ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ঢাকার বড় সাতটি কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি না করার ঘোষণায় নতুন জটিলতা তৈরি হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে এসব কলেজে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছে। যদিও এখন এসব কলেজের ভর্তি পরীক্ষা কাদের অধীন হবে, সেটি স্পষ্ট করা হয়নি। এর ফলে ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।এই সাত কলেজের জন্য নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। যদিও সেটি সময়সাপেক্ষ বিষয়। এ-সংক্রান্ত কমিটি এখনো সুপারিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মডেল’ ঠিক করতে পারেনি। সুপারিশ দিতে এক মাসের মতো সময় লাগতে পারে বলে জানা গেছে। এই পরিস্থিতিতে এসব কলেজ এখন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন চলবে, তা ঠিক হয়নি। অন্তর্বর্তী কোনো ব্যবস্থাও ঘোষণা করা হয়নি।
সাত কলেজে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে (স্নাতক) চলতি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির আবেদন ৬ জানুয়ারি শুরু হয়েছে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তা চলার কথা ছিল। ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল আগামী এপ্রিলে।সাত কলেজসংক্রান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, এখনো আবেদন গ্রহণ চলছে। আজ বুধবার এ নিয়ে একটি সভা হওয়ার কথা রয়েছে। সভায় যে সিদ্ধান্ত হবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই সভায় যদি সিদ্ধান্ত হয় আবেদনসংক্রান্ত তথ্যাদি ও আবেদন ফি কলেজগুলোর অধ্যক্ষ বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কারও কাছে দিতে হবে, তাহলে তা দিয়ে দেওয়া হবে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি কলেজগুলোকে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফায় রাজধানীর সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। কলেজগুলো হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ।সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রায় ৮ বছর আগে ২০১৭ সালে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়াই তাড়াহুড়া করে এই সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও পরীক্ষা, মানসম্মত শিক্ষাসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধান পুরোপুরি হয়নি। ফলে বারবার আন্দোলনে নেমেছেন এই সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সূত্রগুলো বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই গত সোমবার কলেজগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন না রাখার ঘোষণা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পরবর্তী করণীয় কী হবে, তা নিয়ে গতকাল পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বৈঠক করেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি।শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ গতকাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে ঘোষণা দিয়েছে, এটা তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে ঘোষণা দেয়নি। এ বছর থেকেই আর ভর্তি করা হবে না, এটির জন্য তিনি প্রস্তুতও ছিলেন না।
সাত কলেজের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, আগের মতো তড়িঘড়ি একটি সিদ্ধান্ত দিলে ভবিষ্যতে অন্য রকমের ভোগান্তি হতে পারে, সেটি তাঁরা চান না। তাই নিয়মমাফিক পদক্ষেপ নিতে চান। যতই জটিল পরিস্থিতি হোক না কেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত হবে সুবিবেচনাপ্রসূত এবং আইনসংগত সিদ্ধান্ত নেওয়া।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রগুলো বলেছে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, সে কারণে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। অবশ্য ১৯৭৩ সালের আদেশ অনুযায়ী পরিচালিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার তাদের রয়েছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান গতকাল প্রথম আলোকে বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে গতকাল পর্যন্ত কথা বলেনি। আবার এখানে ইউজিসির ভূমিকা রাখার সুযোগও কম। কারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলে ১৯৭৩ সালের আদেশ অনুযায়ী।অবশ্য এই সাত কলেজের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় করার পরিকল্পনা নিয়ে ধারাবাহিক বৈঠকের অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাহালুল হক চৌধুরীসহ পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছে এ বিষয়ে ইউজিসির নেতৃত্বে গঠিত কমিটি। এই বৈঠকে সাত কলেজের পরীক্ষাসংক্রান্ত সমস্যা ও ভবিষ্যৎ সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।আন্দোলনকারী সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ১৫ দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রকাশ ও এক মাসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করার দাবি জানিয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা কলেজের শহীদ মিনারের সামনে মোট পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা।
পরিস্থিতি জানতে চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের কাছে সাত কলেজের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান এস এম এ ফায়েজ গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তাঁদের ডেকেছিলেন। একটি ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।