প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে গতকাল সংলাপে অংশ নেন রাজনৈতিক দলের নেতারা -বাংলাদেশ প্রতিদিন
জাতীয় ঐক্য গঠনের লক্ষ্যে বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে সংলাপ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল বিকাল সোয়া ৪টার দিকে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এ সংলাপে দেশের চলমান নানা ইস্যুতে আলোচনা হয়। দলগুলো নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
রোডম্যাপ প্রকাশ হলে ষড়যন্ত্রের সাহস কেউ পাবে না : সংলাপ শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্বাচনি রোডম্যাপ প্রকাশ হয়ে গেলে আর ষড়যন্ত্র করার সাহস কেউ পাবে না। জুলাই-আগস্টে গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করা হয়েছে। তাদের ষড়যন্ত্রকেও এদেশের ছাত্র-জনতা সবাই মিলে আমরা মোকাবিলা করব। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান যে পরিস্থিতি, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং বিভিন্ন বিষয়ে, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের ইস্যু তৈরির বিষয়ে, বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য আমাদের সহযোগিতা চাওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশের বিরুদ্ধে পতিত সরকার বিদেশ থেকে যে ষড়যন্ত্র করছে সেই ফ্যাসিস্ট, পতিত সরকারের বিরুদ্ধে সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছেন। এই যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে এটা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য অপচেষ্টা হচ্ছে। বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য আরও বলেন, আমরা সরকারের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেছি যে, আমরা সব জনগণ যেমনিভাবে জুলাই-আগস্টে গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করা হয়েছে তাদের এবং তাদেরকে যারা সহযোগিতা করছে, তাদের ষড়যন্ত্রকেও সেইভাবে এদেশের ছাত্র-জনতা সবাই মিলে মোকাবিলা করব। নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, এই সরকার ওয়াদাবদ্ধ জনগণের অধিকারকে ফিরিয়ে দেওয়ার। তাই আমরা বলেছি, অতি দ্রুত সংস্কার সাধন করে নির্বাচনের জন্য একটা রোডম্যাপ দিতে- যাতে করে জনগণ রোডম্যাপ পেয়ে নির্বাচনমুখী হয়ে গেলে যেসব ষড়যন্ত্র এখন আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, সেসব ষড়যন্ত্র আর কেউ করার সাহস পাবে না।
........বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে এ সংলাপে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো ছাড় নয় : বৈঠক শেষে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো ছাড় নয়। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে আমরা ঐক্যবদ্ধ। সরকার যাতে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেয়, সেটার জন্য আমরা সহযোগিতা করব। তিনি আরও বলেন, অপপ্রচার মোকাবিলায় আমরা সরকারের সঙ্গে কাজ করব। আমরা কারও পাতা ফাঁদে পা দিব না। কারও কাছে মাথা নত করব না, আবার সীমালঙ্ঘনও করব না। দুই একদিনের মধ্যে সুখবর পাবেন আশা করি। সরকারকে সহযোগিতা করছেন জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে বিজয় এসেছে, চলমান ষড়যন্ত্রও আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করব। দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে লড়তে হবে। জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে সংলাপে আরও অংশ নেন জামায়াতের নায়েবে আমির মজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারোয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম।
বাংলাদেশকে দুর্বল নতজানু-শক্তিহীন ভাবার কোনো অবকাশ নেই : আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, সবার ওপরে দেশ এটা থেকে আমরা কখনো বিচ্যুত হব না। বাংলাদেশকে দুর্বল নতজানু ও শক্তিহীন ভাবার কোনো অবকাশ নেই। দলের সঙ্গে সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশবিরোধী বিভিন্ন তৎপরতা চলছে। হাইকমিশনে হামলা, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ, বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণার বিষয়ে সংলাপে তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। ভারতের এসব পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার যে আত্মমর্যাদাশীল সাহসী ভূমিকা নিয়েছে তার প্রশংসা করা হয়েছে এবং সরকারের সঙ্গে সলিডারিটি প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, একই সঙ্গে সংলাপে ভারতের এসব প্রচারণার বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালীভাবে এবং আরও বেগবানভাবে মোকাবিলার কথা বলা হয়েছে। এ জন্য আমাদের যারা প্রবাসী, বন্ধুরাষ্ট্রের সহযোগিতা এবং বিদেশি সাংবাদিকদের নিয়ে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আমাদের যোগাযোগ দক্ষতা এবং আইনি দক্ষতা বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়াও সংলাপে অংশ নেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মামুনুল হক, খেলাফত মজলিসের আবদুল বাসিত আজাদ ও জাহাঙ্গীর হোসেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), গণ সংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু ও যুগ্ম মহাসচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদের রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণসংহতি আন্দোলন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট (এনডিএম)।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন