২০২৫ সালে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ৫০০ জন মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকা প্রকাশ করেছে আম্মানের দ্য রয়েল ইসলামিক স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সেন্টার। তালিকায় ৪৩ আলেম, ইসলামিক স্কলার, ধর্মীয় বিষয়ক প্রশাসক ও দীন প্রচারকের নাম রয়েছে।
মোট ৫টি ক্যাটাগরিতে প্রভাবশালী মুসলিমদের তালিকা তৈরি করা হয়। এর মধ্যে প্রধানতম ক্যাটাগরি তিনটি- সামাজিক, ধর্মীয় ও বৈশ্বিক। এই প্রভাব সামাজিক বা সাংস্কৃতিক অঙ্গনে হতে পারে, অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবদান রাখতে পারে বা ধর্মীয় শাসন ও রাজনৈতিক নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তালিকায় থাকা আলেম-ইসলামিক স্কলার, ধর্মীয় বিষয়ক প্রশাসক ও দীন প্রচারকগণ
১. শেখ আল-হাবিব উমর বিন হাফিজ
(ইয়েমেনি সুন্নি সুফি ইসলামি পণ্ডিত, শিক্ষক, দার আল-মুস্তাফা শিক্ষালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এবং ডিন।)
২. বিচারপতি শেখ মুহাম্মদ তাকী উসমানী
(পাকিস্তানের ইসলামি শরীআহ’র সাবেক বিচারপতি, দারুল উলূম করাচির শায়খুল হাদিস ও নায়েবে মুহতামিম, বিশ্বব্যাপী বরেণ্য আলেম ও মুফতি।)
৩. গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহ সাইয়্যিদ আলি হুসেইন আল-সিস্তানি
(ইরানি বংশোদ্ভূত ধর্মগুরু। বর্তমানে ইরাকে বসবাস করেন। তাঁকে ইরাকি শিয়া মুসলমানদের প্রধান আধ্যাত্মিক নেতা।)
৪. শেখ সালমান আল-ওদা
(সৌদি ইসলামিক পণ্ডিত। আন্তর্জাতিক ইউনিয়নের সদস্য এবং এর ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। তিনি ইসলাম টুডে ওয়েবসাইটটির আরবি সংস্করণের একজন পরিচালক।)
৫. প্রফেসর ড. শেখ আহমদ মুহাম্মদ আল-তাইয়্যেব
(মিশরীয় ইসলামিক পণ্ডিত এবং আল-আজহারের বর্তমান গ্র্যান্ড ইমাম, আল-আজহার আল শরীফ এবং আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি।)
৬. মাওলানা মাহমুদ মাদানী
(ভারতীয় ইসলামী পন্ডিত, কর্মী, রাজনীতিবিদ এবং জমিয়ত উলামা-ই-হিন্দের একাংশের বর্তমান সর্বভারতীয় সভাপতি, দারুল উলুম দেওবন্দের প্রাক্তন অধ্যক্ষ হুসাইন আহমদ মাদানী রহ.-এর নাতি।)
৭. আমিরুল মুমিনিন শেখ আস-সুলতান মুহাম্মদু সা'দু আবুবকর
(নাইজেরিয়ার মুসলমানদের আধ্যাত্মিক নেতা। তার পূর্বপুরুষ শেখ উসমান ড্যান ফোডিও (1754-1817), ইসলামের মালিকি মাযহাবের নেতা এবং সুফিবাদের কাদিরি শাখার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত দুই শতাব্দীর পুরনো সিংহাসনের উত্তরাধিকারী।)
৮. শেখ আবদুল্লাহ বিন বেয়াহ
(মৌরিতানীয় ইসলামিক পন্ডিত, রাজনীতিবিদ এবং সৌদি আরবের জেদ্দার কিং আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের অধ্যাপক, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফতোয়া কাউন্সিলের চেয়ারম্যান।)
৯. ড. ইয়াহিয়া চোলিল স্তাকুফ
(ইন্দোনেশিয়ান রাজনীতিবিদ, ইসলাম ধর্মগুরু, নাহদলাতুল উলামা (NU) এর নির্বাহী পরিষদের চেয়ারম্যান।)
১০. শেখ ড. আলি গোমা
(মিশরীয় ইসলামি পণ্ডিত, আইনজ্ঞ ও সাধারণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, মিশরের প্রধান মুফতি।)
১১. শেখ হাবিব আলি জাইন আল আবিদিন আল-জিফরি
(ইয়েমেনি সুন্নি ইসলামিক পন্ডিত, সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থিত আধ্যাত্মিক শিক্ষাবিদ, তাবাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা।)
১২. শেখ হামজা ইউসুফ হ্যানসন
(আমেরিকান ইসলামি নব্য ঐতিহ্যবাদী, ইসলামিক শায়েখ , জায়তুনা কলেজের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, ইসলামে শাস্ত্রীয়বিদ্যা চর্চার একজন প্রবক্তা, বিশ্বজুড়ে ইসলামিক বিজ্ঞান এবং শাস্ত্রীয়বিদ্যা পদ্ধতিগুলোর প্রচারে অবদান রেখেছেন।)
১৩. শেখ আহমদ তিজানি বিন আলি সিসে
(সেনেগালের ইসলামিক পন্ডিত, পশ্চিম আফ্রিকার বৃহত্তম সুফি ধারা ‘তিজানিয়া সুফি ধারা’র আধ্যাত্মিক নেতা। আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টিতে হাদিস বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন।)
১৪. শেখ ওসামা আল-সাইয়্যিদ আল-আজহারি
(ইসলামি পণ্ডিত, প্রচারক, কায়রোর আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মের মৌলিক বিষয়ের অনুষদের একজন প্রভাষক, কালাম রিসার্চ অ্যান্ড মিডিয়া থিঙ্ক ট্যাঙ্কের একজন সিনিয়র ফেলো, অক্টোবর ২০২৪ থেকে মিশরীয় রাষ্ট্রপতির ধর্মীয় বিষয়ক উপদেষ্টা)।
১৫. শেখ মুস্তফা হোসনি
(ইরানি ইসলামিক স্কলার)
১৬. শেখ আবদুল আজিজ ইবনে আবদুল্লাহ আল-আল-শেখ
(সৌদি আরবের বর্তমান গ্র্যান্ড মুফতি, সিনিয়র ধর্মীয় পণ্ডিতদের কাউন্সিল উপ-কমিটির প্রধান।)
১৭. হাবিব লুথফি বিন ইয়াহিয়া
(আরব ইন্দোনেশিয়ান ইসলামিক শেখ, সেন্ট্রাল জাভা পেকালংগানের কিয়াই এবং প্রচারক, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতির সদস্য হিসাবে দায়িত্বরত।)
১৮. মাওলানা তারিক জামিল
(পাকিস্তানি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত, দায়ী এবং তাবলিগ জামাতের সদস্য। ইসলাম প্রচারক হিসেবে তার সাধারণ জীবনযাত্রা এবং পাশাপাশি উর্দু ও আরবিতে সাবলীল বক্তৃতা তাকে মুসলিম বিশ্বজুড়ে খ্যাতি এনে দিয়েছে। মন্ত্রী, ব্যবসায়ী, অভিনেতা, খেলোয়াড় থেকে শুরু করে সকল স্তরের মানুষকে তিনি প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছেন।)
১৯. শেখ মুহাম্মদ আল-ইয়াকুবি
(সিরীয় ইসলামি পণ্ডিত এবং শাজিলিয়া তরীকার পীর বা মুর্শিদ বা ছুফি তাত্ত্বিক দীক্ষাগুরু।)
২০. প্রফেসর সাইয়্যেদ হোসেইন নাসর
(ইরানি পণ্ডিত, ধর্মতত্ত্ববিদ ও দার্শনিক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক।)
২১. মাওলানা নজর রহমান
(ইসলাম প্রচারক এবং পাকিস্তানের তাবলিগ জামাতের বর্তমান আমীর।)
২২. প্রফেসর টিমোথি উইন্টার (শেখ আব্দাল হাকিম মুরাদ)
