রমজান শুরু হতে এখনও প্রায় ৪ মাস বাকি। তবে এর মধ্যেই বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি শুরু হয়ে গেছে। বাড়ানো হয়েছে ছোলার দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে পণ্যটি ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ৭ দিনের ব্যবধানে সব ধরনের ভোজ্যতেলের দামও বাড়ানো হয়েছে।
এছাড়া কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা। তবে আরেক দফা কমেছে ডিমের দাম। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার ঘুরে ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
বিক্রেতারা জানান, এদিন খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ছোলা মানভেদে বিক্রি হয় ১৩০-১৪০ টাকা। যা ৭ দিন আগে বিক্রি হয়েছে ১২৫-১৩০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এই পণ্যটির দাম বেড়েছে ৫-১০ টাকা। নয়াবাজারের মুদি বিক্রেতা মো. তুহিন বলেন, আড়তদার ও পাইকাররা ৪ মাস আগেই রোজার এ পণ্যটি নিয়ে কারসাজি শুরু করেছে।
এক প্রকার নিশ্চুপভাবে বাড়িয়েছে ছোলার দাম। গত কয়েক বছরও এমন চিত্রই দেখা গেছে। তাই রোজায় ক্রেতাকে স্বস্তি দিতে এখন থেকেই সার্বিকভাবে বাজারে তদারকি জোরদার করা দরকার। তিনি জানান, রোজার কয়েকদিন আগে তদারকি শুরু করলে কোনো লাভ হয় না। কারণ, অসাধু সিন্ডিকেট রোজার ৩ থেকে ৪ মাস আগেই পণ্যের দাম বাড়ায়।
অন্যদিকে রাজধানীর খুচরা বাজারে ৭ দিনের ব্যবধানে সব ধরনের ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে। বিক্রেতারা জানান, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা। যা ৭ দিন আগেও ১৬০ টাকা ছিল। বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৭-১৭০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগেও ১৬৫-১৭০ টাকা ছিল।
এছাড়া দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকা। যা ৭ দিন আগেও ৩৩৫ টাকা ছিল। পাশাপাশি খোলা পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫৬ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগেও ১৫০ টাকা ছিল। আর পাম অয়েল সুপার বিক্রি হচ্ছে লিটারপ্রতি ১৬০ টাকা। যা আগে ১৫৪ টাকা ছিল।
এছাড়া খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার বোতলজাত রাইসব্রান তেল বিক্রি হচ্ছে ২০০-২১০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে লিটারপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১৮৫-১৯৫ টাকা। সঙ্গে পাঁচ লিটারের বোতলজাত রাইসব্রান তেল বিক্রি হচ্ছে ৯৮০-১০৫০ টাকা। যা ৭ দিন আগেও ৮৮০-৯২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
মালিবাগ কাঁচাবাজারের বিক্রেতা মো. হানিফ বলেন, বিশ্ববাজারে দাম কমছে। আমদানিতেও সরকার শুল্ক ছাড় করছে। তারপরও দেশের বাজারে কোম্পানিগুলো ভোজ্যতেলের দাম কমাচ্ছে না। বরং বাড়াচ্ছে। মনে হচ্ছে রোজা ঘিরে এই দাম আরও বাড়াবে। সবই তাদের কারসাজি।
জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাবেক সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, মূল্যস্ফীতির হার কমাতে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। তেলসহ একাধিক পণ্যের আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। ডলারের দাম কমানো ও এলসি মার্জিন তুলে নেওয়া হয়েছে। এতে আমদানির খরচ কমলেও বাজারে দাম কমছে না। কেন কমছে না সরকারকে খতিয়ে দেখতে হবে। এখানে কোনো ধরনের কারসাজি থাকলে অসাধুদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
এদিকে খুচরা বাজারে ছোলা ও ভোজ্যতেলের সঙ্গে আলুর দাম আরেকদফা বেড়েছে। খুচরা বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৬৫ টাকা। তবে কমেছে ডিমের দাম। গত সপ্তাহে প্রতি হালি ফার্মের ডিম বিক্রি হয়েছে ৫২ টাকা। যা বৃহস্পতিবার বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। প্রতি কেজি ছোট দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা, মাঝারি দানার মসুর ডাল ১২০ ও মোটা দানার মসুর ডাল ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৩৫ টাকা। এছাড়া খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা। আর কেজিপ্রতি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৬০ টাকা। আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৩০ টাকা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন