টুডে রিপোর্ট
বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এ দেশে সকল ধর্মের মানুষ একসাথে শান্তিপূর্নভাবে বসবাস এবং একইসাথে ধর্মীয় অধিকার অনুশীলন করার মাধ্যমে গোটা বিশে^র সামনে একটি অনবদ্য নজির স্থাপন করেছে। এই দেশের আরেকটি ব্যতিক্রমধর্মী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কিছু আদিবাসি জনগোষ্ঠী ছাড়া নৃতাত্বিকভাবে বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষের পরিচয় তারা বাঙ্গালী, বাংলা ভাষায় কথা বলে। কিন্তু এতটা সৌহার্দ্যপূর্ন অবস্থানের পরও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরাও প্রায়ই রাজনৈতিক নিপীড়নের সম্মুখীন হয় এবং আওয়ামী লীগের মতো কিছু রাজনৈতিক দল তাদেরকে ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করে। এটি ঠিক যে, রাজনৈতিক সহিংসতা অনেক সময় সংখ্যালঘুদেরও প্রভাবিত করেছে, বিশেষ করে সরকার পরিবর্তনের সময়। তবে অধিকাংশক্ষেত্রে বাস্তবতার তুলনায় বরং বাড়িয়েই বলা হয়েছে।
সর্বশেষ শেখ হাসিনা সরকারের সাম্প্রতিক পতনের পরও কিছু স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা রাজনৈতিক সহিংসতার ভিকটিম হয়েছে। তবে এ ধরনের ঘটনাগুলো ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে ঘটেনি। বরং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বেশ কিছু সদস্য আওয়ামী লীগের সাথে খুব উগ্রভাবে যুক্ত ছিল এবং ছাত্রদের ওপরও বেশ কিছু ক্ষেত্রে চড়াও হওয়ার কারণে তারা এরকম পাল্টা প্রতিক্রিয়ার ভিকটিম হয়েছে। এখানে ধর্মীয় নয় বরং রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাই মূখ্য। কেননা, হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যে জনরোষের শিকার হয়েছে, সেখানে হিন্দুদের তুলনায় বরং মুসলিম নেতাকর্মীর সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেশি। এরপরও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিছু গোষ্ঠী হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর কথিত হামলার বিষয়ে গুজব ও ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছে। এসব সংবাদ পরিবেশনকালে পুরনো ছবি ও ভুয়া ভিডিওগুলোকে জুড়ে দিয়ে প্রচার করা হয়েছে। মর্মান্তিক হলেও সত্য যে, এ ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশনের বেশ কিছু ঘটনা প্রতিবেশি দেশের মিডিয়া আউটলেটের মাধ্যমেও হয়েছে। এরকম কিছু অপপ্রচারের ব্যবচ্ছেদ করার চেষ্টা করবো এই লেখনিতে।
বিভ্রান্তিকর একটি অপপ্রচার করা হয় বাবা বেনারস নামের একটি ভেরিফায়েড টুইটার একাউন্ট থেকে। এখানে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয় যে, জামায়াতে ইসলামী ঢাকার একটি হিন্দু হোস্টেলে হামলা চালিয়েছে। ভিডিওটি ১ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের এবং এতে দেখা যায় হোস্টেলের ছাত্ররা হামলা থেকে বাঁচার জন্য ছাদের রেলিং ধরে ঝুলে থাকার চেষ্টা করছে। ভিডিওটিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘ঘটনার সময় কিছু ছাত্র নিচে পড়ে যায় এবং কিছু ছাত্র ভয়ে লাফিয়ে পড়ে। তারা বেঁচে আছে কি না তাও নিশ্চিত নয়।’ তবে এই দাবি ও ভিডিওটির সত্যতা ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। বাংলাদেশের কোনো হিন্দু হোস্টেলে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তা স্থানীয় গণমাধ্যম ও কর্তৃপক্ষ ব্যাপকভাবে কভার করত। তদন্তে আরো দেখা গেছে, ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে সাম্প্রদায়িক হামলার কোনো সম্পর্ক নেই।
ভিডিওটি প্রকৃতপক্ষে চট্টগ্রামের মুরাদপুরের। গত ১৬ জুলাই চট্টগ্রামের মুরাদপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়। ওই দিন বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ থেকে পালিয়ে গিয়ে ১৫-২০ ছাত্রলীগ সদস্য পাঁচতলা ভবনের ছাদে আশ্রয় নেয়। ঘটনার সময় ছাত্রলীগের সদস্যরা পাইপ দিয়ে ওপরে ওঠার চেষ্টা করলে তাদের মধ্যে অন্তত তিনজন ছাদ থেকে পড়ে যান। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজকের পত্রিকা ১৭ জুলাই রিপোর্ট করেছিল যার শিরোনাম ছিল "চট্টগ্রামে বিক্ষোভকারীদের পালানোর সময় পাঁচতলার ছাদ থেকে পড়ে তিন ছাত্রলীগ কর্মী আহত।" জাতীয় দৈনিক দেশ রূপান্তরের একটি প্রতিবেদন নিশ্চিত করেছে যে, কথিত ভবনটিকে ঢাকার একটি হিন্দু ছাত্রাবাস হিসেবে আখ্যায়িত করার মাধ্যমে মিথ্যাচার করা হয়েছে। ভবনটি চট্টগ্রামের মুরাদপুরের বেলাল মসজিদের কাছে অবস্থিত এবং ভবনটির নাম মীরদাদ ম্যানশন।
একই ভেরিফায়েড টুইটার (বর্তমানে এক্স) একাউন্ট থেকে আরেকটি ভিডিও প্রচার করা হয় গত ৬ আগষ্ট। এই ভিডিওতে একটি ভাস্কর্য থেকে ঝুলন্ত একজন ব্যক্তির মৃতদেহ দেখানো হয় এবং দাবি করা হয় জামায়াতের লোকজন এই বয়স্ক হিন্দু ব্যক্তিকে ফাঁস দিয়ে হত্যা করেছে। কিন্তু ফ্যাক্ট চেক করতে গিয়ে ‘কর্পোরেট সংবাদ’ নামের অনলাইন একটি নিউজ পোর্টাল থেকে জানা যায়, নিহত ব্যক্তি কোনো হিন্দু ব্যক্তি নন। বরং তিনি হলেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম হিরন (৭৫)। আজকের পত্রিকার ঝিনাইদহ প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল মাসুদও হিরনের নাম পরিচয় নিশ্চিত করেছেন।
একইভাবে, ভারতীয় স্থানীয় সংবাদ আউটলেট 'সুদর্শন বাংলা'-এর একটি ভেরিফায়েড এক্স একাউন্ট থেকে ১৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রচার করা হয় যেখানে দাবি করা হয়, মুসলিম মহিলারা হিন্দু মহিলাদের বেঁধে রেখেছে। ভিডিওটিতে দেখা যায় যে, একদল তরুণী আরও দুই তররুীকে একটি খুঁটির সাথে বেঁধে রেখেছে। ‘আজকের পত্রিকা’ নামের একটি সংবাদপত্রের ফ্যাক্ট চেক বিভাগ অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি গত ১৭ জুলাইয়ের। এটি ঢাকার বদরুন্নেসা কলেজের একটি ঘটনা। যেখানে ছাত্র আন্দোলন চলাকালে কলেজের ছাত্রলীগের দুই অত্যাচারী নেত্রীকে শিক্ষার্থীরা বেঁধে রেখেছিল। এর সাথে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বা হিন্দু নারীকে নির্যাতনের কোনো সম্পর্কই নেই।
আরেকটি ছবি প্রচার করা হয় 'রনিত অ্যান্টিল' নামের একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে। ছবিটিতে বাংলাদেশের এক হিন্দু নারীর ওপর যুবকদের অত্যাচারের দাবি করা হয়েছে। ছবির নীচে একটি ক্যাপশনও জুড়ে দেওয়া হয়েছে যেখানে লেখা আছে, "আলহামদুলিল্লাহ, এভাবেই হিন্দুদের শিক্ষা দেওয়া উচিত। সব হিন্দুই ভারতের এজেন্ট।” পরবর্তীতে ভারতেরই ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা অল্ট নিউজ একটি প্রতিবেদনে জানায়, যুবতী নির্যাতিত হওয়ার এ ছবিটি ২০২১ সালের এবং ঘটনাটি ভারতেই ঘটেছিল বাংলাদেশে নয়। পরবর্তীতে বিবিসি বাংলার আরেকটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, ছবিটি এবং সংশ্লিষ্ট ভিডিওটি ভারতের ব্যাঙ্গালোরের রামামূর্তি নগর এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্টে রেকর্ড করা হয়েছে। এই ঘটনার সাথে একদল বাংলাদেশি জড়িত ছিল। তরুনীটি মূলত আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের ভিকটিম। এ ছবির সাথে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কোনো সম্পর্ক নেই।
'দ্য জয়পুর ডায়ালগস' নামে একটি ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্ট থেকেও একটি তরুণীর মুখে টেপ এবং পিঠের পিছনে হাত বেঁধে থাকা একটি ৩০ সেকেন্ডের ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। আরো দাবি করা হয়েছে যে, এই ভিডিওটি বাংলাদেশের হিন্দু মহিলাদের বর্তমান পরিস্থিতিরই প্রতিচ্ছবি যেখানে নারীরা নিয়মিতভাবে খুন এবং ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। অথচ, ভিডিওটির ফ্যাক্ট চেকিং করে দেখা যায়, এটি সাম্প্রতিক সময়ের কোনো ভিডিও নয়। চলতি বছরের মার্চে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী অবন্তিকা যৌন হয়রানির প্রতিবাদে নিজ বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তিনি তার আত্মহত্যার জন্য একজন শিক্ষক ও সহপাঠীকেও দায়ী করেছিলেন। সেই অবন্তিকার ছবি আবার নতুন করে অপপ্রচারের উদ্দেশ্যে ভিন্ন নামে সামনে আনা হয়েছে।
এগুলোর বাইরে আরো কিছু প্রোপাগান্ডাও চালানো হয়েছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। স্বার্থান্বেষী একটি মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রংপুরে আগে থেকেই মৃত কাউন্সিলর হারাধন রায়কে নতুন করে হত্যাকান্ডের ভিকটিম বানিয়েছে। পাশাপাশি, রংপুরের সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও সম্পত্তিতে হামলা বা ভাঙচুরের অভিযোগ তুলেছে। পরবর্তীতে, রংপুর মহানগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে ‘বৈষম্যের বিরুদ্ধে নাগরিক ঐক্য’ ব্যানারে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তারা বলেছেন যে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন গুজব ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোনো সদস্যই ভারতে পালিয়ে যায়নি। রংপুরে আগের মতোই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট আছে।
আরেকটি ভাইরাল ভিডিওতে হিন্দু এক নাগরিকের দোকানে আগুন দেওয়ার মিথ্যা দাবি করা হয়েছে। ডিসমিস ল্যাবের
https://dismislab.com/) তদন্ত থেকে জানা যায় যে, এই ভিডিও ফুটেজটি জুলাই মাসে একটি সাধারণ অগ্নিকান্ডের ঘটনা। শেখ হাসিনার পদত্যাগের বেশ কয়েকদিন আগে ল²ীপুরের মজু চৌধুরী হাটে ১৫টি দোকান আগুন লেগে পুড়ে যায়। এর সাথে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কোনো সম্পর্ক নেই। আরেকটি গুজবে দাবি করা হয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার লিটন দাসের বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ ডিসমিস ল্যাব নিশ্চিত করেছে যে এই তথ্যটিও অসত্য ছিল। লিটন দাস নিজেই ফেসবুকে তার বাড়ি পোড়ানোর তথ্যটি অসত্য বলে জানিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের সাত ব্যক্তি আত্মীয়দের সাথে দেখা করতে এবং হিন্দুদের একটি উৎসবে অংশ নিতে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। সেখানে সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী (বিএসএফ) তাদের আটক করে। পরে বিএসএফ তাদের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে হস্তান্তর করে। অথচ প্রাথমিকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং বেশ কিছু গণমাধ্যমেও দাবি করা হয়েছিল যে, ওই সাতজন হিন্দু ব্যক্তি ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরা হামলা এবং ভুল তথ্যের বিস্তারের বিষয়ে রিপোর্ট করেছে। বাংলাদেশী সামাজিক কর্মী এবং লেখক অনুপম দেবাশীষ রায় স্বীকার করেন যে, হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর বিচ্ছিন্ন কিছু হামলার ঘটনা ঘটলেও সংখ্যাগুলোকে অতিরঞ্জিত করে প্রচার করা হচ্ছে। অন্যদিকে, আল জাজিরায় বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতীয় মিডিয়ার বেশিরভাগ প্রতিবেদন তথ্যসূত্রহীন। এগুলোর ওপর ভর করে বিশ্লেষণ বা পর্যবেক্ষন আসা কাম্য নয়।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর কিছু হামলার কথা স্বীকার করেছেন কিন্তু তিনিও জোর দিয়ে বলেছেন যে ভুল তথ্য ছড়ানোর জন্য অনেক নকল ভিডিও এবং পুরানো ছবিও ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি আরো দাবি করেন যে, ভারতীয় মিডিয়া থেকে তাকে হিন্দুদের পুড়িয়ে মারার অভিযোগ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কিছু ছবিও দেখেছিল। কিন্তু তিনি এর কোনোটারই সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেননি।
জার্মান মিডিয়া আউটলেট ডয়চে ভেলে গত ৭ আগস্ট জানিয়েছে যে, বাংলাদেশে ধর্ষণ ও সহিংসতার গুজব ছড়ানোর জন্য পুরনো ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে। "ফ্যাক্ট চেক: ফলস ক্লেইমস ফুয়েল এথনিক ক্লিনজিং ইন বাংলাদেশ" শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে ডয়চে ভেলে আরো জানায় যে, অসংখ্য ভারতীয় মিডিয়া আউটলেটের পাশাপাশি ফেসবুক, টুইটার, এক্স, ইউটিউব এবং টিকটকের মতো প্লাটফর্মগুলো সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টির অসৎ উদ্দেশ্যে পুরানো ছবি এবং ভিডিও ব্যবহার করছে। ডয়চে ভেলের এই প্রতিবেদনে ক্রিকেটার লিটন দাসের বাড়িতে হামলা ও হিন্দু নারী ধর্ষনের দাবি খন্ডন করা হয়েছে।
এদিকে, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস এবং ওয়াশিংটন পোস্টের মতো আমেরিকান মিডিয়া আউটলেটগুলিও বাংলাদেশে হিন্দুদের বাড়িতে হামলার বিষয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রোপাগান্ডা ও গুজব ছড়ানোর ব্যাপারে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এসব প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ছাত্রজনতা ও সাধারণ মানুষ সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধে ইতিমধ্যেই কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে এবং একইসাথে ইসলামপন্থী দলগুলোসহ মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলি তাদের সদস্যদেরকে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য কঠোর সতর্কতা জারি করেছে।
বাংলাদেশের বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার নিন্দা করেছে এবং দায়ীদেরকে বিচারের আওতায় আনার প্রতিশ্রæতি ব্যক্ত করেছে। সর্বশেষ গত ১১ আগস্ট অন্তবর্তী সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ঘিরে উদ্বেগের কথা স্বীকার করেন এবং শীঘ্রই স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে মর্মে আস্থা প্রকাশ করেন। কুটনীতিক ও সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় তিনি সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোর প্রতিবেদন সম্পর্কেও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন যে, অল্প কিছু হিন্দু পরিবারের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে, তবে সেগুলো ধর্মীয় কারণে নয় বরং রাজনৈতিক কারণে।”
এবারের গণ অভ্যুত্থান ও পরবর্তীতে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনকে কেন্দ্র করে যেভাবে অপপ্রচার করা হলো তা নজিরবিহীন। এর মাধ্যমে আরো একবার আমাদের শত্রæ-মিত্র চেনার সুযোগ হলো। জাতিগতভাবে খুব অল্পেই ভুলে যাওয়ার একটি প্রবণতা থাকলেও আশা করি সাম্প্রতিক অপপ্রচারের এই চালচিত্র আমাদের মনে থাকবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন