আয়েশা সিদ্দিকা যাবেন রাজধানীর সায়েদাবাদের ইসলামিয়া জেনারেল হাসপাতালে, চোখের অপারেশন করাতে। গন্তব্যে যাওয়ার জন্য কোনো একটা পরিবহনের অপেক্ষায় তিনি কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছেন প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে।
আয়েশা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাস তো নেই। সিএনজিচালিত কোনো অটোরিকশাও পাচ্ছি না। একটা অটোরিকশা পেয়েছিলাম। ৮০০ টাকার নিচে যাবে না। এত টাকা ভাড়া দিয়ে যাওয়া সম্ভব না। এই পথে বাসে গেলে ৫০ টাকার বেশি ভাড়া লাগে না। সকাল ১০টায় সার্জারি। এখন কী করব বুঝতে পারছি না। খুব অসহায় লাগছে।’
গত দুই দিনেও সমস্যার সমাধান না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন আয়েশা। তিনি বলেন, ‘এটা পুরোপুরি সরকারের গাফিলতি। এ দেশে জনগণের কোনো মূল্যই নেই।’
জ্বালানি মন্ত্রণালয় গত বুধবার রাতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে। এরপর ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে গত শুক্রবার অঘোষিতভাবে সারা দেশে বাস, ট্রাক ও অন্য পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন মালিকেরা।
বাস ও পণ্যবাহী যানবাহনের অঘোষিত ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কিন্তু তাতে সাড়া দেননি এ খাতের মালিক সমিতির নেতারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে গতকাল শনিবার ট্রাক সমিতির বৈঠকের পরও ধর্মঘট প্রত্যাহারের কোনো ঘোষণা আসেনি। উল্টো গতকাল থেকে লঞ্চ চালানো বন্ধ রেখেছেন মালিকেরা। এ কারণে দুই দিন ধরে চলা ধর্মঘট আজ রোববার তৃতীয় দিনে গড়িয়েছে। দেশজুড়ে বাস ও পণ্যবাহী যানবাহন না চলায় সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। নারীদের ভোগান্তি চোখে পরার মতো। রাজধানী ঢাকায় মানুষকে কয়েক গুণ ভাড়া দিয়ে রিকশা, অটোরিকশা ও শরিকি যাত্রার মোটরসাইকেলে চলাচল করতে হচ্ছে।
রাজধানীর কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর, ফার্মগেট এলাকায় আজ সকালে দেখা যায়, যাত্রীরা দীর্ঘ সময় ধরে যানবাহনের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। খালি রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা দেখলেই তাঁরা থামাচ্ছিলেন। কেউ যেতে রাজি হচ্ছিলেন, কেউ হচ্ছিলেন না। যেসব চালক যেতে রাজি হচ্ছিলেন, তাঁরা চড়া ভাড়া হাঁকছিলেন।
রাস্তায় বাস বলতে আছে বিআরটিসির। কিন্তু এই বাসে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। এই বাস দেখলেই যাত্রীরা ওঠার জন্য ছুটে যাচ্ছিলেন। কিন্তু অনেকেই উঠতে ব্যর্থ হন। এ কারণে অনেক যাত্রীকে অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন কাজীপাড়া থেকে আরামবাগ যাবেন। সিএনজিচালিত অটোরিকশা দেখলেই থামানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি। অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করেও তা পাচ্ছিলেন না তিনি। হেলাল উদ্দিন বলেন, সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে অফিসে যাওয়ার জন্য যানবাহন না পেয়ে বিপদে পড়েছেন তিনি। অটোরিকশা না পেয়ে কয়েকটি রিকশা দেখেছিলেন। ৪০০ টাকার নিচে কেউ যাবে না।
আবেদ সিরাজ মিরপুর ১০ নম্বরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সঙ্গে ছিল তাঁর সপ্তম শ্রেণিপড়ুয়া মেয়ে। সে আজ করোনাভাইরাসের টিকা দেবে। কেন্দ্র পড়েছে মালিবাগে। সিরাজ বলেন, ‘ঘণ্টাখানেক ধরে দাঁড়িয়ে আছি। কেউ যেতে চাইছে না। রিকশাচালক, সিএনজিচালকদের ডাকলেও তাঁরা শুনেছেন না। এখন কীভাবে যাব বুঝতে পারছি না।’
আবুল বাশার নামের এক ব্যক্তি বলেন, এখন পর্যন্ত সরকার কোনো ব্যবস্থাই করতে পারল না। জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে সরকার নিজেরাই সমস্যা তৈরি করছে। আবার পরে তাদের লোকেরাই ধর্মঘট দিয়েছে।
রফিক রহমান নামের এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক কাজীপাড়া থেকে গুলিস্তান যেতে ভাড়া চাইলেন ৫০০ টাকা। এর কমে তিনি যাবেন না। রফিক বলেন, ‘সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ে। আমাদের তো আর বেতন বাড়ে না। সব সময় তো আর প্যাসেঞ্জার পাই না। তাই সকালে একটু বেশি চাইলাম।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন