Image description

প্রতি বছর দেশের পাঁচ হাজারেরও বেশি শিশু-কিশোর বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে। এ কারণে তাদের জন্য সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশের এক উজ্জ্বল প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে শিশু একাডেমি। কিন্তু উচ্চ আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, একাডেমিকে তাদের সম্পূর্ণ জায়গা আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টকে বুঝিয়ে দিতে হবে।

এত বছর শিশু একাডেমি এই জায়গায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। কিন্তু এখন তাদের চলে যেতে হলে কোথায় যাবে; এত স্থাপনা কোথায় ও কীভাবে সরানো হবেÑতা নিয়ে বিপাকে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বাংলাদেশ শিশু একাডেমি শিশুদের শারীরিক-মানসিক বিকাশের জন্য একমাত্র জাতীয় প্রতিষ্ঠান। এর কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর সংলগ্ন সুপ্রিম কোর্টের জমিতে। প্রতিষ্ঠানটি ৩ দশমিক ৬৯১ একর জায়গার ওপর অবস্থিত। একাডেমি সূত্র জানায়, সারা দেশের ৬৪টি জেলা ও ছয়টি বিভাগের ছয় উপজেলায় অবস্থিত শাখা অফিসগুলো এ কার্যালয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রতি বছর শিশুরা বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেয়। অন্যদিকে একাডেমির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্থায়ী স্থাপনা রয়েছে। তার মধ্যে তিনতলা প্রশাসনিক ভবন ও শিশু পাঠাগার, তিনতলা শিশু জাদুঘর, ৫০০ আসনবিশিষ্ট শিশু মিলনায়তন, পাঁচতলা শিশু গ্রন্থ ভবন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উল্লেখযোগ্য।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একাডেমির নিয়ন্ত্রণে থাকা সমুদয় জমির দখল নেওয়ার জন্য ২০১১ সালের হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট হয়। ওই রির্টের শুনানিতে একাডেমির আয়ত্তে থাকা সব জমি সুপ্রিম কোর্টের কাছে হস্তান্তরের আদেশ দেয় হাইকোর্ট। একাডেমি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে লিভ টু আপিল দায়ের করলে ২০১১ সালের জুলাইয়ে তা খারিজ হয়ে যায়।

মামলার রায়ে বলা হয়, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির দখলে থাকা জমি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সম্পত্তি। শিশু একাডেমি এ জমি হস্তান্তর না করায় আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় মহিলা ও শিশুবিষয়ক সচিব তারিক-উল-ইসলাম ও শিশু একাডেমির পরিচালক মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। সচিব তারিকুল ইসলাম সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে বদলি হয়ে গেলে নাসিমা বেগম মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হন। পরে তাকেও মামলার পক্ষভুক্ত করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমদ ভূঞার পাঠানো সর্বশেষ চিঠিতে এসব জমি বুঝিয়ে দিতে বলা হয়। তবে তাতে তিন মাসের সময় বেঁধে দেওয়া হয় বলে জানান মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) দিলারা বেগম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিশু একাডেমির জমিটি ভারত সম্রাটের পক্ষে পূর্ত বিভাগের নামে রেকর্ড করা। পরে পূর্ত বিভাগ একাডেমিকে তিন ধাপে ৩ দশমিক ৬৯১ একর জমি (১৯৭৭ সালে ২ দশমিক ১০৮ একর, ১৯৮৯ সালের ১২ ডিসেম্বর ও ১৯৯০ সালে দশমিক ২৬৩ একর জমি) দীর্ঘমেয়াদি প্রতীকী ইজারামূল্যে বরাদ্দ দেয়। ২০১১ সালের ১০ মার্চ একাডেমির জমি হাইকোর্টের জমি হিসেবে রায় দেওয়া হয়। সবশেষ জমি বুঝিয়ে দিতে শিশু একাডেমিকে আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় উচ্চ আদালত। সে হিসেবে আর মাত্র দুই মাসেরও কম সময় হাতে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

এ বিষয়ে শিশু একাডেমির মহাপরিচালক দিলারা বেগম আমার দেশকে বলেন, জমিটি যেহেতু গণপূর্ত আমাদের ‘প্রতীকী বরাদ্দ’ দিয়েছে, তাই গণপূর্তকে আমরা লিখেছি এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে।

দিলারা বেগম বলেন, আগামী আগস্ট পর্যন্ত তাদের সময় দেওয়া হয়েছে। যদিও এই অল্প সময়ের মধ্যে সরে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। এখানে সাড়ে পাঁচ হাজার ছেলেমেয়ে প্রশিক্ষণ নেয়, তারপর আবার এতসব অবকাঠামো। এগুলো সরানো তো অনেক সময়ের ব্যাপার।

এদিকে একাডেমির জন্য অন্যত্র জায়গা খোঁজা হচ্ছে জানিয়ে দিলারা বেগম বলেন, ‘রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাণিজ্যমেলার পাশে ফাঁকা জায়গাটি বরাদ্দ চেয়ে আমরা ঢাকা জেলা প্রশাসকের অফিসে চিঠি দিয়েছি। এটা আসলে একটি বিকল্প সমাধান। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সব ধরনের বিকল্প ব্যবস্থার কথাই আমাদের ভাবতে হচ্ছে। পাশাপাশি অব্যবহৃত কোনো ভবনের একাডেমির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বরাদ্দ দেওয়া যায় কি না, সে বিষয়ে রাজউক কর্তৃপক্ষের কাছে বরাদ্দ চেয়ে অনুরোধ করেছি। এগুলো হচ্ছে আমাদের বিকল্প ব্যবস্থা। একইসঙ্গে আমরা সুপ্রিম কোর্টকে অনুরোধ জানিয়েছি। যদি জায়গার সমস্যা কেটে যায়, তাহলে একাডেমিকে বিস্তৃত করা, শিশুদের সাংস্কৃতিক চর্চা ও বিকাশের জন্য একটি স্থায়ী ব্যবস্থা করা সম্ভব। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করে ডাবল করতে পারব।

সরকারের সহযোগিতা চেয়ে শিশু একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা রাজপথে অনেক কর্মসূচি পালন করতে পারতাম। কিন্তু আমরা সরকারকে কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে চাইনি। আমি মনে করি, সরকার যদি চায়, তাহলে কোনো না কোনোভাবে এটির সমাধান হতে পারে। জনপ্রিয় এ প্রতিষ্ঠান রক্ষায় আমরা সবার সহযোগিতা কামনা করছি।