(ইংরেজ অ্যাকাডেমিক, ধর্মতাত্ত্বিক ও ইসলামি পণ্ডিত। তিনি কালাম, ইসলাম ও আধুনিকতা এবং ইঙ্গ-মুসলিম সম্পর্ক নিয়ে কাজ করে থাকেন। তিনি অসংখ্য ইসলামি গ্রন্থ ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন এবং কোরআনীয় আরবি ভাষার উপর তাঁর অসামান্য দখল রয়েছে। তাঁকে ইসলামি নব্য-ঐতিহ্যবাদী চিন্তাধারার অন্যতম প্রবক্তা গণ্য করা হয়। এছাড়া, শেখ আবদাল হাকিম মুরাদ ক্যামব্রিজ মুসলিম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা, অধ্যাপক ও অনুষদপ্রধান।)
২৩. শেখ ইব্রাহিম সালিহ
(নাইজেরিয়ার একজন ইসলামিক পণ্ডিত, শিক্ষক এবং মুফাসসির, ফেডারেল প্রজাতন্ত্র নাইজেরিয়ার গ্র্যান্ড ইমাম। তিনি ১৯৫৭ সালে বিজ্ঞান ও ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে আন্নাহদা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন এবং বর্তমানে তিনি নাইজেরিয়ার ফতোয়া ও ইসলামী বিষয়ক সুপ্রিম কাউন্সিল (এনএসসিআইএ) এর প্রধান হিসাবে দায়িত্ত্ব পালন করছেন।)
২৪. শেখ মুহাম্মদ ইলিয়াস আত্তার কাদিরি
(পাকিস্তানি ইসলামী পন্ডিত যিনি দাওয়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি সুফিবাদের কাদরী অনুশাসনের অন্তর্ভূক্ত।)
২৫. ড. সাইয়্যেদ মুহাম্মদ নাকিব আল-আত্তাস
(মালয়েশীয় মুসলিম দার্শনিক। তিনি ধর্মতত্ত্ব, দর্শন, অধিবিদ্যা, ইতিহাস ও ভাষাসাহিত্য অধ্যয়ন করেন।)
২৬. ড. আমর খালিদ
(মিশরীয় মুসলিম কর্মী এবং টেলিভিশন প্রচারক। নিউ ইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিন , ইংরেজিভাষী দেশগুলিতে খালেদের জনপ্রিয়তার উল্লেখ করে , তাকে "বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং প্রভাবশালী মুসলিম টেলিভিশন প্রচারক" হিসাবে বর্ণনা করে। ২০০৭ সালে, আমর খালেদ টাইম ম্যাগাজিন দ্বারা বিশ্বের 100 জন প্রভাবশালী ব্যক্তির একজন নির্বাচিত হন।)
২৭. প্রফেসর মুস্তাফা আবু সুয়াই
২৮. গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহ আবদুল্লাহ জাওয়াদি আমুলি
২৯. গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহ মুহাম্মদ ইসহাক ফায়াদ
(আফগানিস্তানের গজনি প্রদেশ জাঘোরির ইসলামিক পন্ডিত।)
৩০. ড. আরেফ আলী নাইয়েদ
৩১. প্রফেসর আকবর আহমদ
৩২. ড. ইঙ্গ্রিড ম্যাটসন
(কানাডিয়ান পণ্ডিত। ইসলামিক স্টাডিজের একজন অধ্যাপক, তিনি বর্তমানে লন্ডন, অন্টারিও , কানাডার ওয়েস্টার্ন অন্টারিও বিশ্ববিদ্যালয়ের হুরন ইউনিভার্সিটি কলেজে ইসলামিক স্টাডিজে লন্ডন এবং উইন্ডসর কমিউনিটি চেয়ার। ম্যাটসন ইসলামিক সোসাইটি অফ নর্থ আমেরিকার (ISNA) একজন প্রাক্তন সভাপতি।)
৩৩. আলহাজি ড. সানুসি লামিদো সানুসি
(সানুসি পশ্চিম আফ্রিকার একজন বিশিষ্ট ঐতিহ্যবাহী এবং ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব।)
৩৮. মুফতি আবুল কাসিম নোমানী
(ভারতীয় সুন্নি মুসলিম পণ্ডিত এবং দারুল উলূম দেওবন্দের বর্তমান মুহতামিম।)
৩৯. মোহাম্মদ বেচারি
(মরক্কোর ইসলামিক পন্ডিত, ওয়ার্ল্ড মুসলিম কমিউনিটি কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল, তিনি ইউরোপীয় ইসলামের ল্যান্ডস্কেপে একজন নেতা এবং প্রবল ও গতিশীল পাবলিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ফ্রেঞ্চ ন্যাশনাল ফেডারেশন অফ মুসলিমের সভাপতি, ফ্রান্সে ইসলাম সংগঠিত করার অন্যতম প্রধান সংস্থা। তিনি ইসলামিক ইউরোপীয় সম্মেলনের মহাসচিব।)
৪০. শেখ নূহ কেল্লার
(আমেরিকান ইসলামিক পণ্ডিত, শিক্ষক, লেখক যিনি আম্মানে বসবাস করেন। তিনি বেশ কিছু ইসলামী বইয়ের অনুবাদক।)
৪১. ড. মুহাম্মদ আল-আরিফি
(আরব জাহানের বিশিষ্ট দাঈ, লেখক, তিনি কিং সৌদ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক এবং মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগ এবং মুসলিম স্কলারদের সমিতি বিশেষ সদস্য।)
৪২. ড. জাকির আবদুল করিম নায়েক
(ভারতীয় ইসলামি চিন্তাবিদ, ধর্মপ্রচারক, বক্তা, লেখক, যিনি ইসলাম ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে কাজ করেন। তিনি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাতা যেটি পিস টিভি নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে থাকে।)
৪৩. শেখ আবদুল রহমান আল-সুদাইস
(সৌদি আরবের মক্কার মসজিদ আল-হারাম; দুই পবিত্র মসজিদের বিষয়ক জেনারেল প্রেসিডেন্সির সভাপতি; একজন বিখ্যাত ক্বারী।)
উল্লেখ্য, আম্মানে অবস্থিত ‘দ্য রয়েল ইসলামিক ষ্ট্র্যাটেজিক ষ্টাডিজ সেন্টার’ নামক প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের প্রভাব ও অবদান পর্যালোচনা করে প্রতি বছর প্রকাশ করে ‘দ্য মুসলিম ৫০০: দ্য ওয়ার্ল্ডস ৫০০ মোস্ট ইনফ্লুয়েনশিয়াল মুসলিমস।’ ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি সর্বপ্রথম এই তালিকা প্রকাশ করে। মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিন্স আল ওয়ালিদ বিন তালাল সেন্টার ফর মুসলিম- ক্রিশ্চিয়ান আন্ডারষ্ট্যান্ডিং নামক প্রতিষ্টানের সহযোগিতায় তালিকাটি প্রকাশ করা হয়ে থাকে।
৫ ক্যাটাগরিতে প্রভাবশালী নির্বাচন করা হয়, সেগুলো হলো- প্রভাবশালী আলেম, প্রভাবশালী ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব। যারা ইসলামের প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। মুসলিম শাসক ও রাজনীতিবিদ, যারা মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্বে রয়েছেন। প্রযুক্তির অগ্রগতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনকারী। সংস্কৃতি ও শিল্পের মাধ্যমে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ব্যক্তিত্ব। মুসলিম ক্রীড়াবিদ ও তারকা, সমাজে যাদের প্রভাব বিদ্যমান।
এই সংস্করণে চলতি বছরের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিষয়েরও আলোচনা করা হয়েছে। যেমন, গাজায় চলমান গণহত্যার ২০২৩ সালের পরিস্থিতি, প্যারিস অলিম্পিকে মুসলিম ক্রীড়াবিদদের কৃতিত্বসহ মুসলিম উম্মাহর ওপর প্রভাব বিস্তারকারী বেশ কিছু ঘটনা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন