নবীগঞ্জে তাহসিন খুনের জেরে সংঘর্ষ আহত ২০০
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে সহপাঠীদের ছুরিকাঘাতে রাইসুল হক তাহসিন (১৯) নামে এক কলেজছাত্র নিহত হওয়ার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখাকে কেন্দ্র করে ফের দু’পক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত দুই শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। বুধবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া দফায় দফায় সংঘর্ষ রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চলছিল। কয়েক ঘণ্টার সংঘর্ষে পুরো নবীগঞ্জ শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ মুহুর্মুহু টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। সংঘর্ষে নবীগঞ্জ শহরের বিপণি বিতান রাজা ম্যানসনসহ অর্ধশতাধিক দোকানপাট ভাঙচুর হয়েছে। এ ঘটনার সময় পৌর শহরের ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছিল।
স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে নবীগঞ্জ শহরের ওসমানী রোডের চৌদ্দহাজারী মার্কেটের সামনে তাহসিনকে ছুরিকাঘাত করে সহপাঠীরা। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। বুধবার বিকালে তার লাশ নবীগঞ্জে আনা হয়। সন্ধ্যায় জানাজা শেষে তাকে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করতে সন্ধ্যায় রাজা ম্যানসনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে যায় দু’পক্ষ। এসময় কথা কাটাকাটি থেকে কুশি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ খালেদ ও পৌর কাউন্সিলর নানু মিয়ার লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে এ সংঘর্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করে। সংঘর্ষের খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দীর্ঘক্ষণ চেষ্টার পরও পরিস্থিতি শান্ত করতে ব্যর্থ হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এরপরও দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাসুক আলী জানান, আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করছি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, নবীগঞ্জে বাকবিতণ্ডার জেরে দু’দফা সংঘাত শেষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন কলেজছাত্র সৈয়দ তাহসিন। কথিত কিশোর গ্যাং নেতা মুন্না ও জুয়েলের নেতৃত্বে তাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। শহরের ব্যস্ততম ওসমানী রোডের চৌদ্দহাজারী মার্কেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করেছে। গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি। নিহত সৈয়দ তাহসিন নবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। তিনি জেলার বানিয়াচং উপজেলার কালাইনজুড়া গ্রামের সৈয়দ রাজন মিয়া ও মুড়াউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পপি সুলতানা দম্পতির একমাত্র সন্তান। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টায় শহরের ওসমানী সড়কের চৌদ্দহাজারী মার্কেটের সামনে সৈয়দ রাইসুল হক তাহসিন, মাহিসহ (১৯) পাঁচ জন সহপাঠীর সঙ্গে অপর গ্রুপের গ্যাং লিডার মান্না (১৯), জুয়েল (২০), রিহাদ (২০), রিমনসহ (১৯) ৭-৮ জনের বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে মান্না-জুয়েল-রিহাদ, রিমনসহ ৭-৮ জন তাহসিনসহ তার সহপাঠীদের বেধড়ক মারধর করে। একপর্যায়ে তাহসিনের পেটে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় মাহি ও অপর গ্রুপের জুয়েল আহত হয়। গুরুতর আহত তাহসিনকে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। পরে সেখান থেকে এম্বুলেন্সে করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে তিনি মারা যায়।