বাংলাদেশের রাজনীতির এক দীর্ঘ, দৃঢ় ও আলোচিত অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে চিরবিদায় নিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। লাখ লাখ মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তিনি আজ ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলেন।
তার মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর গোটা দেশ যেন থমকে যায়। হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে পড়ে নগরজীবন, গ্রাম-গঞ্জে নেমে আসে শোকের ছায়া। রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষ স্মরণ করে এমন এক নেত্রীকে, যিনি ক্ষমতার চূড়ায় থেকেও সাধারণ মানুষের আবেগে জায়গা করে নিয়েছিলেন।
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় সংসদ ভবনসংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে। বিশাল এই জানাজায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লাখ লাখ মানুষ অংশ নেন।
সারি সারি মানুষের অশ্রুসিক্ত চোখ, নীরবে দাঁড়িয়ে থাকা জনতা আর আকাশমুখী হাত, সব মিলিয়ে মানিক মিয়া রোড রূপ নেয় এক আবেগঘন ইতিহাসের নীরব সাক্ষীতে।জানাজা শেষে বেগম খালেদা জিয়াকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় তার স্বামী, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে। দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম ও জীবনের উত্থান-পতন পেরিয়ে অবশেষে ভালোবাসার মানুষটির পাশেই তার শেষ ঠিকানা।
বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন শহীদ জিয়ার সহধর্মিণী—তবে তিনি কেবল সেই পরিচয়ে সীমাবদ্ধ ছিলেন না। নিজ গুণেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন দেশের অন্যতম শক্তিশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
১৯৯১ সালে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে তিনি প্রমাণ করেছিলেন, প্রতিকূল সময়েও দৃঢ় নেতৃত্ব সম্ভব। তার রাজনৈতিক জীবন ছিল সংগ্রামমুখর, কারাবরণ, অসুস্থতা ও দীর্ঘ নিঃসঙ্গতার ভার নিয়েও তিনি কখনো আপস করেননি।
শেষ বিদায়ের ক্ষণে মুছে যায় রাজনৈতিক বিভাজন। কেউ তাকে স্মরণ করেন আপসহীন নেত্রী হিসেবে, কেউ বলেন গণতন্ত্রের সাহসী কণ্ঠ। মতভেদ থাকলেও বিদায়ের মুহূর্তে সবাই এক বাংলাদেশ হারাল এক শক্ত অধ্যায়।
খালেদা জিয়ার প্রস্থান কেবল একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যু নয়; এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক দীর্ঘ পথচলার ইতি। মানিক মিয়া রোডের জানাজা থেকে শহীদ জিয়ার কবরের পাশে শেষ শয্যা—সব মিলিয়ে এই বিদায়ে রচিত হলো একটি ইতিহাস।