তরুণদের জন্য দৈনিক সর্বাধিক দুই থেকে তিন ঘণ্টা অলস সময় কাটানোর পরামর্শ দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিইউএইচও)। তবে বিশ্বজুড়ে কিশোর-কিশোরীরা গড়ে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যয় করছে অবকাশকালীন কার্যক্রমে। এসব কার্যক্রমের মধ্য রয়েছে—টেলিভিশন দেখা, ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার, ভিডিও গেম খেলা এবং বাইকে চড়া। তবে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থাকলে কিশোর-কিশোরীরা বেশি অলসভাবে দিন পার করে। বাংলাদেশের তরুণেরাও এর ব্যতিক্রম নয়। একটি বহুজাতিক কোম্পানির গবেষণায় এসব তথ্য জানা যায়।
২০২৪ সালের ২৯ নভেম্বর আন্তর্জাতিক পুষ্টি এবং শারীরিক ক্রিয়া সংক্রান্ত জার্নালে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে। প্রধান গবেষক ড. জেমস এফ. স্যালিসের নেতৃত্বে এটি পরিচালিত হয়। তিনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সান ডিয়েগোর হার্বার্ট ওয়ার্থেইম স্কুল অফ পাবলিক হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান লংজিভিটি সায়েন্সের এবং অস্ট্রেলিয়ান ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটির প্রফেসরিয়াল ফেলো।
গবেষণায় বলা হয়, পুরুষ এবং নারীদের উভয়ের জন্যই তাদের মোট অলস সময় বাড়িয়ে দিতে পারে একটি ব্যক্তিগত সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের সঙ্গে স্ক্রিন টাইমের সময় বাড়ার সরাসরি সম্পর্ক পাওয়া গেছে।
ড. স্যালিস বলেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে অনেক উদ্বেগ রয়েছে। এটি শারীরিক স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি করতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘এই ফলাফলগুলো উদ্বেগজনক, কারণ অতিরিক্ত অলস সময় কাটালে স্থূলতা, ডায়াবেটিস এবং মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।’
গবেষকেরা ১১ থেকে ১৯ বছর বয়সী ৩ হাজার ৯৮২ জন কিশোর-কিশোরীর এক্সিলারোমিটার ডেটা (যে সেন্সর শরীরের গতিবিধি ও অবস্থান মাপতে ব্যবহৃত হয়) এবং ৬ হাজার ৩০২ জন অংশগ্রহণকারী পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অবকাশকালীন আচরণ নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। এই গবেষণাটি আন্তর্জাতিক শারীরিক ক্রিয়া এবং পরিবেশ নেটওয়ার্ক (আইপিইএন) অ্যাডোলেসেন্ট স্টাডি নামক একটি প্রকল্পের অংশ হিসেবে পরিচালিত হয়। গবেষণাটি ভৌগোলিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে আলাদা ১৫টি দেশের কিশোর–কিশোরীদের তথ্য নিয়ে করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, বিভিন্ন দেশে পারিবারিক ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সংখ্যা, কিশোর-কিশোরীদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের সংখ্যা এবং হাঁটার সুযোগ-সুবিধা আলাদা ছিল। উদাহরণস্বরূপ, ভারতীয় কিশোর-কিশোরীদের ঘরে গড়ে ১ দশমিক ২টি ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং শূন্য দশমিক ৫টি ব্যক্তিগত ডিভাইস ছিল। তবে ডেনমার্কে এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৪ দশমিক ২ এবং ২ দশমিক ৩। ভারত এবং বাংলাদেশে ৩০ শতাংশ এরও কম কিশোর-কিশোরী নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থাকার কথা জানিয়েছে, যেখানে উচ্চ আর্থসামাজিক অবস্থার দেশগুলোতে এই হার ৯০ শতাংশেরও বেশি।
গবেষকেরা পাড়া-মহল্লার হাঁটার সুবিধা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে পিতামাতার কাছ থেকে জানতে পেরেছেন যে, অস্ট্রেলিয়ায় হাঁটার জন্য অনেক পার্ক রয়েছে। তবে নাইজেরিয়াতে হাঁটার জন্য কোনো সুবিধা নেই। বাংলাদেশ ও ভারতের পিতামাতারা জানিয়েছেন, তাদের এলাকাতে হাঁটার জন্য পার্কের সংখ্যা অনেক কম। এ ছাড়া ব্রাজিল, মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ, ভারত এবং ইসরায়েলের পিতামাতারা যানজট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে প্রথম তিনটি দেশে অভিভাবকেরা অপরাধের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
গবেষণায় দেখা যায়, যারা কম অলস সময় কাটায় তাদের বেশির ভাগ হাঁটার উপযোগী পাড়া-মহল্লায় থাকে। তারা যানজটেরও কম সম্মুখীন হয় এবং অপরাধ থেকে সুরক্ষা সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখে। বিশেষত, এমন পাড়া-মহল্লায় থাকা মেয়েরা কম অবকাশকালীন সময় কাটায় এবং শারীরিকভাবে বেশি সক্রিয় থাকে।
গবেষণার প্রধান লেখক ড. রঞ্জিত মোহন অঞ্জনা বলেছেন, যদিও প্রতিটি দেশের সংস্কৃতি, জীবনযাপন এবং পরিবেশ আলাদা, তবুও কিশোর-কিশোরীদের অবকাশকালীন সময় এবং শারীরিক গতিবিধি সম্পর্কিত যে ধারণাগুলো উঠে এসেছে, তা অনেক দেশেই একই।
তথ্যসূত্র: নিউজ মিডিয়া লাইফ সায়েন্সেস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন