সরবরাহ বাড়ায় বাজারে শীতকালীন সবজির দাম এখন পড়তির দিকে। দেশের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোয় ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ৫-৮ টাকায়। শহরাঞ্চলে তা ১০-২০ টাকার মধ্যে।
সরবরাহ বাড়ায় বাজারে শীতকালীন সবজির দাম এখন পড়তির দিকে। দেশের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোয় ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ৫-৮ টাকায়। শহরাঞ্চলে তা ১০-২০ টাকার মধ্যে। একই সঙ্গে শিম, মুলা, আলু, বাঁধাকপি, পেঁপেসহ সব ধরনের সবজির দাম এখন কেজিতে ৩০-৪০ টাকার মধ্যে। যদিও শীতের আগে এসব বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৮০ টাকার বেশিতে। সবজির দাম কমায় গত মাসে মূল্যস্ফীতিও কমে এসেছে। তবে শীতের শেষে বাজারে সরবরাহ কমে এলেও রমজানের কারণে এর মধ্যে কিছু সবজির চাহিদা থাকবে বেশি। এ অবস্থায় পণ্যগুলোর বাজার আবারো অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার জোর আশঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে রমজানের আগেই মূল্যস্ফীতি আরো প্রকট আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।
তাদের ভাষ্যমতে, শীতের শেষ দিকে এমনিতেই সবজির দাম কিছুটা বাড়তে শুরু করে। আসন্ন রমজানের বাড়তি চাহিদার মধ্যে সবজির বাজার সহনশীল পর্যায়ে রাখতে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
খাদ্য মূল্যস্ফীতিকে জোরালো করে তোলার ক্ষেত্রে সবজির দাম বরাবরই জোর ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল্যস্ফীতি হিটম্যাপ অনুযায়ী, খাদ্য মূল্যস্ফীতি হিসাবের ক্ষেত্রে সবজির ভর ধরা হয় ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ব্যাপক আকার ধারণ করার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছিল সবজির মূল্যবৃদ্ধি। এর মধ্যে জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে জুলাইয়ে সবজির দাম বেড়েছে ৩১ দশমিক ২ শতাংশ। আগস্টে বেড়েছে ২৬ দশমিক ২ শতাংশ। আর সেপ্টেম্বরে এ হার ছিল ২২ দশমিক ৭ শতাংশ। বাজারে শীতকালীন সরবরাহ থাকায় এখন এসব সবজির দাম নিম্নমুখী। এ কারণে খাদ্য মূল্যস্ফীতিও কিছুটা কমেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে প্রায় তিন বছর ধরে। গত ২০২৪ পঞ্জিকাবর্ষে দেশের গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আর অর্থবছরের হিসাবে গত দুই অর্থবছরজুড়েই দেশের গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ শতাংশের ওপরে। এর মধ্যে সবজির দাম কমায় গত মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার আগের মাসের তুলনায় কিছুটা কমেছে।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘জানুয়ারিতেও খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার তুলনামূলক কম থাকবে। সবজির ভরা মৌসুমে এখন আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম কম। তবে শীতের শেষ দিক থেকে দাম বাড়তে থাকবে। কিন্তু রমজানে বাজারে মূল্যস্ফীতি কতটা বাড়বে তা নির্ভর করে সরকারের বাজার ব্যবস্থাপনার ওপর। বাজারে শুল্কছাড়ের প্রভাব কেমন পড়ছে তা জোরালোভাবে মনিটরিং করা উচিত। এখনকার মতো অবস্থা থাকলে মূল্যস্ফীতি বেশি হারে বাড়তে পারে। কারণ মনিটারি পলিসির প্রভাবও বাজারে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না।’
বাজারদর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন বাজারে এখন সবজির মূল্য সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। গতকাল নরসিংদী সদরে টমেটো বিক্রি হয়েছে ৩০-৩৫ টাকা কেজিতে, যা দুই মাস আগেও ৮০ টাকার বেশিতে বিক্রি হয়েছিল। দেশী মুলার কেজিপ্রতি দাম এখন ১০-১৫ টাকা। শিমের কেজি ৩০ টাকা। আর ডাঁটা, পেঁপে, বেগুন ও মিষ্টিকুমড়াও কেজিপ্রতি ২৫-৩০ টাকার মধ্যে। আর ফুলকপি ও বাঁধাকপি পাওয়া যাচ্ছে ১০-১৫ টাকায়। কোনো কোনো স্থানে তা আরো কমে পাওয়া যাচ্ছে। রাজধানীর বাজারেও সবজির দাম একই রকম। এখানে প্রতি কেজি টমেটো ৩০-৪০ টাকা, করলা ৪০, বরবটি ৫০, মুলা ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতি পিস ফুলকপি ১৫-২০ ও বাঁধাকপি ২৫ টাকা।
দেশের কৃষিপণ্যের বাজারদর ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক মো. মাসুদ করিম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সাধারণত মার্চ থেকে সবজির দাম বাড়তে থাকে। দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতিও বাড়বে। তবে এখন দাম কম থাকায় ভোক্তার জন্য স্বস্তিদায়ক হলেও তা কৃষকের জন্য সুখকর নয়। তাদের উৎপাদন খরচও উঠছে না। তাই সবজি সংরক্ষণের জন্য আমরা মাল্টিপারপাস স্টোর নির্মাণের চিন্তা করছি।’
গত ৯ ডিসেম্বরেই ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হয় লিটারে ৮ টাকা। এরপর সম্প্রতি আবারো দাম বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। তবে এ চিঠি আমলে নিয়ে রমজানের আগে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ালে তা মূল্যস্ফীতিতেও বড় প্রভাব ফেলবে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সবজি পচনশীল পণ্য হওয়ায় তা বেশি দিন সংরক্ষণ করে রাখা যায় না। তবে আমরা সবজি সংরক্ষণের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি কাজ দেখছি। প্রাইভেট কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাজও দেখা হচ্ছে। যদি ভালো কিছু হয়, তাহলে সবজি মজুদ করার কোনো কর্মসূচিতে যেতে পারি আমরা। তবে এ রমজানে আমাদের তেমন কিছু করার নেই। দুই মাস পর বাজারে সবজি সরবরাহ কেমন হবে তা এখনই পূর্বাভাস দেয়া যাচ্ছে না। তবে অবশ্যই সবজি সরবরাহ কিছুটা কমবে। আলু-পেঁয়াজ হয়তো ঠিক থাকবে।’