আসন্ন ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা নতুন বছরের শুরুর আগেই সরকারের বিনামূল্যের নতুন পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন পড়তে পারবে। আগামীকাল রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) থেকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) ওয়েবসাইটে (www.nctb.gov.bd) এসব নতুন পাঠ্যবই পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে সরকারের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপা ও বিতরণের দায়িত্বে থাকা সংস্থাটি। অন্যদিকে, নতুন বছরের প্রথমদিন পহেলা জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে তুলে দেওয়া হবে নতুন এসব পাঠ্যবই।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর ব্যাপক বদল এসেছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের এসব পাঠ্যবইয়ে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার পাঠ্যবই থেকে বাদ গেল বঙ্গবন্ধুর নাম, পরিবর্তে যুক্ত হল শেখ মুজিবুর রহমান। এর আগে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সব পাঠ্যবইয়ে শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু বলে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হতো। এখন থেকে সেটা আর থাকছে না।
জানা গেছে, আসন্ন ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিকের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সব পাঠ্যবইয়ে বঙ্গবন্ধুর পরিবর্তে যুক্ত করা হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের নাম। এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট সূত্র দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্রটি জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর পাঠ্যবইয়ে নানা সংশোধন এসেছে। মাধ্যমিকের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় পাঠ্যবইয়ে বঙ্গবন্ধুর পরিবর্তে শেখ মুজিবুর রহমান যুক্ত করতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে লিখিতভাবে চিঠি পেয়েছে সরকারের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপা ও বিতরণের দায়িত্বে থাকা সংস্থাটি। এরপর এনসিটিবি এই সংশোধনের উদ্যোগ নেয়।
২০২৬ শিক্ষাবর্ষের অষ্টম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় পাঠ্যবইয়ের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম নামে তৃতীয় অধ্যায়ের ‘পাঠ-২: ৭ই মার্চের ভাষণ’-এ দেখা গেছে, ৭ জায়গার মধ্যে ৬ জায়গায় বঙ্গবন্ধুর পরিবর্তে শেখ মুজিবুর রহমান যুক্ত করা হয়। তবে এক জায়গায় বঙ্গবন্ধুর নাম এখনও রয়ে গেছে।
এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে, পাঠ্যবইয়ে শিরোনাম কিংবা উপাধি হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের নাম বঙ্গবন্ধু দেওয়া হলে সেটি সংশোধন করা হয়নি। তবে নামের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু সংশোধন করে শেখ মুজিবুর রহমান যুক্ত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান অভিযুক্ত অন্যান্যের সঙ্গে আগরতলা মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়ে মুক্তি লাভ করেন। পরের দিন ২৩ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাঁর সম্মানে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক জনসভার আয়োজন করে সেখানে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি প্রদান করা হয় শেখ মুজিবুর রহমানকে। তখন সেটি ঘোষণা দিয়েছিলেন তৎকালীন ছাত্রনেতা ও বর্তমানে দীর্ঘদিন অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ।
জানা গেছে, গত দেড় যুগে আওয়ামী লীগের শাসনামলে শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতেন তৎকালীন নীতিনির্ধারকরা। এরই ধারাবাহিকতায় পাঠ্যবইয়ে বঙ্গবন্ধু হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের নামকে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হতো।