চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ পুলিশের অভিযান টের পেয়ে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে গেছে। এতে দুই পুলিশসহ চার জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) ভোররাত ৪টার দিকে সাজ্জাদের অবস্থান জেনে বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন মোড়ের জালালাবাদ পেট্রোল পাম্পের পেছনের একটি বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় টের পেয়ে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায় সাজ্জাদ।
তার ছোড়া গুলিতে নগরের চান্দগাঁও থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ফাইয়াছ হাসমিনুর রুবেল ও রাজু আহমেদ, স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ জাবেদ (৩৪) এবং অক্সিজেন মোড়ের সিটি ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী কাজল কান্তি দে (৩৬) আহত হন। ঘটনার পর পুলিশের সোয়াট টিম ঘটনাস্থলে আসে, কিন্তু সাজ্জাদকে পায়নি তারা। পরে ওই বাসা থেকে সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না বেগম, দুই যুবকসহ তিন জনকে আটক করা হয়। গুলিবিদ্ধ দুই পুলিশকে দামপাড়া পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অপর দুজন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জোড়া খুনসহ ১০ মামলার আসামি সাজ্জাদ হোসেনকে ধরতে অক্সিজেন এলাকার বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায় সাজ্জাদ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নগর পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম) রইছ উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে, অক্সিজেন এলাকার একটি বাসায় অবস্থান করছে সন্ত্রাসী সাজ্জাদ। তাকে ধরতে পুলিশ অভিযানে গেলে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। তার ছোড়া গুলিতে দুই পুলিশসহ চার জন আহত হন। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সাজ্জাদকে ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে।’
এদিকে সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ধরা না পড়ায় বায়েজিদ বোস্তামী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ ও হাটহাজারী থানার প্রায় তিন লাখ বাসিন্দা আতঙ্কে রয়েছেন। এলাকায় তার চাঁদা দাবির বিষয়টি অনেকটা প্রকাশ্যেই চলছে। মূলত নির্মাণাধীন ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা আদায় করে যাচ্ছে এই সন্ত্রাসী।
সাজ্জাদ হোসেন বিদেশে পলাতক ‘শিবির ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত আরেক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেনের অনুসারী। অপরাধ জগতে পা রেখে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠে সাজ্জাদ। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির ১০টি মামলা রয়েছে। গত ১৭ জুলাই অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেফতার করেছিল চান্দগাঁও থানা পুলিশ। পরের মাসে জামিনে বেরিয়ে আসে সে। হাটহাজারীর শিকারপুরের মো. জামাল তার বাবা।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাঁদা না পেলেই সাজ্জাদ গুলি করে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ কালারপুল এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনে চাঁদা না পেয়ে গুলি করেছিল সে। ৬০ জন ব্যক্তি মিলে ভবনটি নির্মাণ করছেন। স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, সাজ্জাদকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছেন ভবন মালিকরা।
এ ছাড়া বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন, অনন্যা, শীতলঝর্ণা, কালারপুল, বায়েজিদ থানার সীমান্তবর্তী হাটহাজারীর কুয়াইশ, নগরের চান্দগাঁও হাজীরপুল ও পাঁচলাইশ এলাকায় ১৫ থেকে ২০ জনের বাহিনী নিয়ে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাচ্ছে সাজ্জাদ। গত ৫ জুলাই বায়েজিদ থানার বুলিয়াপাড়া এলাকায় একটি বাসা লক্ষ্য করে গুলি চালায় সাজ্জাদ ও তার সহযোগীরা। এ ঘটনার ভুক্তভোগী মো. ইকবাল বলেন, ‘এলাকায় এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা নেওয়ার প্রতিবাদ করায় সাজ্জাদ আমার বাড়ি লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি করেছিল। এ ঘটনায় বায়েজিদ বোস্তামী থানায় মামলা করেছি আমি।’
চাঁদা না পেয়ে গত বছরের ২৭ অক্টোবর চান্দগাঁওয়ের হাজীরপুল এলাকায় মো. হাছান নামের এক ঠিকাদারের বাসা লক্ষ্য করে গুলি করেছিল সাজ্জাদ। এ ঘটনায় হাছান বাদী হয়ে চান্দগাঁও থানায় মামলা করেছেন।
গত ২১ অক্টোবর চান্দগাঁওয়ের শমসেরপাড়া এলাকায় আফতাব উদ্দিন নামে এক বালু ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। পুলিশ ও নিহতের পরিবার বলছে, সাজ্জাদ ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের করা মামলায় তাকে আসামি করা হয়।
আগস্ট মাসের ২৯ তারিখে বায়েজিদ বোস্তামী থানার অনন্যা আবাসিক ও বায়েজিদ সীমানা-সংলগ্ন কুয়াইশ এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করা হয় মো. আনিস ও মাসুদ কায়সার নামের দুই যুবককে। এ ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয় বায়েজিদ ও হাটহাজারী থানায়। পুলিশ বলছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে দুইপক্ষের দ্বন্দ্বের জেরেই খুন হয়। দুটিতে সাজ্জাদ ও তার সহযোগীদের আসামি করা হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন