জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে জাতীয় ও রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রতি বছর ৫ আগস্টকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে। এ দিনটিকে নতুন করে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হবে। এরই মধ্যে বিষয়টির অনুমোদন দিয়েছে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি।চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য শিগগিরই উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হতে পারে। সম্মতি পাওয়া সাপেক্ষে এবারই প্রথমবারের মতো সারা দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপন করা হবে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
দেশে আরো একটি গণ-অভ্যুত্থান দিবস জাতীয়ভাবে পালন হয়ে আসছে। প্রতিবছর ২৪ জানুয়ারি পালন করা হয়ে থাকে বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মাইলফলক উনসত্তরের ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থান দিবস। এ দিনটি গণ-অভ্যুত্থান দিবস হিসেবে আমাদের মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধিকার আন্দোলনের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে।
‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ সম্পর্কে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম (বীরপ্রতীক) কালের কণ্ঠকে বলেন, “আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’সহ ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ গঠনের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এটি চূড়ান্ত হলে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে দেশবাসীকে জানাব ইনশাআল্লাহ।”
জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ গঠনের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘অ্যালোকেশন অব বিজনেস’ সংশোধনের প্রস্তাব তৈরি করা হয়, যা গত ৬ জানুয়ারি প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে পাঠানো হয়। সচিব কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে বিষয়টির অনুমোদন দেওয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছে। প্রস্তাবে বলা হয়, সব বৈষম্য নিরসনের জন্য ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। ছাত্র-জনতার এই ত্যাগকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সব পর্যায়ে বৈষম্য দূর করতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের পাশে দাঁড়াতে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণ, গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার এবং আহত ছাত্র-জনতার পুনর্বাসনসহ গণ-অভ্যুত্থানের আদর্শ ও চেতনাকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য এই অধিদপ্তর কাজ করবে। পাশাপাশি এটি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার এবং আহত ছাত্র-জনতার তালিকা সংরক্ষণ, ডেটাবেইস রক্ষণাবেক্ষণ ও তাদের কল্যাণে কাজ করবে। তাদের নামে গেজেট প্রকাশ করবে এবং গণকবর সংরক্ষণ করবে। এ ছাড়া গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য গবেষণা, নীতিমালা প্রণয়নসহ এসংক্রান্ত কাজ করবে এবং ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ উদযাপন করবে। বিস্তারিত আলোচনার পর বিষয়টির অনুমোদন দেয় সচিব কমিটি।
এই বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, “মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘অ্যালোকেশন অব বিজনেস’-এ অধিদপ্তর গঠনের অনুমতি ছিল না। সেটি সংশোধন করে অধিদপ্তর গঠনের বিষয়ে সায় দিয়েছে সচিব কমিটি। সেখানে ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ উদযাপনের বিষয়টি রয়েছে। সব ঠিক থাকলে আগামী ৫ আগস্ট সারা দেশে প্রথমবারের মতো জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস উদযাপন করবে দেশবাসী।’
এর আগে গত ১৬ অক্টোবর জুলাই-আগস্টে ছাত্র ও জনতার অভ্যুত্থান নিয়ে নতুন জাতীয় দিবস যুক্ত হতে পারে বলে আভাস দিয়েছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। ওই দিন সচিবালয়ে বিগত সরকারের আমলে স্বীকৃতি দেওয়া ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসসহ আটটি জাতীয় দিবস বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, ‘জাতীয় দিবস বলতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ তাদের নিজেদের বিভিন্ন দিবস চাপিয়ে দিয়েছে। তাই সেগুলো থাকছে না। ৭ মার্চ গুরুত্বপূর্ণ, তবে জাতীয় দিবস হওয়ার মতো নয়। আওয়ামী লীগ অনেক দিবসকে নষ্ট করে ফেলেছে। জাতীয় দিবসের তালিকায় নতুন দিবস যুক্ত হবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সংক্রান্ত দিবস আসবে। এ নিয়ে আলোচনা চলছে।’
প্রসঙ্গত, জাতীয়ভাবে পালন করা হচ্ছিল এমন আটটি দিবস বাতিলের তালিকায় আরো রয়েছে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম দিবস ও জাতীয় শিশু দিবস, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ভাই শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট শেখ হাসিনার মা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, ১৮ অক্টোবর শেখ হাসিনার ছোট ভাই শেখ রাসেল দিবস, ৪ নভেম্বর জাতীয় সংবিধান দিবস এবং ১২ ডিসেম্বর স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস।