটা দৃশ্যমান প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। সেটা নিয়ে আলোচনা করা যেতেই পারে। বর্তমান সরকারের প্রথম তিন মাসে যে সমস্ত বিষয়গুলোতে জনগণের কাছে আশাবাদ তৈরি করতে পারেনি বা সরকারের যে সমস্ত কার্যক্রমে জনগণ প্রথম তিন মাসে হতাশ হয়েছেন, তার মধ্যে রয়েছে; ১. দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতা: সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতার নীতি গ্রহণ করেছে এবং নির্বাচনী ইস্তেহারে দুর্নীতির সঙ্গে কোন আপস নয়- এই ঘোষণা দেওয়ার পরও দুর্নীতির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না বলে সাধারণ মানুষ মনে করে। বিশেষ করে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বেশ কিছু বড় বড় দুর্নীতির খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও সেই সমস্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। সাবেক ভূমি মন্ত্রীর বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে ২ হাজার সাতশ কোটি টাকার সাম্রাজ্য গড়ে তোলার অভিযোগ রয়েছে। সাবেক এই মন্ত্রী নিজে সংবাদ সম্মেলন করে স্বীকার করেছেন যে, তার যুক্তরাজ্যে সম্পদ রয়েছে। কিন্তু তিনি দাবি করেছেন যে, এটি পাচার করার নয় এবং বৈধ ব্যবসার মাধ্যমে তিনি সম্পদ গড়েছেন। এ ব্যাপারে একটি নির্মোহ তদন্ত সময়ের দাবি ছিল। কিন্তু সরকার বিষয়টিকে উপেক্ষা করেছে। একইভাবে সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। যে সংবাদগুলো কতটুকু সত্য কতটুকু মিথ্যা তা সাধারণ মানুষের জানার আগ্রহ রয়েছে, জানার অধিকারও রয়েছে। কিন্তু কোন কর্তৃপক্ষই এই বিষয় নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন তদন্ত শুরু করার ইঙ্গিত দেয়নি। এ রকম অনেকগুলো ঘটনা রয়েছে যেখানে মনে হচ্ছে যে, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সরকার অসহায়। ২. দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা: সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকে তার অগ্রাধিকার গুলোর মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত করেছিল। কিন্তু দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে এখন পর্যন্ত সরকার সফল হতে পারেনি। এবার রমজানে জিনিসপত্রের দাম মানুষকে খুব কষ্ট দিচ্ছে। রমজানের শেষ প্রান্তে এসে পরিসংখ্যান ব্যুরো যে, মুদ্রাস্ফীতি হিসাব দিয়েছে তা ১০ শতাংশ ছুঁইছুঁই। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সরকারকে করতেই হবে। এটি সরকারের জন্য একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে অনেকে মনে করছেন। ৩. অর্থ পাচার এবং খেলাপি ঋণ বন্ধ: অর্থ পাচার এবং খেলাপি ঋণ বন্ধ সরকারের জন্য একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। সরকার খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কিছু কথাবার্তা বলছে। তবে পয়লা জুলাই থেকে বোঝা যাবে যে, এই কথাবার্তাগুলো কতটুকু কার্যকর হচ্ছে। কিন্তু অর্থ পাচার বন্ধের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি বলেই সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে। এই সমস্ত কারণে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা এখনও ফিরে আসছে না। যেটা সরকারের জন্য একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ৪. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সরকারের জন্য নতুন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে কুকি-চিনের সশস্ত্র তৎপরতার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নতুন করে আলোচনার বিষয় এসেছে। কিশোর গ্যাং সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠক পর্যন্ত কিশোর গ্যাং-এর অত্যাচার এবং দাপট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের সহিংসতার খবরও আলোচনায় আছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। ৫. বিদ্যুত এবং জ্বালানি পরিস্থিতি: বিদ্যুত এবং জ্বালানি পরিস্থিতি নিয়ে সরকার জনগণের জন্য কোন আশাবাদ দিচ্ছে না। সরকার এ ক্ষেত্রে কোন সুখবর সাধারণ মানুষকে দিতে পারছে না। বরং দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে তেলের দাম সমন্বয়ের নামে যে তামাশা তৈরি হয়েছে তা সাধারণ মানুষের জন্য বিরক্তি তৈরি করছে। ইতোমধ্যে সারা দেশে লোডশেডিং শুরু হয়ে গেছে। সামনের গ্রীষ্মে পরিস্থিতি যে খারাপ হবে সেটা বলাই বাহুল্য। সব কিছু মিলিয়ে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ভালো নয়। অথচ এটি ছিল সরকারের একটি অহংকারের বিষয়। এই ব্যর্থতা গুলো সরকারকে দ্রুত কাটিয়ে উঠতেই হবে ধারাবাহিকতার জন্য এবং জনআস্থা অর্জনের জন্য।