বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, 'আপা (শেখ হাসিনা) কিন্তু চুয়াডাঙ্গার পাশেই আছে। আপনাদের প্রতিরোধ করেই কিন্তু ওনাকে ঢাকায় যেতে হবে। টুক করে আপা কিন্তু ঢুকে পড়বে, খেয়াল রাখিয়েন। আওয়ামী লীগের আমলে তিনটা নির্বাচনে যে ভোট দিয়েছে সে ৩০/৪০টা করে দিয়েছে। আবার যে দিতে পারিনি, সে একটাও পারিনি। গত ১৬ বছর আপনাদের নির্যাচতনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। গণহত্যার কারণে ইতিহাসে খুনি শেখ হাসিনার নাম লেখা থাকবে।' সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টায় চুয়াডাঙ্গা শিল্পকলা একাডেমির মুক্তমঞ্চ প্রাঙ্গণে চুয়াডাঙ্গা নাগরিক কমিটির আয়োজনে চুয়াডাঙ্গা রাইজিং অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, 'কাদের কাদের আওয়ামী লীগের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল আমাদের জানা আছে। কেউ কেউ আওয়ামী লীগের পুর্নবাসন করার জন্য দালালি করছে। তারা আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থাকবে কিনা, সেই চিন্তায় আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের শাস্তির বিষয়ে কিছু বলছে না। আমাদেরকে হাসিনা-আওয়ামী লীগ কিনতে পারে নাই। পার্লামেন্টে সিট দিয়ে আমাদের কিনতে পারবেন না। আমাদের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যে রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরি হয়েছে, তা ধরে রাখতে হবে। দয়া করে ক্ষমতামুখি হয়েন না। যারা ক্ষমতামুখি হয়েছেন, তাদেরকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, 'চুয়াডাঙ্গাতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। উন্নয়নের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিকল্প নেই। চুয়াডাঙ্গাতে কোনো উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়নি। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে অন্তবর্তীকালীন সরকার বা যে সরকারই আসুক, শিক্ষার উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে।'
হামনাত আব্দুল্লাহ পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, 'প্রশাসনের মধ্যে মাফিয়া তন্ত্র ছিল। বিচার ব্যবস্থা গণভবন থেকে পরিচালিত হতো। আমরা প্রশাসনে সংস্কার চাই। আমরা দেখেছি ওসি, ইউএনও, ডিসি, এসপি, ডিআইজি ভোটের আগে রাতে বিক্রি হতেন। সব হারুন না। সব বেনজির না। আমরা আপনাদের ধারণ করতে চাই। হাসিনার পথকে আপনাদের অনুসরণ করার প্রয়োজন নেই। দালালি করলে হারুন-বেনজিরের মতো পালাতে হবে। পুলিশ আমাদের ভাই ভাই। আপনাদের জনমুখি হতে হবে।'
তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসবে কি আসবে না, এই আলোচনা অনেক পরে। আগে খুনি হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামানের বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগের কমিটির লিস্ট ধরে ধরে বিচার করতে হবে। তারপর আলোচনা হবে, আওয়ামী লীগ নির্বাচন করবে কি করবে না। আগে বিচার নিশ্চিতের জন্য রাজনৈতিক দল থেকে দাবি তুলুন। আওয়ামী লীগ আমাদের দেশের টাকা লুট করে লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আপনার আমার রাজনৈতিক বিভাজন প্রয়োজন নেই। পরবর্তী বাংলাদেশ আমরা নির্মাণ করবো। আমাদের বিভক্তিতে ফ্যাসিস্টদের লাভ। আওয়ামী লীগের পুর্নবাসন ঠেকাতে আমাদের এক হয়ে থাকতে হবে।'
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিটিন আহ্বায়ক আসলাম অর্কের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব সাফফাতুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসিবে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম, জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক সেল সদস্য মোল্লা ফারুক এহসান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক বাবু খান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মেহেরপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ, কুষ্টিয়া জেলা সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য এসএম আসরাফ সুইট প্রমুখ।
ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অভ্যুত্থানের শক্তি নাগরিক, আহত ও শহীদ পরিবারের সাথে তরুণ নাগরিকদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটি চুয়াডাঙ্গা রাইজিং শিরোনামে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।