মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র দিন পাঁচেক বাকি। এ নির্বাচনের আগেই বেশ ভালো অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি। তৃতীয় প্রান্তিকে দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২.৮ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি কমে আসা ও উল্লেখযোগ্য হারে মজুরি বৃদ্ধির ফলে ভোক্তা ব্যয় বেড়েছে।
নির্বাচনের এক সপ্তাহেরও কম সময় আগে এই পরিসংখ্যান প্রকাশিত হলো। এ সংক্রান্ত এক জরিপের বরাত দিয়ে রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কমালা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। নির্বাচনে যে কেউ বিজয়ী হতে পারেন।
অনেক মার্কিন নাগরিকের কাছে অর্থনীতির বিষয়টি নির্বাচনে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়। কেননা খাদ্য ও বাসস্থানের পেছনে বাড়তি ব্যয় মেটাতে গিয়ে তাদের মধ্যে অসন্তোষ জন্ম নেয়।
রয়টার্সসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জরিপে দেখা গেছে, অর্থনীতি পরিচালনায় দক্ষতার প্রশ্নে ট্রাম্পকে এগিয়ে রাখছেন ভোটাররা। ২০২২ ও ২০২৩ সালে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দেশটিতে সুদের হার বাড়ানো হলেও মার্কিন অর্থনীতি স্থিতিশীল।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, নির্বাচনের ঠিক আগের প্রান্তিকে মার্কিন অর্থনীতি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। কিছু মিশ্র প্রভাব থাকলেও অর্থনীতি গত চার বছর আগের তুলনায় ভালো অবস্থানে।
রয়টার্সের জরিপে অর্থনীতিবিদদের ধারণা ছিল, জুলাই-সেপ্টেম্বরের সময়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির হবে বার্ষিক ৩ শতাংশ হারে। এপ্রিল-জুন সময়েও প্রবৃদ্ধির হার ছিল একই। যদিও বাস্তবে প্রবৃদ্ধি হলো তার চেয়ে কিছুটা কম।
জরিপ শেষ হওয়ার পর দেখা যায়, সেপ্টেম্বর মাসে পণ্য বাণিজ্যের ঘাটতি আড়াই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে নিজেদের ত্রৈমাসিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৩.৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২.৮ শতাংশ নির্ধারণ করে আটলান্টা ফেড। শেষপর্যন্ত তাদের দেওয়া ওই পূর্বাভাসই সত্য হলো।
বাণিজ্যের এই ঘাটতির বৃদ্ধির প্রভাব জিডিপিতে রয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রবৃদ্ধি মন্দ হয়নি। ফেডারেল রিজার্ভ কর্মকর্তাদের বিবেচনায় ১.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলে মূল্যস্ফীতি তেমন একটা বাড়ে না। প্রকৃত প্রবৃদ্ধি তার চেয়ে বেশি হয়েছে। অর্থাৎ অর্থনীতি পূর্বধারণার চেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে।
এই সংশোধন প্রক্রিয়ায় মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ও মোট দেশজ আয়ের (জিডিআই) মধ্যকার ফারাক প্রায় মুছে গেছে। জিডিআই প্রবৃদ্ধির বিকল্প পরিমাপক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করতেন, এই ফারাকের অর্থ হলো, অর্থনীতি ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হচ্ছে।
এদিকে মূল্যস্ফীতির হার ফেডের ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার কাছে চলে এসেছে। এতে করে ফেডও মুদ্রানীতির লাগাম ছাড়তে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে নীতি সুদ কমানো হয়েছে। ২০২০ সালের পর এটি ছিল সুদের হার হ্রাসের প্রথম ঘটনা। ফেডের নীতি সুদহার এখন ৪.৭৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে চলে এসেছে।
কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, অর্থনীতির স্থিতিশীলতা থেকে বোঝা যায়, মুদ্রানীতি অতটা কঠোর ছিল না, যতটা মানুষ ভাবত। একই সঙ্গে শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় মজুরি বৃদ্ধির প্রভাব পড়েনি।
শ্রমবাজারের গতি কিছুটা কমেছে, শ্রমিক ছাঁটাই ঐতিহাসিকভাবে কম, ধারাবাহিকভাবে মজুরিও বাড়ছে। শেয়ারবাজারের উত্থান ও বাড়ির মূল্যবৃদ্ধির কারণে পরিবারের নিট সম্পদ বেড়েছে। মানুষের সঞ্চয়ের হার ভালো। মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় পরিবারগুলোর জন্য, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর জন্য তা স্বস্তির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তৃতীয় প্রান্তিকে মূল্যস্ফীতি পরিমাপের আরেকটি মানদণ্ড ব্যক্তিগত ব্যয় সূচকের (পিসিই) ২.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে; দ্বিতীয় প্রান্তিকে যা ছিল ২.৮ শতাংশ।
বোস্টন কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ব্রায়ান বেথুন রয়টার্সকে বলেন, যখন আমরা মূল্যহ্রাসের চক্রে প্রবেশ করেছি, তখন মজুরি বাড়ছে; সে জন্য প্রকৃত মজুরি বাড়ছে। এটি অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দ্বিতীয় বিষয় হলো বাড়ির মূল্য; এটা কিছুটা স্থির হয়েছে, তৃতীয় বিষয়টি হলো শেয়ারবাজার।
অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ দেখা গেলে বা শ্রমবাজারে কিছুটা চাঙা ভাব থাকে, তাহলে ফেডারেল রিজার্ভ আগে যে পরিকল্পনা করেছিল, সে হারে নীতি সুদ না কমালেও চলবে।
বিডি প্রতিদিন
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন