Image description
৪৬তম বিসিএস ঃ ১৭ জনকে প্রশ্ন দেন সাজেদুল
গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ১৭ জন প্রার্থী ছিল বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলামের। প্রশ্ন সরবরাহের বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে অন্তত ২০ লাখ টাকা নিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে ১৩ জন পাস করেছেন। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। পিএসসির প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে ৭ জুলাই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিষ্ঠানটির অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলামসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এর মধ্যে সাজেদুলসহ ছয়জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। কোন প্রক্রিয়ায় কোথা থেকে, কীভাবে প্রশ্ন ফাঁস হয়, পরীক্ষার্থী সংগ্রহ ও তাদের কীভাবে প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করানো হয়– সেসব বিষয়ে স্বীকার করেছেন তারা। একই সঙ্গে এ চক্রে জড়িত অন্য সদস্যদের বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন তারা। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করছে সিআইডি। পাশাপাশি তদন্তে নাম আসা পিএসসির বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। সাজেদুল ২০ বছর ধরে পিএসসির অফিস সহায়ক হিসেবে চাকরি করেছেন। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর সাময়িক বরখাস্ত করা হয় তাঁকে। তিনি এখন কারাগারে। চাকরিতে প্রবেশের কিছুদিন পর সাজেদুল জানতে পারেন, পিএসসির সে সময়ের গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী বিজি প্রেসের কর্মচারী আতিকুল ইসলামের মাধ্যমে পিএসসির বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেন। প্রশ্ন ফাঁস করে অল্প সময়ে অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার জন্য ওই চক্রে ঢোকার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এর পর আবেদ আলীর সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। প্রথম দিকে পিএসসির অধীনে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরির পরীক্ষায় আবেদ আলীকে অন্তত তিনজন প্রার্থী সংগ্রহ করে দিতেন সাজেদুল। বিনিময়ে পেতেন মোটা অঙ্কের টাকা। পরে বাড়াতে থাকেন প্রার্থী সংখ্যা। একপর্যায়ে সাজেদুল প্রশ্ন ফাঁস চক্রের অন্যতম একজন হয়ে ওঠেন। নিজেই প্রশ্ন ফাঁস করতেন। চক্রের অন্য সদস্যদের কাছে সেই প্রশ্ন বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নিতেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার মিরপুর এলাকার কথিত আবাসন ব্যবসায়ী আবু সোলায়মান মো. সোহেলের কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হবে। গত ২৬ এপ্রিল এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সোহেলের সঙ্গে আগে থেকেই পরিচয় ছিল তাঁর, কারণ একই চক্রের লোক তারা। ৪৬তম বিসিএসের জন্য সাজেদুলের সংগ্রহ করা প্রার্থীদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন শিক্ষার্থীও ছিলেন। গত ৯ মে প্রিলির ফল প্রকাশ হয়। এতে মোট ১০ হাজার ৬৩৮ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। সাজেদুল ১৭ প্রার্থীর কাছ থেকে অন্তত ২০ লাখ টাকা নিলেও সোহেলকে ১৩ প্রার্থীর জন্য ১৩ লাখ টাকা দিয়েছেন বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি করেছেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, সাজেদুলেরই এত প্রার্থী থাকলে চক্রের অন্য সদস্যদের আরও অনেক প্রার্থী ছিল বলে তাদের ধারণা। কার কত প্রার্থী ছিল এবং তারা কারা, সেসব বিষয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে সিআইডি। ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী (নন ক্যাডার) এর নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করেন সাজেদুল। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, পিএসসির সদস্য সৈয়দ গোলাম ফারুকের চেম্বারে থাকা ট্র্যাংকে থাকা প্রশ্নপত্র কৌশলে ‘চুরি’ করেন তিনি। এর পর পিএসসির ফটোকপি মেশিন থেকেই সেগুলোর ফটোকপি করেন। পরে মূল কপি যথাস্থানে রেখে দেন। পিএসসির ডেসপাস রাইটার খলিলুর রহমান উপসহকারী প্রকৌশলী পদের ৯৮ জন প্রার্থী দিয়েছিলেন সাজেদুলকে। তাদের পাস করাতে খলিলের কাছ থেকে তিনি ৩৫ লাখ টাকা অগ্রিম নিয়েছিলেন। সাজেদুল একই পরীক্ষার প্রশ্নের এক কপি দিয়েছিলেন আবেদ আলীকে। তাঁর কাছ থেকে অগ্রিম নিয়েছিলেন ৭৫ লাখ টাকা।