Image description
 

বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় প্রভাব খাটিয়ে নিজ এলাকায় সব সময় আলোচনায় থাকতেন। অভ্যুত্থানের পর আত্মগোপনে থাকলেও পরে প্রকাশ্যে আসেন। টাঙ্গাইলে খোলস পাল্টে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন আওয়ামী লীগের তিন নেতা।

তারা হচ্ছেন- টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে অ্যাডভোকেট ইলিয়াস হোসেন মনি, টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনে তারেক শামস খান হিমু ও ব্যারিস্টার আশরাফুল ইসলাম। তারা তিনজনেই গত সোমবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

তারেক শামস খান হিমু কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে থাকলেও পরবর্তী সময়ে গ্রেফতার হন। কারাগার থেকে বের হয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি দল পাল্টে জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

এর আগে তারেক শামস খান হিমু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তিনি।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, তারেক শামস খান হিমু নব্বইয়ের দশকে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য হন। নিজ এলাকা টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর- দেলদুয়ার) আসনে ২০০৮ সাল থেকে প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্য নেতাকর্মীদের মতো তারেক শামসও আত্মগোপনে চলে যান। তার বিরুদ্ধে নাগরপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মিছিলে হামলার অভিযোগে থানায় মামলা হয়।

হঠাৎ ফেসবুকে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সভাপতি আন্দালিব রহমানের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার ছবি দেখা যায়। পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। গত ১৪ জুলাই দেশে ফেরার পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পুলিশ তাকে আটক করে নাগরপুর থানায় হস্তান্তর করে। প্রায় এক মাস জেলহাজতে থাকার পর জামিনে মুক্ত হন। তবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর দল জেপির হয়ে।

তারেক শামস খান হিমু সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগ তার ওপর অনেক অবিচার করেছে। জেলা আওয়ামী লীগ আমাকে সহ-সভাপতি পদ থেকে অপসারণ করে সেখানে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুকে স্থলাভিষিক্ত করেছিল।

এদিকে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, তারেক শামসকে দলীয় পদ থেকে অপসারণ করা হয়নি। তিনি এখনো পদে রয়েছেন।

এ আসনে ব্যারিস্টার মুহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।

ব্যারিস্টার আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী কমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। নির্বাচন আমি আগেই করে ফেলেছি। এখন অনেকটা ফ্রি সময় কাটাচ্ছি। আমি মা-খালা, বোন-ভাবিদের কাছে গিয়েছি। তাদের সমস্যার কথা শুনেছি। তাদের সমস্যা সমাধান অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করব। আমি তাদের কাছ থেকেই স্বাক্ষর নিয়েই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি।

তিনি বলেন, আমার মনোনয়নের সঙ্গে চার হাজার ৯০১ জনের স্বাক্ষর নিয়ে জমা দিয়েছি। এক শতাংশ ভোটারের মধ্যে ৯০ ভাগই মহিলা। আমি ২০১৮ সালে মনোনয়ন চেয়েছিলাম পাইনি। ২০২৪ সালে মনোনয়ন চাইনি কিন্তু স্বতন্ত্র নির্বাচন করেছি। এবারও তাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। নারী-পুরুষের ভালোবাসার ভোটই আমাকে বিজয়ী করবে।

টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন। তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী পরিষদের নেতা ছিলেন। তিনি ১৩ নভেম্বর জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন।

টাঙ্গাইল অ্যাডভোকেট বার সমিতিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী পরিষদে একবার কার্যকরী সদস্য ও পরবর্তীতে যুগ্ম সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।

ইলিয়াস হোসেন মনি ধনবাড়ী উপজেলার নরিল্যা গ্রামের মরহুম তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে।

ইলিয়াস হোসেন মনি বলেন, আমি আওয়ামী লীগে সক্রিয় বা পদবিধারী নেতা ছিলাম না। তবে আইনজীবী পরিষদের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।