Image description
রাশিয়ার‍ আরটি চ্যানেল নিষিদ্ধ করেছে মেটা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানি মেটা বলেছে তারা তাদের সামাজিক মাধ্যম প্লাটফর্ম থেকে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম নিষিদ্ধ করছে। কারণ হিসেবে মেটা বলে, এই গণমাধ্যমগুলো মস্কোর প্রচারণা ছড়ানোর জন্য ‘প্রতারণামূলক কৌশল’ ব্যবহার করে। ক্রেমলিন মঙ্গলবার এই ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ জানায়। মেটা, যারা ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইন্সটাগ্রামের মালিক, সোমবার দিনের শেষে জানায় তারা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করবে। রাশিয়ার প্রভাব বিস্তার করতে ‘গোপন কার্যক্রমের’ মোকাবেলা করার জন্য মেটা তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করছে। ‘অনেক বিবেচনার পর, আমরা রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে আমাদের চলমান কাজের পরিধি বাড়াচ্ছি : রোসিয়া সেগদনিয়া, আরটি (রাশিয়া টুডে) এবং অন্যান্য সম্পর্কিত মিডিয়া এখন বিদেশী হস্তক্ষেপের কারণে আমাদের অ্যাপ থেকে বিশ্বব্যাপী নিষিদ্ধ,’ মেটা এক বিবৃতিতে জানায়। ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘বেছে বেছে রাশিয়ান মিডিয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণযোগ্য না,’ এবং ‘এ ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে মেটা নিজেকেই হেয় করছে।’ ‘আমরা এটাকে খুবই নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছি। এর ফলে মেটার সাথে আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা আরো জটিল হয়ে গেল,’ পেসকভ তার দৈনিক ব্রিফিং-এ সাংবাদিকদের বলেন। এক সময় আরটি রাশিয়া টুডে নামে পরিচিত ছিল। রোসিয়া সেগদনিয়া হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আরআইএ নভোস্তি এবং স্পুটনিক-এর মধ্যে সংবাদ ব্রান্ডের পরিচালক কোম্পানি। ‘পাশ্চাত্য বিশ্বে একটা মজার প্রতিযোগিতা চলছে- নিজেদেরকে আরো বেশি সুন্দর দেখানোর জন্য কে আরটিকে সব চেয়ে বেশি পিটান দিতে পারবে,’ আরটি এক বিবৃতিতে বলে। রোসিয়া সেগদনিয়া মন্তব্যের জন্য দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের অনুরোধে সাড়া দেয় নাই। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা মেটার এই পদক্ষেপ এলো আরটি’র উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের কয়েক দিন পরেই। যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করছে, ক্রেমলিনের এই সংবাদ মাধ্যমকে রাশিয়ার যুদ্ধের অংশ এবং তারা দেশের গণতান্ত্রিক বিরোধী শক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করে যে- আরটি রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সাথে কাজ করছে এবং তারা ইউক্রেনে যুদ্ধরত সৈন্যদের জন্য স্নাইপার রাইফেল এবং অন্যান্য সামগ্রী কেনার জন্য অর্থ সংগ্রহ করে। তারা আরো বলে যে- আরটি ওয়েবসাইট একটি সংবাদ মাধ্যমের ছদ্মবেশে আছে, কিন্তু সেটা ইউরোপ, আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা এবং অন্যান্য অঞ্চলে ভুয়া তথ্য আর প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হয়। এ’মাসের আগের দিকে, বাইডেন প্রশাসন ক্রেমলিন পরিচালিত ওয়েবসাইট জব্দ করে এবং আরটির দু’জন কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলায় আরটি’র দু’জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি-ভিত্তিক একটি কন্টেন্ট তৈরির কোম্পানিকে রুশ প্রোপাগান্ডামূলক ২,০০০ ভিডিও প্রকাশ করার জন্য গোপনে অর্থায়ন করার অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযুক্ত দু’জন ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে এবং কোম্পানিটি জানতো না তাদের রাশিয়া ব্যবহার করছে। মস্কো সকল অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। মেটা এর আগেই মস্কোর অনলাইন রিচ সীমিত করতে পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা ২০২০ সালের পর থেকে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের পোস্ট এবং কন্টেন্টে লেবেল দেয়া শুরু করে। দু’বছর পর, তারা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেখান বন্ধ করে এবং তাদের কন্টেন্ট ফেসবুক ব্যবহারকারীদের নিউজ ফিডে সীমিত করে দেয়। মেটা এবং ইউ টিউব আর টিকটকের মত অন্যান্য সোশাল মিডিয়া কোম্পানি ইউরোপিয়ান ব্যবহারকারীদের জন্য আরটি ব্লক করে দেয়। মেটা এবং ফেসবুক ‘দু’বছর আগেই ইউরোপে আরটি ব্লক করে, এখন তারা বাদ বাকি বিশ্বের জন্য তথ্য প্রবাহ সেন্সর করছে,’ আরটি এক বিবৃতিতে বলে। মস্কো ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর কিছু দিন পরেই মেটাকে একটি ‘চরমপন্থী গোষ্ঠী’ হিসেবে চিহ্নিত করে। তারা রাশিয়ায় ফেসবুক এবং ইন্সটাগ্রাম ব্লক করে। ইলন মাস্কের এক্স, যা আগে টুইটার নামে পরিচিত ছিল, একই সময়ে ব্লক করা হয়। এই প্লাটফর্মগুলো এখন ভিপিএন-এর মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়। সূত্র : ভয়েস অফ আমেরিকা