Image description

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সাবেক স্বতন্ত্র প্রার্থী গত ১২ ডিসেম্বর আততায়ীদের গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিঙ্গাপুরে মৃত্যবরণ করেন।

ওসমান হাদি আহত হওয়ার পর হাসপাতাল ও প্রশাসনের ভূমিকা কেমন ছিল, সে বিষয়ে জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন জুলাই ঐক্যের অন্যতম সংগঠক ও দৈনিক জনকণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার ইসরাফিল ফারাজী।

রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) দেওয়া এ ফেসবুক পোস্টে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের ভূমিকা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। তার দাবি, হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া সত্ত্বেও প্রশাসন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের জন্য ইসরাফিল ফারাজীর ফেসবুক পোস্টটি তুলে ধরা হল:

হাদি ভাইকে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর প্রশাসন এবং হাসপাতালের ভূমিকা যেমন ছিল

দুই সপ্তাহ আগে শুক্রবার যখন হাদি ভাই গুলিবিদ্ধ আমি বাসায়, হঠাৎ জুলাইয়ের কবি বোরহান মাহমুদ ভাই কল দিয়ে বললেন, হাদি ভাইয়ের গুলি লেগেছে, ঢামেকে যাচ্ছে। ২ মিনিটের মধ্যে বাসা ছেড়ে হাসপাতালের দিকে ছুটি। এর মধ্যে গণমাধ্যম, রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংগঠনকে জানাই। সব মিলিয়ে আমার ২০ মিনিট সময় লেগেছে হাসপাতাল যেতে। হাসপাতালে প্রবেশের পর ইমার্জেন্সিতে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম সেখানে ডাক্তার ভাইকে কৃত্রিম শ্বাস দিচ্ছে, এর বাহিরে কোনো চিকিৎসা হচ্ছে না। তারও ১০ মিনিট পর ডাক্তারদের একটি টিম আসে, কাচি দিয়ে ভাইয়ের পাঞ্জাবি কাটা হয়। আমার কাছে মনে হয়েছে তারা কারও নির্দেশনার অপেক্ষায় ছিল। সে সময় প্রধান উপদেষ্টার চিকিৎসক টিমের সদস্য এসে তার পরিচয় দেন। আমিসহ কয়েকজন বের হয়ে আসি।

তখন সময় ৩-৩.৩০ টা প্রায়। হাদি ভাইয়ের সঙ্গে থাকা ইনকিলাব মঞ্চের ৩ জনকে নিয়ে আমরা শাহবাগ থানায় যাই। সেখানে থানার ওসি এবং রমনা জোনের ডিসি মাসুদ ভাইও ছিলেন। তিনি কিছু তথ্য নিলেন, তারপর জানালেন এটা তার এরিয়ায় না মতিঝিল জোনে পড়েছে। শাহবাগ থানার গাড়ি নিয়ে আমরা মতিঝিল জোনের ডিসির কাছে যাই। তখন তিনি কালভার্ট রোডেই ছিলেন টিম নিয়ে, যেখানে হাদি ভাই গুলিবিদ্ধ হোন।

এই সময়ের মধ্যে আমরা খুনির ছবি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং আমাদের বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিই। মতিঝিল জোনের ডিসি হারুন ভাইকে যখনই আমরা কিছু বলতে যাই, তিনি তখন উলটো রিঅ্যাক্ট করতে থাকে আমাদের সঙ্গে।

আমরা তখনই বারবার দাবি করে আসছিলাম বর্ডার এবং বিমানবন্দর সতর্ক করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু প্রশাসন এই সতর্কতা জারি করে পরের দিন। খুনির পরিচয়, যতগুলো ছবি ভিডিও প্রকাশ হয়েছে তার সিংহভাগ আমাদের চেষ্টার মাধ্যমে বের হয়। এখানে প্রশাসনের কোনো ভূমিকা ছিলো না। এই যাত্রায় দ্যা ডিসেন্ট আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে।

হাদি ভাই গুলিবিদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সীমান্ত অ্যালার্ট করার কথা প্রশাসন করেনি। তারা কার নির্দেশের অপেক্ষায় ছিল আমরা জানি না। হাদি ভাই গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরবর্তী ৩ দিন বিভিন্ন ব্যক্তির ডাটা দিয়েছিলাম প্রশাসনকে। খুনির বাবার নম্বর, বন্ধুদের নম্বর, তার পরিবারের সদস্যদের ডাটা, কোনোটারই সঠিক ব্যবহার করেননি তারা।

সিআইডির দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে বলা হয়েছিল, ১২ তারিখ রাত ৯.২০-৫০ মিনিট, বিমানবন্দর রেলস্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে, প্রয়োজনে আমরা সঙ্গে থাকব। তখন সিআইডি থেকে আমাদের কাছে উলটো ফুটেজ চায় তারা। আজ পর্যন্ত সেটার তথ্য আমরা পাইনি। আজ ১৮ দিন প্রশাসন এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য দিতে পারেনি। আজ সংবাদ সম্মেলন করে মুলা ঝুলিয়ে দিয়েছে ডিবি।

ইনকিলাব মঞ্চ এবং জুলাই ঐক্য শাহবাগসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন করছে। এই আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে উত্তরপাড়া। হাদি ভাইকে সাগর রুনি হত্যাকাণ্ডের মতো গায়েব করতে চায় প্রশাসন। গণমাধ্যমে একটি রাজনৈতিক দল এবং প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে আমাদের মুভমেন্ট যেন কভারেজ না দেওয়া হয়। এতে বোঝা যাচ্ছে এই সরকার কতটা আন্তরিক।