Image description
প্রধান উপদেষ্টার কাছে আজ সংস্কার কমিশনের শতাধিক সুপারিশ জমা হচ্ছে : আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, ডকট্রিন অব লেজিটিমেট এক্সপেকটেশনের লঙ্ঘন : প্রশাসন ক্যাডাররা

সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের অধীন জারিকৃত রুলস-অব-বিজনেস ১৯৯৬। এ রুলস অব বিজনেসের আলোকে বিন্যস্ত মন্ত্রণালয়সমূহের সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী সচিবালয়ের এন্ট্রি পদ উপসচিব নয়, সহকারী সচিব। উপসচিব পদের ফিডার পদ হচ্ছে সিনিয়র সহকারী সচিব এবং সিনিয়র সহকারী সচিবের ফিডার পদ সহকারী সচিব। এসব পদসমূহ বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের নিজস্ব পদ। ক্যারিয়ারের থেকে মাঝপথে এসে এই ধরনের পরিবর্তন ‘ডকট্রিন অব লেজিটিমেট এক্সপেকটেশন’-এর লঙ্ঘন। স্বাধীন বাংলাদেশে ঐতিহাসিকভাবেই উপসচিব পদে মূলত প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারাই কাজ করে থাকেন।

এ বিষয়ে করা রিট মামলায় উচ্চ আদালতে আইনি লড়াই শেষে ২০১০ সালের ২৪ মে আপিল বিভাগ চূড়ান্ত আদেশে উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে ৭৫ শতাংশ নিয়োগ প্রদান বৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছে। আদালতের রায় উপেক্ষা করে এ ধরনের সুপারিশের প্রস্তাব একদিকে আদালত অবমাননার শামিল, অপরদিকে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে দুর্বল করার শামিল। সরকারের নীতি বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত কোর অফিসগুলোতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা বাস্তবায়ন করে আসছে। পাশাপাশি এই সুপারিশ ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য বৈষম্যমূলক। এ সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে প্রশাসনে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে পারে এবং রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা দুর্বল হতে পারে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিপাকে পড়তে পারেন এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা। জনপ্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের কোটা ৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫০ শতাংশ করার সুপারিশ বাস্তবায়ন হলেন জনপ্রশাসনের আদর্শ কাঠামো (পিরামিড কাঠামো) ভেঙে গিয়ে মাথা মোটা হয়ে গেছে। আদর্শ নিয়মে নিচের স্তরের পদগুলোতে কর্মকর্তা বেশি থাকে আর ওপরের স্তরে কম হয়। কিন্তু বর্তমানে প্রশাসনের কাঠামো উল্টো পিরামিডের মতো হচ্ছে বলে জানা গেছে। গত ৫ আগস্টের পর যখন পতিত ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদেরা মাঠে অনুপস্থিত ছিলেন, পুলিশ অকার্যকর ছিল, তখন স্থানীয় সরকারের নানা পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়রপদসহ নানা পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা সরকারকে কার্যকর দায়িত্ব পালন করেছে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা এবং সরকারের নীতি বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত ‘কোর’ অফিসগুলোতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা কাজ করেন। তারপর সংস্কার কমিশনের এ সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে প্রশাসনে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে পারে। জনপ্রশাসনের আদর্শ কাঠামো (পিরামিড কাঠামো) ভেঙে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন দেখার পড়ে প্রতিক্রিয়া ও কর্মসূচি ঘোষণা দিতে পারে বলে একাধিক প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জনপ্রশাসন সংস্কার নিয়ে কমিশনের প্রতিবেদনে শতাধিক সুপারিশ থাকছে এবং সেগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব। আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন কমিশনের চেয়ারম্যান। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। কমিশন প্রধান বলেন, আমাদের রিপোর্ট জমা দেয়ার কথা ছিল গত মাসে, কিন্তু আমরা আমাদের কাজের কারণে পারিনি। কারণ, আমরা মাঠে গিয়েছি, লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় গিয়ে কথা বলেছি, অনলাইনে আমরা মতামত নিয়েছি। এগুলোর ভিত্তিতে আজকে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে স্বাক্ষর করব। আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় আমরা প্রধান উপদেষ্টার অফিসে যাব এবং তার কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করব। একই সঙ্গে কালকে আইন কমিশনও তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে। প্রতিবেদনে ১০০টির বেশি সুপারিশ থাকছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন এর বাইরে আমি কিছু জানাতে পারবো না। এ সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর সেটি হবে পাবলিক ডকুমেন্ট। ওয়েবসাইটে দেয়া হবে, সবাই জানাবেন। জমা দেয়ার পরে সবাই জানুক এতে ভুল বোঝাবুঝির অসুবিধা থাকে না। এরপর কমিশন প্রধানসহ সদস্যরা প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেন। স্বাক্ষর শেষে বের হওয়ার সময় মুয়ীদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা যে সুপারিশ করেছি সেগুলো সবই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। অসম্ভব কিছু হলে তো সেগুলো সুপারিশ করতাম না। সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কি না সেটা তো এখন সরকার বুঝবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, আদালতের রায় উপেক্ষা করে এ ধরনের সুপারিশের প্রস্তাব একদিকে আদালত অবমাননার শামিল, অপরদিকে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে দুর্বল করার শামিল। এই সুপারিশ ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য বৈষম্যমূলক। তার পর প্রতিবেদন দেখার পড়ে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।

জানা গেছে, অতীতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন (২০০০) এবং বেতন ও চাকরি কমিশন (১৯৭৭) এবং প্রশাসনিক ও পরিষেবা পুনর্গঠন কমিটি (১৯৭২)-এর উপসচিব, যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদগুলো নিয়ে একটি পৃথক সিনিয়র সার্ভিস গঠন করার সুপারিশ করেছিল। এমন পরিস্থিতিতে কমিশন মনে করে, মন্ত্রণালয়ের উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত পদগুলো নিয়ে ‘সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস’ গঠিত হতে পারে। সরল সার্ভিস থেকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ভিত্তিতে এসইএসে নিয়োগ করা হলে মেধার প্রাধান্য নিশ্চিত হবে। এর মাধ্যমে আন্ত সার্ভিস বৈষম্য দূর হবে। বাস্তবতার নিরিখে প্রশাসনিক সার্ভিসের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় বর্তমানে উপসচিব পদের ৭৫ শতাংশ ওই সার্ভিসের জন্য সংরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা রাখা আছে। আন্ত সার্ভিস বৈষম্য দূর করার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কমিশন প্রশাসনিক সার্ভিসের ৭৫ শতাংশ কোটা হ্রাস করে ৫০ শতাংশ করার বিষয়টি অধিকতর যৌক্তিক মনে করছে। অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ পদ অন্যান্য সার্ভিসের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তবে বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি মামলার রায় ও পর্যবেক্ষণ রয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টির আইনগত দিক পরীক্ষা করে দেখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিশনের একাধিক সদস্য জানান, ২৬টি ক্যাডারকে সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ১১ থেকে ১২টি সার্ভিসে ভাগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যেসব ক্যাডারের কাজকর্ম এক ধরনের বা বৈশিষ্ট্যের, সেসব ক্যাডারকে এক করে সার্ভিস করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ছোট দুটি ক্যাডারকে প্রশাসনিক (প্রশাসন) ক্যাডারের সঙ্গে মিশে যাওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সরকারের কার্যবণ্টন এবং পরিচালনার মূল ভিত্তি হচ্ছে সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের অধীন জারিকৃত রুলস-অব-বিজনেস ১৯৯৬। এ রুলস অব বিজনেসের আলোকে বিন্যস্ত মন্ত্রণালয়সমূহের সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী সচিবালয়ের এন্ট্রি পদ উপসচিব নয়, সহকারী সচিব। উপসচিব পদের ফিডার পদ হচ্ছে সিনিয়র সহকারী সচিব এবং সিনিয়র সহকারী সচিবের ফিডার পদ সহকারী সচিব। এসব পদসমূহ বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের নিজস্ব পদ। প্রশাসন সার্ভিস বিসিএস (সচিবালয়) এবং বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের একীভূত রূপ। ১৯৯০ সনে উভয় সার্ভিস একত্রিত হওয়ার পর থেকে সচিবালয় সার্ভিসের সব পদ প্রশাসন সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন) গঠন ও ক্যাডার আদেশ ২০২৪-এর তফসিলে সহকারী সচিব (এন্ট্রি পদ) হিসেবে ক্রমিক-৯ এ এবং সিনিয়র সহকারী সচিব পদ ৭ ক্রমিকে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাগণকে সরাসরি মাঠ প্রশাসনে পদায়ন করা হয় বলে প্রথম নিয়োগে সহকারী কমিশনার হিসেবে নিয়োগ/পদায়নের রীতি অনুসরণ করা হয়। সরকারি কর্মকর্তারা বিভাগীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এবং অন্যান্য শর্ত পূরণ করার পর ‘সিনিয়র সহকারী সচিব’ হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন। কিন্তু পরবর্তী ধাপে উপসচিব পদোন্নতির ক্ষেত্রে এই সিনিয়র সহকারী সচিবগণ বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছেন এবং অন্য সার্ভিসের কর্মকর্তাদেরকে (যারা সিনিয়র সহকারী সচিব নয়) উপসচিব পদে পদোন্নতির সুযোগ দেওয়ার জন্য ২৫% কোটা বরাদ্দ করা হয়েছে। অথচ উপসচিব তাদের সার্ভিসের পদ সোপনের কোন পদ নয়। সরকারের উচ্চ মহলের সাথে প্রকৃচির আঁতাত এবং সিভিল প্রশাসনকে দুর্বল করার অংশ হিসেবে সচিবালয়ের সাংগঠনিক কাঠামোকে উপেক্ষা করে এ কাজটি করা হয়েছে।

প্রায়শ ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, উপসচিব প্রশাসন ক্যাডারের পদ নয়, প্রশাসন ক্যাডারের পদ হচ্ছে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার। এ বক্তব্য প্রকৃত বিষয়কে যথাযথভাবে উপস্থাপন না করে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করার প্রয়াস। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাগণ ২৫০ বছরের ইতিহাসে কখনো উপজেলা নির্বাহী অফিসার কিংবা জেলা প্রশাসক হিসেবে পদোন্নতি পাননি। তারা সব সময় তাদের লাইন পদ তথা সিনিয়র সহকারী সচিব, উপসচিব ও যুগ্মসচিব ইত্যাদি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন। ইউএনও-ডিসিসহ তফসিলে উল্লেখিত অন্যান্য পদগুলো হচ্ছে তাদের পদায়নযোগ্য পদ, পদোন্নতিযোগ্য পদ নয়। মেধাভিত্তিক প্রশাসন বিনির্মাণে এটাই কাক্সিক্ষত ছিল যে, সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণের মধ্যে থেকেই পরবর্তী পদোন্নতিযোগ্য উপসচিব পদে তাদেরকেই পদোন্নতি দেয়া হবে। কিন্তু সেটি না করে পিএসসি’র পরীক্ষায় মেধার ভিত্তিতে এগিয়ে থাকা কর্মকর্তাদের পদোন্নতির সুযোগকে সংকুচিত করা হয়েছে এবং অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীদেরকে অন্যায্যভাবে ২য় সুযোগ দেয়া হচ্ছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। এতে করে উপসচিব পদোন্নতি প্রক্রিয়া শ্লথ হয়েছে। ফলশ্রুতিতে সিনিয়র সহকারী সচিব পদে কর্মরত ২০৩৮ জন কর্মকর্তার মধ্যে ৩০ ব্যাচের কর্মকর্তাগণ পদোন্নতির সব শর্তসমূহ পূরণ করার ২ বছর ৮ মাস অতিক্রান্ত হবার পরও অদ্যাবধি পদোন্নতি পাননি। ভবিষ্যতে যা আরো শ্লথ হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রশাসন ক্যাডারের সিনিয়র সহকারী সচিবগণকে তাদের পদোন্নতিযোগ্য এক-চতুর্থাংশ পদ হতে বঞ্চিত করার পর, বিষয়টিকে সম্পূর্ণ উল্টা স্রোতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। উপসচিব পদে প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী সচিব ব্যতীত অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাগণের পুনরায় নিয়োগ বা পদোন্নতি প্রাপ্তির সহজাত কোন অধিকার নেই। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে একজন সচিব/অতিরিক্ত সচিব থাকেন। তিনি মন্ত্রণালয়ের প্রিন্সিপাল অ্যাকাউন্টস কর্মকর্তা এবং প্রধান নির্বাহী। তাহার প্রধান কাজ মাঠপর্যায়ে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের উপর ভিত্তি করিয়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে যথাযথ কর্মপন্থা নির্ধারণ করতঃ সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করা। কর্মপন্থা নির্ধারণ হইলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হইতে সেই সিদ্ধান্ত কার্যে পরিণত করতে তত্ত্বাবধায়ন করার দায়িত্বও সচিবের উপর বর্তায়। এইরূপ কর্মপন্থা নির্ধারণ ও তাহা কার্যে পরিণত করিতে সচিবের সহিত যুগ্মসচিব ও উপসচিব সহায়ক ভূমিকা পালন করেন এবং তাহারা নির্বাহী সরকারের নির্বাহী অঙ্গ হিসেবে পরিচিত। সাধারণ প্রশাসন কার্য ব্যতিরেকে মাঠপর্যায়ে সরকারের উপরোক্তভাবে গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব থাকে বিভিন্ন পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হইতে বিভাগীয় কমিশনার পর্যন্ত সব কর্মকর্তাগণের উপর। প্রকৃতপক্ষে মাঠপর্যায় প্রশাসন এবং নির্বাহী বিভাগের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সহিত উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিবগণ সেতুবন্ধের মতো কার্য করেন। এই কারণেই বৃটিশ আমল হইতেই সচিবালয়ের উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদে সব সময়ই প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ নিয়োগ ও পদোন্নতি পাইতেন। একমাত্র ব্যতিক্রম ঝঝচ ঙৎফবৎ-এর মাধ্যমে সব ক্যাডার হতে উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদে নিয়োগ/পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছিল যা ১৯৮৯ সনেই পরিত্যক্ত হইয়াছে। যেহেতু চঝঈ-এর সুপারিশ পর্যায় হইতেই কর্মকর্তাগণ বিভিন্ন ক্যাডারে শ্রেণীভুক্ত হইয়া যায়, সচিবালয়ের প্রশাসনিক উপসচিব পদে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ব্যতিরেকে অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাগণের পুনরায় নিয়োগ বা পদোন্নতি প্রাপ্ত হবার কোনো সহজাত অধিকার নেই।

গত ২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশনে প্রশাসন ক্যাডারের নবীন কর্মকর্তারা জড়ো হন এবং তারা প্রশাসন ক্যাডারের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় আয়োজিত এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রশাসন ক্যাডারের নবীন কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং এই সিদ্ধান্ত তাদের প্রতি ‘ভয়াবহ অবিচার’ উল্লেখ করে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এ বিষয়ে করা রিট মামলায় উচ্চ আদালতে আইনি লড়াই শেষে ২০১০ সালের ২৪ মে আপিল বিভাগ চূড়ান্ত আদেশে উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে ৭৫ শতাংশ নিয়োগ প্রদান বৈধ ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরীসহ অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সরকারের নীতি বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত ‘কোর’ অফিসগুলোতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা কাজ করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, উপসচিব পদটি প্রশাসন ক্যাডারের সহজাত পদ বলে রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। সেটি উপেক্ষা করে এই অন্যায্য সুপারিশ প্রশাসন ক্যাডারের জন্য বৈষম্যমূলক। যেখানে অন্য সব ক্যাডার কর্মকর্তারা পঞ্চম গ্রেডে পদোন্নতির দুটি সুযোগ পাচ্ছেন, নিজের ক্যাডারের পঞ্চম গ্রেডে পদোন্নতির সুযোগ, উপসচিব পদে পদোন্নতির সুযোগ) সেখানে প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা পাচ্ছেন একটি উপসচিব পদে পদোন্নতির সুযোগ। গত ৩ অক্টোবর ৮ সদস্যের জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এ কমিশনের প্রধান করা হয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী। পরে কমিশনের সদস্য সংখ্যা আরো তিনজন বাড়ানো হয়। জনমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন ব্যবস্থা করে তুলতে এ কমিশন গঠন করা হয়। ৯০ দিনের (৩ মাস) মধ্যে প্রস্তুত করা প্রতিবেদন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাজে হস্তান্তর করতে বলা হয়। এরপর তিন দফা বাড়িয়ে কমিশনের মেয়াদ ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।