সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, একজন মায়ের জন্য ৮০০ টাকা মাসিক ভাতা কোনো কাজেই আসে না। এটি একটি প্রহসন। এটার কৌশল পাল্টাতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তার নকশা পুনরায় সাজাতে হবে। এটা নিয়ে আবার ভাবার সময় হয়েছে।
মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংকের আয়োজনে ‘বাংলাদেশে সামাজিক সুরক্ষার ভবিষ্যত’ এই কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ৮০০ টাকা দিয়ে আমরা নারীর কি ক্ষমতায়ন করব। আমরা যা করছি, সেটি হলো— ৮০০ টাকা তাকে যাতে মৃত্যুর দিকে ঠেলে না দেয়। এ প্রোগ্রামটি সেরকম হতে পারে না। পৃথিবীজুড়ে সামাজিক নিরাপত্তার ব্যয় করা হয় খুবই দুর্বল মানুষদের জন্য। এটি আমরা শিশুদের জন্য করতে পারি। রাষ্ট্রের দায়িত্ব আছে, তাদের নিরাপত্তা দেওয়া, শিক্ষা দেওয়া, তাদের সুস্থ রাখা।
সরকার এবং উন্নয়ন অংশীদারদের মাধ্যমে কীভাবে বেশ কয়েকটি উৎপাদনশীল অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রচেষ্টা করা হচ্ছে, তা তুলে ধরা হয়েছে কর্মশালায়। কার্যকর লক্ষ্যমাত্রা এবং বিতরণ নিশ্চিত করার জন্য ডিজিটালাইজড সরঞ্জাম ব্যবহারের মাধ্যমে এই কর্মসূচি সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মত দেন বক্তারা। কর্মশালায় যোগ দেন সরকারি কর্মকর্তা, উন্নয়ন অংশীদার, অনুশীলনকারী এবং শিক্ষাবিদরা।
দেশে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ। এ কর্মসূচির অধীন গর্ভবতী মায়েদের ৩৬ মাস পর্যন্ত মাসিক ৮০০ টাকা করে দেওয়া হয়। এছাড়া এ কর্মসূচির অধীনে বয়স্ক ও বিধবারা মাসে ভাতা পান ৫৫০ টাকা। প্রতিবন্ধীরা পান ৮৫০ টাকা। সামাজিক সুরক্ষা খাতের অধীনে এই অর্থ দেওয়া হয়। চলতি অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৬ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের প্রায় ১৭ শতাংশ।
শারমীন মুরশিদ বলেন, আমাদের যেসব উন্নয়ন সহযোগীরা কাজ করেন, তাদের পর্যালোচনায় বলা হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যয় ৪৬ শতাংশ করা, আবার টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশের সুপারিশ করা হয়েছে। অর্থাৎ সংস্থাগুলোর সঙ্গে টাস্কফোর্সের সুপারিশ মিলে যাচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি যদি সত্যিকারার্থে মানুষের কাছে পৌঁছাতে হয়, তাহলে এটিকে নির্ভুল করতে হবে। আমি অবাক হচ্ছি, এতদিন তা কেন হয়নি।
তিনি বলেন, ৫০ ভাগ মানুষ যারা পাওয়া দরকার কিন্তু পাচ্ছেন না, অর্থাৎ প্রকল্প ১ হাজার কোটির হলে ৫০০ কোটি নষ্ট হচ্ছে, এটি ভয়ঙ্কর। কি পদ্ধতিতে আমরা মানুষের কাছে পৌঁছাবো সেটিও জরুরি। ক্যাশ ট্রান্সফারের পদ্ধতিও খুব দক্ষ নয়।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, দরিদ্র মানুষের ঝুঁকি কমাতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি সম্প্রসারণ এবং শক্তিশালীকরণে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। এ কর্মসূচির পরিপূরক ‘নগদ প্লাস’ পরিষেবাগুলোর সঙ্গে নগদ-ভিত্তিক কর্মসূচিগুলো বৃদ্ধি করে দেশ দারিদ্র্য হ্রাসে আরও শক্তিশালী প্রভাব ফেলতে পারে।
অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের অন্তর্বর্তী কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, ‘নগদ অর্থের সাথে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। জীবিকা নির্বাহ প্রশিক্ষণ, আচরণগত পরিবর্তন এবং পুষ্টি গ্রহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা পরিষেবার সাথে সরাসরি আর্থিক সহায়তা একত্রিত করে - নগদ অর্থের সঙ্গে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি মানব পুঁজি তৈরিতে, দারিদ্র্যের চক্র ভাঙতে এবং সম্প্রদায়গুলোকে অর্থনৈতিক ও জলবায়ু-সম্পর্কিত ধাক্কার জন্য স্থিতিস্থাপক করে তুলতে সহায়তা করে।’