এক বছরে সামরিক খাতে ব্যয় ২ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশিঃ সিপ্রির প্রতিবেদন
১৪ বছরের মধ্যে গত বছর বৈশ্বিক সামরিক ব্যয় সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। সুইডেনভিত্তিক স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিপ্রি) এ তথ্য দিয়েছে। বলা হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী নানা সংঘাতের কারণে সামরিক ব্যয়ের এই উল্লম্ফন প্রত্যক্ষ করল বিশ্ব।
সিপ্রি প্রতিবছরই সামরিক ব্যয়বৃদ্ধির চিত্র প্রকাশ করে থাকে। এতে দেখা গেছে, বিশ্বে সামরিক খাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া। ব্যয়বৃদ্ধির চিত্র দেখা গেছে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, এশিয়া, ওশেনিয়া এবং উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায়। ২০০৯ সালের পর প্রথমবারের মতো এমন ঘটনা ঘটল।
সিপ্রির ৬০ বছরের ইতিহাসে গত বছরই সর্বোচ্চ সামরিক ব্যয়ের হিসাব লিপিবদ্ধ করেছে। গত বছর সারা বিশ্বে ২ লাখ ৪৪ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে সামরিক খাতে; অর্থাৎ এই খাতের ব্যয় ২ ট্রিলিয়ন ডলারের ওপরে। বছরান্তে এই ব্যয় বাড়ল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ।
গত বছর রাশিয়ার সামরিক ব্যয় সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সর্বোচ্চ। পক্ষান্তরে ইউক্রেনের সামরিক ব্যয় আরও আগ্রাসী। কিয়েভ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩৭ শতাংশ ব্যয় করেছে এ খাতে।
সামরিক ব্যয় এবং অস্ত্র উৎপাদন কর্মসূচিবিষয়ক সিপ্রির গবেষক জিয়াও লিয়াং বলেন, ‘ন্যাটো জোটভুক্ত তিন দেশ ছাড়া সবাই ব্যয় বৃদ্ধি করেছে। ন্যাটোর ৩১ দেশের ১১টি জিডিপির ২ শতাংশ ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করেছে অথবা অতিক্রম করেছে। এই প্রবণতা স্নায়ুযুদ্ধ পরিসমাপ্তির পরই প্রথম দেখা গেল।’
সিপ্রি বলছে, আগের বছরের তুলনায় ২০২৩ সালে চীন সামরিক ব্যয় বাড়িয়েছে ৬ শতাংশ, যা আর্থিক মূল্যে ২৯ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। এই পরিমাণ অর্থ এশিয়া ও ওশেনিয়ার সামগ্রিক ব্যয়ের অর্ধেকের সমান।
রাশিয়ার সম্ভাব্য আগ্রাসনের কথা চিন্তা করে ইউরোপে ব্যয়বৃদ্ধির চিত্র অব্যাহত রয়েছে। পোল্যান্ড ২০২২ সালের তুলনায় ৭৫ শতাংশ বাড়িয়ে তিন হাজার ১৬০ ডলারে উন্নীত করেছে। ইরান এশিয়ার চতুর্থ সর্বোচ্চ ব্যয়কারী হিসেবে ১ হাজার ৩০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে। মধ্যপ্রাচ্যে গত ১০ বছরে সর্বোচ্চ ব্যয় হয়েছে। সর্বোচ্চ ব্যয়কারী সৌদি আরবের পরই রয়েছে ইসরায়েল।
জার্মানিভিত্তিক ফ্রাঙ্কফুর্ট পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নিকোলাস শোরনিগ বলেন, ‘আমরা এমন একটি যুগে বাস করছি, যেখানে নিরাপত্তা অগ্রাধিকারে পরিণত হয়েছে এবং নিরাপত্তাকে সংজ্ঞায়িত করা হচ্ছে সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে।’