Image description

মহিউদ্দিন মোহাম্মদ  (Mohiuddin Mohammad) 

ছবির লোকটির নাম তৌহিদুল ইসলাম। যুবদল কর্মী। বাড়ি কুমিল্লা। চট্টগ্রামে ছোট চাকরি করতেন। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়ি আসেন। আসার পর নিজেও মৃত্যুবরণ করেন। এইভাবে, যেভাবে ছবিতে দেখছেন। কে মেরেছে? বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী।
 
কীভাবে মেরেছে?
তৌহিদের নামে কোনো মামলা নেই। জিডি নেই। নেই কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। সম্পূর্ণ বেআইনি ও অবৈধভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের নিরীহ নিরপরাধ নাগরিক তৌহিদুল ইসলামকে তারা বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। সাথে পুলিশের কেউ ছিলো না। বাড়িতে দুইবার তল্লাশী চালায়। ক্যাম্পে নিয়ে শুরু করে বর্বর, অকল্পনীয়, পাশবিক নির্যাতন। এবং একপর্যায়ে, নির্যাতনের সকল সীমা অতিক্রমের পর, তৌহিদুল মারা যান। ছবিতে তার হতবাক স্ত্রী-সন্তানকে দেখা যাচ্ছে।
 
এ সেনাবাহিনী কোন সেনাবাহিনী? এরা তারা, যারা সরাসরি ভোট চুরির দারোয়ান ছিলো। এরা তারা, যারা জাতিসংঘ মিশনের নামে বহির্বিশ্বে শান্তিরক্ষা (!) করে, কিন্তু নিজ দেশের নাগরিকদের হত্যা করে। ৫ আগস্টের পর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অনেকগুলো হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর অভিযোগ এসেছিলো, কোনোটির বিচার ইউনূস সরকার করেছে বলে শুনি নি। এবার সেই পুরাতন পদ্ধতিতে তুলে নিয়ে নির্যাতন ও হত্যা। এই সেই সেনাবাহিনী, যার একজন কর্ণেল নারায়ণগঞ্জে সাত খুন করেছিলো, র্যাবের পোশাকে। এই সেই সেনাবাহিনী, যার একজন মেজর, কক্সবাজারে একরামকে হত্যা করেছিলো। দেশবাসী শুনেছিলো, রেকর্ডে, গুলির আওয়াজ ও আব্বু তুমি কান্না করতেছো যে?
 
একরামের খুনি মেজরের কি বিচার হয়েছে? আমি শুনি নি।
্যাবের পোশাকে, ডিজিএফআইয়ের পোশাকে, যতো গুম-খুন হয়েছে, তার সিংহভাগের অভিযোগ সেনা সদস্যদের দিকে। কেন? এই খুনীরা কোথায়? বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কাউকে তো এদের বিচারের দাবিতে কথা বলতে দেখি না। নাকি তারা লিপ্ত গোপন আঁতাতে, সেনাবাহিনীর সাথে?
গরিব দেশগুলোয় গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি সেনাবাহিনী। পাকিস্তান এর ভালো উদাহরণ। আমাদের প্রশ্ন তোলার সময় হয়েছে, এতো বড় বাহিনী রাষ্ট্রের জন্য পোষা জরুরি কি না? জনগণ এ বাহিনীর খরচ জোগাবে কি না? নিহত তৌহিদুলের ট্যাক্স-মানি সেনাবাহিনীর বাজেটের অংশ ছিলো। যে-গাড়িতে করে তৌহিদুলকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিলো, হত্যার জন্যে, সে-গাড়ি তৌহিদুলদের টাকায় কেনা।
 
৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক বড় ঘটনা ঘটেছে। সেনাবাহিনী সম্ভবত এটা ভুলে গিয়েছে। না হলে এভাবে কোনো নাগরিককে নির্যাতন করে, হত্যা করে, জনগণের শত্রু রূপে আবির্ভূত হওয়ার সাহস পেতো না। তাদের মনে রাখা উচিত, বাংলাদেশ পাকিস্তান নয়। বাঙালির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কোনো বাহিনী টিকতে পারে নি। একাত্তরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীও পারে নি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যদি জনগণের মুখোমুখি দাঁড়াতে চায়, স্বাগতম। জনগণ প্রয়োজনে আরেকটা যুদ্ধ নিজ দেশের বিশ্বাসঘাতক সেনাসদস্যদের বিরুদ্ধে করবে। জনগণের প্রয়োজনে রাষ্ট্র, জনগণের প্রয়োজনে সেনাবাহিনী। উল্টোটা নয়। সেনাবাহিনী যদি মনে করে, জনগণ তাদের বন্ধুককে ভয় পায়, তাহলে ভুল করছে। দীর্ঘকাল তারা ভোট চুরি, গুমখুন, ও লুটপাটের সহযোগী ছিলো। জনগণ তা ভুলে যায় নি। তারপরও দেশের ক্রান্তিকালে সেনাবাহিনীর উপর মানুষ আস্থা রেখেছিলো। কিন্তু এ আস্থার প্রতিদান এভাবে আসবে, তা কেউ কল্পনা করে নি।
 
আমরা ভিডিওতে দেখেছি, সেনাবাহিনী নানা জায়গায় মানুষকে নির্বিচারে লাঠিপেটা করছে, কান ধরাচ্ছে, গান গাওয়াচ্ছে, নিতম্ব লাল করছে, এবং হুজুগে বেকুব জনগোষ্ঠী তা উপভোগ করেছে। নির্যাতনকে, হোক তা শত্রুর বিরুদ্ধে, কখনো উপভোগ করতে নেই। সেনাবাহিনীর এগুলো করার কোনো এখতিয়ার নেই। এগুলো সুস্পষ্ট ফৌজদারি অপরাধ। আমেরিকা বা ইউরোপ হলে, জড়িত প্রত্যেকটি সেনাসদস্যের চাকরি যেতো, এবং জীবন কাটতো কারাগারে।
এখন আমরা কী করতে পারি? ইউনূস সরকার কী করতে পারে?
 
যদি জনগণের কাছে সামান্য জবাবদিহিতার প্রয়োজনও আছে বলে মনে করে, তাহলে মুহাম্মদ ইউনূস আজই, অবিলম্বে—
(১) স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বরখাস্ত করবেন;
(২) জড়িত সেনাসদস্যদের বরখাস্ত করবেন, তাদের নামে হত্যা মামলা রুজু করবেন, এবং গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করবেন;
(৩) জড়িত সেনা ইউনিটের কমাণ্ডিং অফিসার, ও সংশ্লিষ্ট অন্য সকল সুপেরিয়র অফিসারকে বরখাস্ত করবেন, তাদেরকে মামলার আসামী করবেন, এবং গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করবেন;
(৪) সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা রহিত করবেন;
(৫) সিভিল ম্যাটার ও সিভিল আইনশৃঙ্খলায় সেনাবাহিনীর সংযুক্তি নিষিদ্ধ করবেন;
(৬) র্যাব বিলুপ্ত করবেন, কারণ র্যাব মূলত সেনাবাহিনীর পরামর্শে তৈরি পুলিশের প্যারালাল বাহিনী। ইতোমধ্যে এ বাহিনী গুম-খুনে কুখ্যাতি অর্জন করেছে, খেয়ছে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, নষ্ট করেছে বাংলাদেশের সুনাম।
(৭) ডিজিএফআই বিলুপ্ত করবেন, কারণ প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের রাজনীতিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর হুমকি।
(৮) সেনাবাহিনীকে সংস্কারের আওতায় আনবেন, যেন প্রতিষ্ঠানটি সবসময় সরকার ও জনগণের প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য বজায় রেখে কেবলমাত্র বহিঃশত্রু মোকাবেলা ও ন্যাশনাল ইমার্জেন্সিতে, সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে। কোনোপ্রকার সিভিল ম্যাটারে, যেমন ব্যবসা-বাণিজ্য, ঠিকাদারি, এসবে সেনাবাহিনীকে জড়ানো যাবে না।
 
বিএনপি কী করতে পারে?
বিএনপিকে তার এই কর্মীর পাশে সর্বোচ্চ রাজনীতিক শক্তি নিয়ে পাশে দাঁড়াতে হবে। সরকারের উপর প্রয়োগ করতে হবে সর্বোচ্চ চাপ, যেন জড়িতদেরকে দৃশ্যমান বিচারের মুখোমুখি করা হয়।
ছাত্র-সমন্বয়করা কী করতে পারে?
 
তারা যদি সত্যিই জনগণের প্রতি দায় অনুভব করে, তাহলে জনগণের পক্ষে এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে নিজেদের কন্ঠ অকৃত্রিমভাবে উঁচু করতে হবে।
নাগরিকদেরকেও এ হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সৎ ইচ্ছা নিয়ে সোচ্চার হতে হবে। নগর পুড়লে মসজিদ বাদ যায় না। আজ তৌহিদুলকে মারা হয়েছে, কাল মারা হবে আপনার বাবাকে, ভাইকে, বোনকে। এমনকি আপনাকে। বাঙালি কি বারবার অভ্যুত্থান করবে? বারবার রক্ত দেবে?
—মহিউদ্দিন মোহাম্মদ