বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু শুধু দেশের রাজনীতিতেই নয়, ব্যক্তিগত জীবনে রেখেছে গভীর শূন্যতা। সেই শূন্যতার সবচেয়ে নীরব সাক্ষী তার দীর্ঘদিনের পরিচারিকা ও বিশ্বস্ত সঙ্গী ফাতেমা বেগম।
বছরের পর বছর নেত্রীর ছায়ার মতো পাশে থাকা ফাতেমা এখন ‘একেবারে একা’ হয়ে গেছেন। শোক আর নিঃসঙ্গতার ভার বয়ে চলছেন তিনি।
বুধবার যখন খালেদা জিয়াকে দাফন করার জন্য উন্মুক্ত কফিন নিয়ে যাওয়া হয় তখন সেই কফিনের সঙ্গে ফাতেমাও হেঁটে যান কবর পর্যন্ত।
নেত্রীর মরদেহের পাশে নীরবে দাঁড়িয়ে অঝোরে কেঁদেছেন, চোখ মুছে মুছেই শেষ বিদায়ের সকল প্রস্তুতিতে সহায়তা করেছেন।
ফাতেমা বেগম বহু বছর আগে গৃহপরিচারিকা হিসেবে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কাজ শুরু করলেও, সময়ের পরিক্রমায় তিনি হয়ে উঠেছেন নেত্রীর নির্ভরতার প্রতীক। বাসা, হাসপাতাল, এমনকি কারাবাসের সময়ও নেত্রীর পাশে ছিলেন তিনি। খালেদা জিয়ার অসুস্থতার দীর্ঘ সময়ে তার দৈনন্দিন দেখভাল, ওষুধ খাওয়ানো, চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং মানসিক সঙ্গ দেওয়ার দায়িত্বও পালন করেছেন ফাতেমা।
২০১৮ সালে খালেদা জিয়া কারাবন্দি হলে আদালতের অনুমতিতে ফাতেমা বেগম তাকে কারাগারেও সহায়তা করেন।
সেই সময় গণমাধ্যমে ‘খালেদা জিয়ার ছায়াসঙ্গী’ হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। রাজনৈতিক পরিচয় না থাকলেও নেত্রীর প্রতি তার দায়বদ্ধতা ও আনুগত্য ছিল প্রশ্নাতীত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চেয়ারপারসন কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, খালেদা জিয়ার মৃত্যুর প্রথম কয়েক ঘণ্টা ও শেষ দিনগুলোতে ফাতেমা বেগম ছিলেন সবচেয়ে বেশি ভেঙে পড়া মানুষগুলোর একজন।
ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন খালেদা জিয়াকে ঘিরেই যার জীবন আবর্তিত ছিল, সেই ফাতেমা এখন হঠাৎ করেই এক শূন্যতায় পড়েছেন। তার দৈনন্দিন রুটিন, দায়িত্ব, এমনকি জীবনের উদ্দেশ্য-সবকিছুই নেত্রীর সঙ্গের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল।
বর্তমানে ফাতেমা বেগম শারীরিকভাবে স্থিতিশীল থাকলেও মানসিকভাবে গভীর শোকে আচ্ছন্ন।
ঘনিষ্ঠদের ভাষ্য, তিনি কথা কম বলছেন, অধিকাংশ সময় নীরবে কাঁদছেন। খালেদা জিয়ার ব্যবহৃত জিনিষপত্রগুলো নাড়ছেন, মরদেহবাহী গাড়িটি বার বার ছুয়ে দেখেছেন।
মনে হয়, নেত্রীর স্মৃতি ও দায়িত্ববোধ তাকে এখনো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। ক্ষমতা, রাজনীতি কিংবা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে না থেকেও একজন নীরব সেবিকা কীভাবে ইতিহাসের অংশ হয়ে ওঠে-ফাতেমা বেগম তার জীবন্ত উদাহরণ।
এর আগে মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা যান খালেদা জিয়া।