ময়মযমনসিংহের হালুয়াঘাটে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ শফিকুলের জানাজা শেষে মায়ের কবরের পাশে দাফন সম্পন্য হয়েছে।
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল ১০ টায় তার নিজ গ্রাম উপজেলার দর্শারপাড় এলাকায় তার জানাজা নামাজ শেষে মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
শফিক পরিবারসহ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গী পূর্ব এলাকায় বসবাস করছিলেন। তিনি ওই এলাকার গেজেটভুক্ত জুলাই যোদ্ধা। তিনি জেলার হালুয়াঘাটের দর্শাপাড়া এলাকার মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে। শফিকের স্ত্রী নাম বিউটি আক্তার ও বিল্লাল (১৪) নামে তার একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
জানাজায় উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও এলাকার সাধারণ মানুষ জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মায়ের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলীনূর খান জানাজা ও দাফন সম্পন্যের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দেশের জন্য তার এই ত্যাগ জাতি আজীবন স্বরণ রাখবে। শফিকুল জুলাই যোদ্ধা ছিল। সে যেহেতু মারা গেছে, শহীদ হিসাবে তাকে গেজেটভুক্ত করা হবে। এবং সরকারি যত সুযোগ সুবিধা আছে। ওই পরিিারকে দেয়া হবে।
এর আগে গত সোমবার সকালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শফিকুল চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
সুত্র জানায়, শফিকুল ইসলাম সরকারিভাবে গেজেটভুক্ত জুলাই যোদ্ধা ছিলেন। তার গেজেট নম্বর ৭২২। গত বছরের ৫ আগস্ট দুপুরে রাজধানীর উত্তরা আজমপুর এলাকায় গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়ার সময় ডান পায়ের উরুতে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (পিজি) থেকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর-পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠানো হয়। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে তিনি দীর্ঘদিন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সরকারিভাবে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করা হলেও শফিকুল ইসলাম দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
নিহত শফিকুলের ছোট বোন জামাই শফিকুল ইসলাম ভুইয়া বলেন, সরকার থেকে তাকে বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার জন্য বলা হয়েছিল। তবে, জুলাই যোদ্ধা শফিক বিদেশ যেতে অপারগতা প্রকাশ করেন। সম্প্রতি গুলির স্থানে ইনফেকশন হয়, যে কারণে জ্বর আসে। পরে সোমবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শফিক মারা যায়। চিকিৎসক জানিয়েছেন শফিক নিউমোনিয়ার কারণে শফিক মারা গেছে।
শহীদ শফিকুলের ছোট ভাই হাফেজ শাকিব বলেন, আমাদের বাবা মা নেই। আমি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করি। আমার ভাই শফিকুল হকার ছিলেন। টঙ্গি এলাকায় হকারি করে সংসার চালাতেন। ৫ আগস্ট ফ্যাসিষ্ট বিরোধী আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার দেড় বছর পর তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। আমরা খুবই নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। তার একটি ছেলে রয়েছে। সরকার যদি আমাদের সহায়তা না কর, তাহলে আসাদের পথে বসা ছাড়া উপায় নেই।
শহীদ শফিকুলের স্ত্রী বিউটি আক্তার বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আমার স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। গত সোমবার তিনি আল্লাহ'র ডাকে সাড়া দিয়েছেন। কিন্তু, আমার তো কেউ রইলো না। আমি আমার ছেলেকে কিভাবে মাসুষ করব, কিভাবে আমার সংসার চলবে। তা ভেবে আমি কুল পাচ্ছি না। সরকার যদি আমাদের সহায়তা না করে তাহলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যার কারণে আমি আজ স্বামী হারা, আমি তার ফাঁসি চাই। মৃত্যুর আগে আমার স্বামী বারবার বলছে, যার কারণে দেশের এত মানুষ মারা গেল, হাজার হাজার মানুষ পঙ্গু হলো, আমি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছি, আমি যেন তার ফাঁসি দেখে যেতে পারি। কিন্তু আমার স্বামী হাসিনার ফাঁসি দেখে যেতে পারল না। আল্লাহ'র কাছে বিচার দিলাম, আল্লাহ বিচার করবে।
ময়মনসিংহ-১ হালুয়াঘাট-ধোবাউড়ক) আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মুক্তা বলেন, শফিকুল ছিলেন জুলাই বিপ্লবের সম্মুখ সারির যোদ্ধা। তার অকাল মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। বাংলাদেশের জামাতে ইসলামের পক্ষ থেকে আমরা শহীদ পরিবারের পাশে সব সময় থাকবো। আল্লাহ তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন।