Image description
রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে পিছিয়ে এনবিআর
রাজস্ব আহরণে পিছিয়ে পড়ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না সংস্থাটি। এখন পর্যন্ত আদায়ের চিত্র ইঙ্গিত দিচ্ছে, বছর শেষে বড় রাজস্ব ঘাটতির মুখে পড়তে যাচ্ছে সরকার। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে রয়েছে এনবিআর। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই গতিতে রাজস্ব আদায় হলে চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জিত হবে না। এবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুসারে, অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের চাপ আছে। এ ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতির মুখে পড়তে পারে এনবিআর। গত অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি হয়েছিল। এবার ঘাটতি আরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের গতি দেখে লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরকে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়। এদিকে আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ পাওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে, প্রতিবছর রাজস্ব আদায়ের স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির চেয়ে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় করতে হবে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে রয়েছে রাজস্ব আহরণকারী সংস্থাটি। গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর আমাদের সময়কে বলেন, রাজস্ব খাতে বড় সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে। কেননা, অভ্যন্তরীণ খাত থেকে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। কর-জিডিপির অনুপাত সবচেয়ে কমÑ এমন দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। এই রাজস্ব প্রশাসন দিয়ে একটি বিশাল লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। এবার বড় ঘাটতিতে পড়বে এনবিআর। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আমদানি-রপ্তানি, ভ্যাট ও আয়কর- এই তিন খাতের মধ্যে কোনোটিতেই সাত মাসের লক্ষ্য পূরণ হয়নি। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ১৫ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আহরিত হয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে রাজস্ব আহরণে পিছিয়ে আছে ১৭ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। তবে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশ। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি ঘাটতিতে আছে আমদানি-রপ্তানি খাতে। আলোচ্য খাতে ঘাটতির পরিমাণ ৭ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। আর আয়কর খাতে লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে আছে ৭ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। ভ্যাট খাতে পিছিয়ে আছে ৩ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। এদিকে বাজেট দেওয়ার পরই এনবিআরের এই লক্ষ্যমাত্রাকে বাস্তবসম্মত নয় বলে উল্লেখ করেছিল বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। রাজস্ব আহরণে যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে তা আদায় সম্ভব নয় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংস্কার ছাড়াই বিপুল রাজস্ব আদায় বরাবরের মতো এবারও চাপে থাকতে হবে এনবিআরকে। এ ছাড়া বিশাল অঙ্কের রাজস্ব আহরণের জন্য যে ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তন, নীতি সংস্কার এবং অন্যান্য সক্ষমতা- অনেক বেশি অসঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে করেন তারা। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ জানান, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধিতে অটোমেশনের বিকল্প নেই। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর অনুপাতে করদাতার হার অত্যন্ত কম। ১৭ কোটি মানুষের দেশে মাত্র ৪০ লাখ মানুষ কর দেন, যা মোটেও কাম্য নয় এবং কর প্রদানের এই নিম্নহার বিদ্যমান করদাতাদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে। এ ছাড়া করদাতাদের এ স্বল্প হার দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাকে শ্লথ করছে।